ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি প্রতিরোধের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান টিআইবির

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

 দুর্নীতি প্রতিরোধের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান টিআইবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অভীষ্ট অর্জনে দুর্নীতি প্রতিরোধের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে রবিবার বেলা ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ এ জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে টিআইবি আয়োজিত মানববন্ধনে এ আহ্বান জানান বক্তারা। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন: দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ এই প্রতিপাদ্যে এ বছর দিবসটি উদযাপন করছে টিআইবি। একইসঙ্গে সংগঠনটির উদ্যোগে দেশের ৪৫টি অঞ্চলে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) আয়োজিত দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধনে এ দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়। ঢাকায় আয়োজিত মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ টিআইবি সদস্য ও কর্মীবৃন্দ, টিআইবির অনুপ্রেরণায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়েস গ্রুপের সদস্য ও সমমনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন সনাক সদস্যবৃন্দ, স্বচ্ছতার জন্য নাগরিক (স্বজন), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস), ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রুপের সদস্যবৃন্দসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকল স্তরের মানুষ যেন সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারে, তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে, অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অভীষ্টের কার্যকর বাস্তবায়নে অভীষ্ট ১৬ এর ওপর সর্বাধিক প্রাধান্য নিশ্চিতসহ চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বাস্তব সুফল নিশ্চিতে কোন প্রকার ভয় বা করুণার উর্ধে থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবে না অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। মানববন্ধনে এবারের দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপনের প্রেক্ষাপটকে ব্যতিক্রমী উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে চলমান অভিযান দেশবাসীর মনে আশার সঞ্চার করেছে। এ অভিযান দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি বলেন, তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ের গুরুদায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর একার নয়, এজন্য দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে কোন প্রকার ভয় বা করুণার উর্ধে থেকে সকল প্রকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতপূর্বক দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার তিনটি মূল বিষয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় না দেয়া ও সংশ্লিষ্ট অভিযান ক্ষমতাসীন দল থেকেই শুরু করা। এ ঘোষণা সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ, যা দুদকসহ সকল আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য কারও প্রতি ভয় বা করুণার উর্ধে থেকে দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে। দুদকের জন্য এটি একদিকে বিশেষ সুযোগ কোন প্রকার প্রভাবমুক্ত হয়ে দায়িত্ব প্রতিপালনের ও অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ কারণ এই সুযোগের যথাযথ প্রয়োগ করা না হলে দুদকের আস্থার সঙ্কট ঘনীভূত হবে। মানববন্ধনে টিআইবি উত্থাপিত অন্যান্য দাবির মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ফরেন ডোনেশনস (ভলান্টারি এ্যাক্টিভিটিস) রেগুলেশন এ্যাক্ট এর নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ এবং সরকারী চাকরি আইন ২০১৮ এর বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করা, ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও জালিয়াতি এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে এ খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের জন্য একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা; বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় সমন্বিত ও পরিপূরক কৌশল গ্রহণ, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চিত করা, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর কার্যকর প্রয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ, বিশেষ করে তথ্যের আবেদনকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১ বাস্তবায়নের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি ও এ আইন সম্পর্কে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বিভিন্ন কর্মসূচী নিতে হবে ও দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে শক্তিশালী করা।
×