ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেবাচিমের আইসিইউ বন্ধের উপক্রম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

শেবাচিমের আইসিইউ বন্ধের উপক্রম

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ চিকিৎসা সেবায় দক্ষিণাঞ্চলবাসীর একমাত্র ভরসাস্থল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর মেশিন (কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়ার যন্ত্র) রয়েছে ১০টি। যারমধ্যে বর্তমানে নয়টিই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। অপরদিকে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউ। হাসপাতাল প্রশাসনের দাবি, ইতোমধ্যে নতুন ভেন্টিলেটর মেশিন কেনার চিন্তার পাশাপাশি আইসিইউ চালু রেখে রোগীদের সেবা নিশ্চিতের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের পূর্বদিকের নতুন দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই নিবির পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা হয়। ইউনিটটি চালুর সময় থেকেই রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি বড় আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, তিনটি ছোট আকারের ভেন্টিলেটর ও মনিটর সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বিগত দুই বছরে একে একে নয়টি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন এ ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে মাত্র একজন রোগীর। যে কারণে এখানে আসা মুমূর্ষু রোগীদের বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয় ঢাকায়। সেক্ষেত্রে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এদিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউ’র জন্য সময়ের তাগিদে এখন যেমন ইলেকট্রিক ভেন্টিলেশন মেশিন, উন্নতমানের মনিটর (যেখানে হার্টবিট, ব্লাড প্রেসার, ফুসফুসের-লিভারের কার্যকারিতা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ সম্ভব) প্রয়োজন; তেমনি এজিবি মেশিন, ইলেক্ট্রোলাইট পর্যবেক্ষণ মেশিন, পোর্টেবল এক্সরে, পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর মেশিনেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি আইসিইউ রুম অথবা এর পাশেই ডায়ালাইসিস ফ্যাসিলিটেট রেডিওলজি এ্যান্ড ইমেজিং মেশিন, সিটি স্ক্যান, ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন থাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অপরদিকে ওয়ার্ডটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবক-সেবিকা ছাড়া চিকিৎসক নিয়েও রয়েছে সঙ্কট। ওয়ার্ডটিতে কমপক্ষে ১০ চিকিৎসকের প্রয়োজন দেখা দিলেও রয়েছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। অধ্যাপক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিক্যাল অফিসার কোন পদেই নেই চিকিৎসক। ওয়ার্ডটির দায়িত্বরত সেবক-সেবিকারা বলেন, গত ২ অক্টোবর আইসিইউ’র নতুন নার্সিং ইনচার্জ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ওইদিন তিনি ১০টির মধ্যে দুইটি ভেন্টিলেটর মেশিন সচল অবস্থায় পান। তার দায়িত্ব নেয়ার এক মাস পর আরও একটি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হয়ে গেলে এখন সচল রয়েছে মাত্র একটি। গত দুই মাসে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন এমন ছয় থেকে সাতজন রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কারণ এই মুহূর্তে শেবাচিমের আইসিইউতে একজন রোগীর বাইরে একসঙ্গে বহুরোগীর সেবা দেয়া সম্ভব নয়। শুরু থেকেই বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এখনও কোন সুফল মেলেনি। ওয়ার্ডের দায়িত্বরত এ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক ডাঃ নাজমুল হুদা বলেন, আইসিইউতে চিকিৎসক সঙ্কট ও ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট থাকার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া এখানে আরও যা যা প্রয়োজন, সেই বিষয়েও সবাই অবগত রয়েছেন। তারাও দ্রুত এসব বিষয়ে সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আরও জানান, বর্তমানে শেবাচিম হাসপাতালে রোগী ভর্তি হতে আসলেই তাদের আইসিইউ’র বিষয়টি অবগত করে দেয়া হয়। যাতে প্রয়োজনে তারা সময় নষ্ট না করে অন্যত্র যেতে পারেন। এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বলেন, আপাতত রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন করে ভেন্টিলেটর মেশিন কেনার সিদ্ধান্তে কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এটি কেনার ক্ষেত্রে আমরা উন্নতমানের টেকসই মেশিন মূল্য সাশ্রয়ের মাধ্যমে কিনতে চাচ্ছি। আশাকরি দ্রুত মেশিনগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
×