ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি করে যেখানেই থাকুন, সুখে থাকতে দেয়া হবে না ॥ দুদক চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ১১:১১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

দুর্নীতি করে যেখানেই থাকুন, সুখে থাকতে দেয়া হবে না ॥ দুদক চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একজন দুর্নীতিবাজ বা দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ গড়ে তোলেন তা আসলে তার নয়। তাই দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন, দুর্নীতিবাজকে তা ভোগ করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এদিকে দেশ অনেক দিক দিয়ে এগিয়েছে, তবে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে আরও এগিয়ে যেত বলে মত দিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান। সোমবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা এসব মন্তব্য করেন। এর আগে সকাল সাড়ে নয়টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনের সড়কে শান্তির প্রতীক পায়রা ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন দুদক চেয়ারম্যান। ১৭তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী দুদকের উদ্যোগে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ এই প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন দেশে উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। এ সময় দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত, দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন শিবলী ও সৈয়দ ইশবাল হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কমিশনের চেয়াম্যান কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা এবং কমিশনের পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্বোধনের পর পরই কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে রক্ষিত রেজিস্টারে নিজ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর কর্মসূচী এবং পোস্টার ও কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান। রেজিস্টারটি ৯ ডিসেম্বর হতে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বসাধারণের স্বাক্ষরের জন্য দুুদক মিডিয়া সেন্টারে উন্মুক্ত রাখা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আসলে হুঁশিয়ারি নয়, তবে বার্তা আছে। দুর্নীতিবাজ কিংবা দুর্নীতিপরায়ণরা দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ গড়ে তোলেন তা আসলে তাদের সম্পদ নয়। এটা জনগণের সম্পদ। সেই জনগণের সম্পদ দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন, আপনি সুখে ভোগ করবেন? সেই সুখে থাকার ব্যবস্থা আমরা রাখব না। এই অবৈধ সম্পদ শান্তিতে ভোগ করতে পারবেন না, দুদক তাদের পিছনে নিত্য তাড়া করবে, করবেই। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, সেই অবৈধ সম্পদ ভোগ করতে দেব না, দেব না, দেব না। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আজ বিশ^ব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশি^ক সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এ জাতীয় সমস্যা একক দেশ বা একক প্রচেষ্টায় নির্মূল করা কঠিন। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকল শ্রেণী- পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সরকার, মিডিয়াসহ সকলের সমন্বিত ও পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। উদ্বোধনের পর দুদক চেয়ারম্যান কমিশনের প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, দুদকের প্যানেল আইনজীবী, ঢাকা মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য, গার্ল গাইডস, বয়েজ স্কাউট, সততা সংঘের সদস্য, আনসার, বিএনসিসি, বিভিন্ন এনজিও, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ নগরীর সর্বস্তরের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন করেন। অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য এই মানববন্ধনে দুর্নীতিবিরাধী প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ফেস্টুন শোভা পায়। শুধু ঢাকা নয় দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একই সময়ে দুর্নীতিবিরোধী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। দুদকের উদ্যোগে সকাল ১১টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি শিক্ষার্থী ও সততা সংঘের সদস্যদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, দেশ অনেক দিক দিয়ে এগিয়েছে, তবে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে আরও এগিয়ে যেত। দুর্নীতিমুক্ত করা গেলে দেশ শোষণমুক্ত সোনার বাংলা হবে। তিনি বলেন, দুদক চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। দেশের নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি প্রথম থেকেই দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব যেমন নকলমুক্ত, প্রক্সি না দেয়া, ভর্তিবাণিজ্যের মতো অনৈতিকতা থেকে মুক্ত থাকতে পারে, তাহলে তারা দুর্নীতি করবে না, অন্যকে দুর্নীতি করতেও দেবে না। ছাত্র-ছাত্রীরা এভাবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠলে বাংলাদেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত হবে। তিনি তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাও এবং নিজেরা শপথ কর। আজকের এই দুর্নীতিবিরোধী শপথ ভবিষ্যত জীবনে প্রতিভাত কর। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি। আমি জাতির পিতাসহ মহান শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলছি, দুর্নীতির কারণেই তাদের আশা-আকাক্সক্ষা আমরা পুরোপুরি পূরণ করতে পারিনি। ৪৮ বছর ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম চলছে। এটা লজ্জার। শুধু দুদকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান একা যুদ্ধ করে দুর্নীতি হয়তো কাক্সিক্ষত মাত্রায় বন্ধ করতে পারবে না, তবে আমাদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের এইসব শিক্ষার্থীরা, যারা ২০৩০ সালের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। মাত্র গুটি কয়েক মানুষের দুর্নীতির কাছে আমাদের পরাজয়ের কোন সুযোগ নেই। এই লড়াইয়ে বিজয়ের কোন বিকল্প নেই। ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সরকার, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, আইনজীবী, মিডিয়া সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দুর্নীতিবাজদের পরাভূত করা হবে। এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। জাতির পিতার স্বপ্নের শোষণহীন বৈষম্যহীন তথা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চলছে চলবে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত সরকারী পরিষেবা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। তোমরাই নেতৃত্ব দেবে শোষণহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের। আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×