ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রদ্ধা-ভালবাসায় অজয় রায়ের চিরবিদায়

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

শ্রদ্ধা-ভালবাসায় অজয় রায়ের চিরবিদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিজিত তার আদর্শের জন্য প্রাণ দিয়েছে। এজন্য দুঃখ থাকলেও শোকে ভেঙ্গে পড়িনি। আদর্শের জন্য প্রাণ দেয়া কৃতিত্বের। সবাই পারে না। মৌলবাদীদের হামলায় নিহত ছেলের মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই নিজ আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার কথা বলেছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়। মঙ্গলবার ছিল মুক্তচিন্তার এই পথিকৃতের বিদায়যাত্রা। সেই বিদায়যাত্রায় আমৃত্যু স্বদেশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক ও সমাজ সংস্কারক অজয় রায়ের অন্তিম যাত্রায় জানানো হলো অশেষ শ্রদ্ধা। শুভাকাক্সক্ষীদের অর্পিত ভালবাসার ফুলে ঢেকে যায় তার কফিন। অনেকের চোখের কোল গড়িয়ে ঝরেছে অশ্রু। নতমস্তকে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদিত হয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনাস্রোত কীর্তিমান এই মানুষটির প্রতি। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, জীবনভর অসাম্প্রদায়িক ও উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন অজয় রায়। দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে অধ্যাপক অজয় রায়ের শবদেহ নিয়ে আসা হয় তার বেইলি রোডের বাসভবনে। সেখান থেকে সাড়ে এগারোটায় মরদেহ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতার শুরুতেই তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হয়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাবির কার্জন হলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। সেখানে বিভাগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ নেয়া হয় ঢাবির জগন্নাথ হলে। ওখান থেকেই বারডেম হাসপাতালে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। প্রয়াত অজয় রায়ের শেষ ইচ্ছানুযায়ী চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যবহৃত হবে তার দেহ। এভাবেই মৃত্যুর পরও মানবকল্যাণে নিজেকে সঁপে দিয়ে চিরবিদায় নিলেন দেশের আলোকিত মানুষ পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক অজয় রায়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অজয় রায়কে নাগরিক শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে এই কীর্তিমান মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা জানান সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় লাল-সবুজের পতাকায় মোড়া অজয় রায়ের কফিন। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অজয় রায়ের প্রতি নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠান। শ্রদ্ধা জানান ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ ও অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ সামাদ, চিত্রশিল্পী আবুল বারক্্ আলভী, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শামসুজ্জামান খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ঢাবি অধ্যাপক সাদেকা হালিম।
×