ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে শীতকালীন শাক-সবজির দাম আকাশচুম্বি

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

মাদারীপুরে শীতকালীন শাক-সবজির দাম আকাশচুম্বি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুরে বাজারে প্রচুর শীতকালীন শাক-সবজি থাকার পরও শহর থেকে গ্রামীণ হাট-বাজারে পেঁয়াজ, নিত্যপণ্যসহ শাক-সবজির দাম আকাশচুম্বি। এতে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক, লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্তভোগী, বেপারী ও খুচরা দোকানীরা। কৃষক বলছে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। আর আড়তদাররা বলছে সরবরাহ কম, পরিবহন ব্যয় বেশি। এ জন্য সকল প্রকার সবজির দাম একটু চড়া। প্রতি বছর শীতকালে সবজির দাম স্বাভাবিক থাকলেও এবার তার উল্টো চিত্র। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে। জেলার বিভিন্ন গ্রামের হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা সাধারণের চোখে-মুখে চাপা হতাশার ছাপ। ক্রেতাদের অভিযোগ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে দুষ্টচক্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে প্রশাসনের নজরদারির অভাব। বিক্রেতারা তাই নানা অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টিতে চাষিদের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সরবরাহ নেই। ভিন্ন চিত্র হাট-বাজারে সবজির কোনো অভাব নেই। অথচ আড়তে সবজির দাম চড়া। আর ক্রেতাদের জিম্মি করে খুচরা বাজারে যে যার মতো দাম নিচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম কমছে না। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২২০-২৫০, তুরস্ক ও মিশরের ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজ ২২০ টাকা। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় এক মাস আগে থেকে কৃষকরা বেশি দামের আশায় দুধ পেঁয়াজ (অপরিপক্ক) তুলে বিক্রি শুরু করে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে আগামীতে পেঁয়াজের বাজার চলতি মৌসুমের চেয়ে আরো অস্থির হতে পারে বলে ক্রেতাদের ধারণা। ঝিঙা ও ক্ষীরার কেজি এখন ৮০ টাকা। করলা ও ফুলকপি ৭০ টাকা। অন্য সব সবজিও বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার উপরে। বাজারে সবজির দাম শুনে অবাক হচ্ছেন ক্রেতারা। মাস খানেক আগে ফুলকপির দাম ছিল ৫০-৬০। এখন ৮০-৯০ টাকা। বাঁধাকপি, শিম ও মূলার দাম একমাস ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। বাঁধাকপি ও মূলা ৫০ এবং শিম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে অন্য সবজিরও। শসা, ঢেঁড়স, বরবটি, করলা, ঝিঙা ও চিচিঙ্গা দু‘সপ্তাহ আগে কেজি প্রতি ছিল ৫০-৬০ টাকা। এখন শসা ও ঝিঙা ৮০, করলা ৮০, বরবটি, চিচিঙ্গা ও ঢেঁড়স ৭০ টাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “শুধু পেঁয়াজ-শাক সবজি নয়; প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি করছে একটি শক্তিশালী দুষ্টচক্রের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট। তারা বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। শেখ হাসিনা যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করলেন. ঠিক তখনই দুষ্টচক্র সক্রিয় হয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থির করে তুললো। তারা সব ধরণের পণ্যের দাম বাড়িয়ে সরকারের প্রতি জনগণকে উসকে দেওয়ার নীল নক্সা তৈরি করছে বলে আমার ধারণা।” নতুন বাজারের সবজি বিক্রেতা মকবুল হোসেন বলেন, ‘যে সব ক্রেতা আগে ১ কেজি সবজি কিনত, এখন অনেকে আধা কেজি বা আড়াই‘শ গ্রামের বেশি নিচ্ছে না। বেচাকেনা কম। আড়তেও সরবরাহ কম। পেঁয়াজের দাম কিছুতেই কমছে না। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২২০-২৫০, তুরস্ক ও মিশরের ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজ ২২০ টাকা। ঝাঁজ কিছুটা কমেছে আদার। সিন্ডিকেট না কি অন্য কোনো ষড়যন্ত্র ত্ওা জানি না।’ মাদারীপুর সদরের ইটেরপুল বাজার করতে আসা সাবেক স্কুলশিক্ষক আলহাজ¦ আবদুল বারী মুন্সি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সবজির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। সপ্তাহ খানেক আগে ঝিঙা কিনলাম কেজি ৬০ টাকা দরে। আজ ৮০ টাকা! এত দামে সবজি কিনবো কীভাবে?’ বেসরকারি চাকুরিজীবী আমানউল্লাহ বলেন, ‘মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর সবজি চাষ হয়। তারপরও এখানে সবজির দাম বেশি। অথচ কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দুই তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে।’ মাদারীপুর জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন বলেন, “বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য আমরা প্রায় প্রতিদিনই ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে জেলার কোন না কোন বাজারে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। মাঝে মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা এসেও বাজার মনিটারিং করছেন। মাদারীপুরে বড় ধরণের কোন ব্যবসায়ী সিন্ডেকেট নেই। বিভিন্ন সময় আমরা জেলার ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সচেতন করছি।”
×