ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাথাপিছু আয় একই হলেও টাকার হিসাবে ৩৮০ টাকা বেড়েছে

রেকর্ড জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১৫

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

রেকর্ড জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১৫

ওয়াজেদ হীরা ॥ মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি দুটোই বেড়েছে। চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে ইতিহাসের রেকর্ড (জিডিপি) ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যা বিভিন্ন সংস্থার করা প্রক্ষেপণ ভুল প্রমাণ করে রেকর্ড প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের ঘরে আটকা থাকার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি ৭ শতাংশের ঘরে উন্নীত হয়। আর চলতি বছর তা ৭ এর ঘর ছাড়িয়ে ৮ শতাংশের ঘরে পৌঁছল। অর্থনীতিবিদরা প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখার নানা পরামর্শও দিয়েছেন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে (একনেক) প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের অধীন জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া এ তথ্য তুলে ধরেন তারা। পরে একনেক বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভাশেষে মন্ত্রী বলেন, মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাথাপিছু আয় একই হলেও টাকার হিসেবে ৩৮০ টাকা বেড়েছে। নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রী বলেন, গত মার্চে খসড়া হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। গত ১৯ মার্চ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে। ২০১৭-১৮ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০১৬-১৭ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর দ্রুত যাতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা যায় তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিবিএসের হালনাগাদ প্রতিবেদন তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরের জিডিপির আকার চলতি মূল্যে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে শিল্প খাতে চূড়ান্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে কৃষি খাতে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ ও সেবা খাতে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এদিকে, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন (২০১৮-২০১৯ অর্থবছর) এক হাজার ৯০৯ ডলার, যা টাকার সমপরিমাণে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৪০ টাকা। এই অর্থবছরের ৮ মাসে মাথাপিছু আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল এক হাজার ৯০৯ ডলার বা এক লাখ ৬০ হাজার ৬০ টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় মাথাপিছু আয় ৩৮০ টাকা বেড়েছে। মাথাপিছু আয় ডলারে সমপরিমাণ হলেও টাকার অঙ্কে বেড়েছে। গতবছরে এই অঙ্ক ছিল এক হাজার ৭৫১ ডলার। জিডিপি প্রবৃদ্ধির খবরটা ভাল উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সিনিয়র গবেষক ড. ফাহমিদা খাতুন জনকণ্ঠকে বলেন, এটি অবশ্যই একটি ভাল খবর। তবে প্রবৃদ্ধি সোর্স নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কোথা থেকে, কিভাবে এলো যেটি আমরা বার বারই বলছি। বেসরকারী বিনিয়োগ একটি জায়গায় আটকে আছে। বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি প্রশ্ন থেকে যায়, বলেন তিনি।
×