ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কিছু আইনজীবী হইচই ও ভাংচুর করে বিচার বাধাগ্রস্ত করছেন ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

কিছু আইনজীবী হইচই ও ভাংচুর করে বিচার বাধাগ্রস্ত করছেন ॥ রাষ্ট্রপতি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিচার বিভাগের কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বেঞ্চের বিচারক ও বার আইনজীবীদের সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আদালতে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সম্পর্কে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আইন পেশা প্রকৃতপক্ষে খুবই সম্মানিত পেশা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, নিম্ন ও উচ্চ আদালতের কিছু সম্মানিত আইনজীবী বিচারকে কেন্দ্র করে হইচই ও সরকারী সম্পত্তি ভাংচুর করে বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছেন। এটা কোনভাবেই প্রত্যাশিত হতে পারে না।’ খবর বাসসর। রাষ্ট্রপতি শনিবার বঙ্গভবনে দরবার হলে সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রীম ও হাইকোর্ট এবং অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা আদালতের বিচারকগণের সঙ্গে এক নৈশভোজপূর্ব বৈঠকে এ সব কথা বলেন। তিনি আইনজীবীদের আইন পেশার ঐতিহ্য ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান। দেশ ও জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে পারস্পরিক ভারসাম্য রেখে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ পৃথকভাবে দায়িত্বপালন করলেও তারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। কেউ কারও প্রতিপক্ষ নন বরং পরস্পর সম্পূরক। তাই আপনাদের পারস্পরিক ভারসাম্য বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের তিন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের অন্যতম। গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগত জীবনে রাষ্ট্রপতি আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিচারপ্রার্থীদের জন্য কম খরচে সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি সর্বসম্মত ‘ওকালতনামা’ ফি নির্ধারণের নির্দেশ দেন, যাতে গরিব বিচারপ্রার্থীরা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় না করে এ সুযোগটি পেতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় রক্ষাকবচ হিসেবে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করবে। রাষ্ট্রপতি ’৭৫ পরবর্তী স্বৈরশাসকরা সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী পাশের মাধ্যমে তাদের অবৈধ কর্মকা-কে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছিল উল্লেখ করে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট ৫ম ও ৭ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে, দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে যে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে, তার প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যার বিচার, জেলহত্যা বিচার, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের ফলে জনমনে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা বেড়েছে।’ তিনি স্বার্থান্বেষী মহলের বন্দুকের সামনে মাথানত না করে বরং দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করায় সর্বোচ্চ আদালতে প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতি তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনার জন্য বিচার বিভাগকে নির্দেশ দেন। বক্তৃতার শুরুতে রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, তিনি ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান নেই এমন একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ৪ নবেম্বর দেশকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবী এবং উর্ধতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের সম্মানে বঙ্গভবনে এক নৈশভোজের আয়োজন করেন।
×