ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টেন্ডার জটিলতায় আটকে আছে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

টেন্ডার জটিলতায় আটকে আছে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেন্ডার জটিলতায় গত ছয় মাস ধরে আটকে আছে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান। বিআরটিএর এই জটিলতায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার লাইসেন্স প্রত্যাশী। হাতে লেখা লাইসেন্সের সুযোগে নকল লাইসেন্সধারীরা গাড়ি চালানোর সুযোগ পাওয়ায় রাস্তায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুণ। কি কারণে কিংবা কার স্বার্থ রক্ষায় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এমন দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হলো এই প্রশ্নের সঠিক জবাব নেই কারও কাছে। একাধিক ভুক্তভোগী জনকণ্ঠে এসে অভিযোগ করেন, তারা বিআরটিএতে আবেদন করে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্মার্ট লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষা করছেন। মোবাইল ফোনে এসএমএস এলেই তারা স্মার্ট লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করবেন। প্রত্যাশিত সেই এসএমএস আর আসছে না। বিআরটিএ থেকে ইস্যু করা একটি অনুমতিপত্রের মাধ্যমে তারা কাজ চালাচ্ছেন। এই অনুমতিপত্রের নকল-আসল যাচাই করার কোন সুযোগ ট্রাফিক বিভাগের নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুন মাস থেকেই নতুন স্মার্ট লাইসেন্স ইস্যু বন্ধ রয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সীমিত আকারে কিছু স্মার্ট লাইসেন্স ইস্যু করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা নগণ্য। গত ছয় মাসে প্রায় ৬০ হাজার আবদেনকারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন সংখ্যা। কবে নাগাদ নতুন স্মার্ট লাইসেন্স পাওয়া যাবে এর নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউ। ২০১৬ সাল থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিআরটিএ এই স্মার্ট লাইসেন্স ইস্যু করছে। আগের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন কোম্পানি নিয়োগের জন্য বিআরটিএ দরপত্র আহ্বান করে। এর পরই শুরু হয় জটিলতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন কোম্পানি নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান করা হয় চলতি বছর জুন মাসে এবং দরপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৯ জুলাই। পরে আরও দুই বার (২০ আগস্ট এবং ৪ সেপ্টেম্বর) এই তারিখ পেছানো হয়। যেহেতু এটি হাই টেকনিক্যাল একটি কাজ এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শর্ত দেয়া হয়, কেবলমাত্র ইউরোপ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের প্রতিষ্ঠানই এই দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। শেষ মুহূর্তে অদৃশ্য কারণে ২৫ আগস্ট ’১৯ তারিখে জারি করা সংশোধিত দরপত্রে এসব দেশের শর্ত বাতিল করা হয় এবং আরও একবার পিছিয়ে দরপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৯ সেপ্টেম্বর। এভাবে শুধুমাত্র দারপত্র আহ্বান করেই তিন মাস সময় ক্ষেপণ করা হয়। কি কারণে বার বার এই দরপত্র দাখিলের সময় পেছানো হয় এর সদোত্তর কারও কাছেই নেই। বিগত ১৯ সেপ্টেম্বর দরপত্রের অর্থনৈতিক প্রস্তাব খোলা হয় এবং টেকনিক্যাল প্রস্তাবের মূল্যায়ন শুরু হয়। এতে সর্বনিম্ন দরদাতা হতে পারেনি এমন একটি প্রতিষ্ঠান বিআরটিএর চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দিয়ে আপত্তি জানায়। বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়ন কমিটিকে পুনরায় যাচাই বাছাই করার নির্দেশ দেন। যাচাই বাছাই কমিটি আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টেন্ডার প্রক্রিয়া সঠিক হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রদান করে এবং চূড়ান্ত অনুমোদননের জন্য বিআরটিএ তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে বিক্ষুব্ধ প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ে আরেকটি আবেদন করে। এতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কিছু টেকনিক্যাল প্রস্তাব উল্লেখ করে তা দরপত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে দাবি করে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি যাচাই বাছাই করে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে আবারও তা মূল্যায়ন কমিটিতে পাঠিয়ে দেয়। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সর্বনিম্ন দরদাতা থেকে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠান কিভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল প্রস্তাব জানতে পারে এবং এসব প্রস্তাব উল্লেখ করে আবেদন করতে পারে। বিআরটিএ কিংবা মন্ত্রণালয় কিভাবে এমন আবেদন আমলে নিয়ে বার বার তদন্তের নামে সময় ক্ষেপণ করছে এনিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সময় ক্ষেপণের এই প্রক্রিয়ায় গত ছয় মাস ধরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আবেদনকারীদের হাতে লেখা স্লিটের মাধ্যমে ড্রাইভিংয়ের আনুমতি দেয়া হচ্ছে। এমন প্রায় ৬০ হাজার হাতে লেখা ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী এখন রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন।
×