ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাশা ন্যায়বিচার

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রত্যাশা ন্যায়বিচার

বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে আন্তরিকভাবে। সুপ্রীমকোর্ট আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ন্যায়বিচার’ শীর্ষক জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে তা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দ্বার্থহীনকণ্ঠে বলেছেন, তাঁর সরকার সর্বদাই রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগÑ নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের স্ব স্ব মর্যাদা ও স্বাধীনতা অক্ষুণœ রাখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যা একটা আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য অপরিহার্য। এই বিভাগগুলো নিজেদের আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে এবং কখনও একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে না। দেশে ন্যায়বিচার, শান্তি ও সার্বিক উন্নয়ন সাধনের জন্য বিভাগগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়ও অত্যাবশ্যক। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার কিছু বিতর্কিত কর্মকা-সহ দুর্নীতির কারণে বর্তমান সরকারের সঙ্গে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল বিচার বিভাগের, যাকে বলা যেতে পারে ছন্দপতন। আশার কথা এই যে, খুব শীঘ্রই বিচারবিভাগের সেই ভাবমূর্তি সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছায় পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন কোটি কোটি টাকা ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। যে কারণে তিনি দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ না করে পলাতক জীবনযাপন করছেন বিদেশে। তাই বলে সিনহার প্রেতাত্মারা যে আত্মগোপনে চলে গেছেন এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। সম্প্রতি একাধিক দুর্নীতির মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কারাদ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানিকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা আবারও আদালত কক্ষ ও চত্বরে তুমুল হৈ-হট্টগোল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আদালতের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে, যা প্রকারান্তরে আদালত অবমাননার শামিল। বস্তুত বিএনপি, জামায়াতের এই হীন অপচেষ্টা সর্বোচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার প্রয়াস বৈকি। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিতে হবে আদালতকেই। এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি হলি আর্টিজান, নুসরাত হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার রায় দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিচারকদের প্রশংসা করেছেন, যাকে স্বাগত জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিচারকদের প্রতি রায় ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলায় লেখার অনুরোধ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে। বিচারকদের কিছু দাবি-দাওয়ার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে পর্যায়ক্রমে সেসব সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। যথাসত্বর একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রীর কাছে। দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এটি নিঃসন্দেহে হবে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। নিম্ন আদালতসহ উচ্চ আদালতেও মামলার জটের বিষয়টি সুবিদিত। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তথা এজলাস সঙ্কট, জনবল সমস্যাসহ দক্ষ ও যোগ্য বিচারকের অভাবও অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে নিম্ন আদালতে মামলায় জট ও জনবল সঙ্কট প্রকট। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থাও অস্বীকার করা যায় না। এসব ক্ষেত্রেই রাতারাতি শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বরং অগ্রাধিকার ভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। বর্তমান সরকার বিচারকদের আবাসন সমস্যার সমাধানসহ বেতন-ভাতা-সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়িয়েছে। বিচারকদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে মামলা জটের দ্রুত নিষ্পত্তির। বিশেষ করে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতে পারে। শান্তি ও স্বস্তির পাশাপাশি অর্থের সাশ্রয় হয়। বিচার বিভাগ তদনুযায়ী যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা। বর্তমানে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। স্বাধীন বিচার বিভাগের অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। সাধারণ মানুষের এই আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে যেমন উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, অন্যদিকে সদা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল যুগোপযোগী আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়ে হতে হবে সচেতন। একইসঙ্গে বৈশ্বিক ধ্যান-ধারণাসম্পন্ন। দেশের বিচারকরা এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবেন, এই প্রত্যাশা সর্বস্তরের জনগণের।
×