ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেট আওয়ামী লীগ আরও সংগঠিত হবে, আসবে গতি

প্রকাশিত: ১২:০৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

 সিলেট আওয়ামী লীগ আরও সংগঠিত হবে,  আসবে গতি

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুুধুূ দেশ নয় দলেরও উন্নয়ন হচ্ছে। শেখ হাসিনা শক্ত হাতে দেশকে সামাল দিচ্ছেন, সেই সঙ্গে দলকেও সংগঠিত করছেন। এই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে সিলেটে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে। পকেট কমিটি থেকে সরে আসা, যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করা, নতুনদের স্থান দেয়ার মাধ্যমে দলকে গতিশীল করার এই চর্চা মাঠে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সিলেটে নতুন কমিটিতে পুরনোরা বাদ পড়ে যাওয়ায় এক ধরনের হাহাকার বিরাজ করছে। বাদ পড়ে যাওয়া নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমানের বাসায় গিয়ে কর্মীদের কান্নাকাটি করতেও দেখা গেছে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠন সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উদাহরণন তৈরি করেছে। বৃহস্পতিবার দিনভর এই কর্মপ্রক্রিয়া সিলেট বিভাগজুড়ে দলের নেতাকর্মীদের নাড়া দিয়েছে। পদ হারানো, পদ না পাওয়ার ব্যথা তো আছেই। সবশেষে এই প্রক্রিয়াকে দলের রাজনীতিতে ইতিবাচক বলেই ভাবছেন নেতাকর্মীরা। পাওয়া না পাওয়ার ব্যথা, আনন্দে নতুন কমিটি গঠনের পরবর্তী সময় রাজনীতির মাঠে ভিন্ন আমেজ তৈরি করেছে। চলছে নতুন ও সাবেকদের মধ্যে কুশল বিনিময়। দল আরও সংগঠিত হবে, কর্মকা-ে গতি আসবে, নতুন নেতৃবৃন্দের কাছে এটাই প্রত্যাশা করছেন নেতাকর্মীরা। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসায় গেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। শুক্রবার দুপুরে তিনি কামরান ও শফিকের বাসায় গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং ভবিষ্যতে রাজনীতিতে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। এ সময় কামরান এবং শফিক দুজনই তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে আশ্বাস দেন। জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির বললেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় আমি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। আমি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি গণতন্ত্রের মানসকন্যা বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যিনি আমার ওপর এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি। আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সম্মানিত কাউন্সিলর, ডেলিগেট, আমার সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি যাদের অকৃত্রিম সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য আমি আজকের পর্যায়ে এসেছি। আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে যাতে পালন করতে পারি সেজন্য সকলের দোয়া ও সমর্থন কামনা করছি। বিদায়ী জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন বললেন অভিনন্দন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত নেতবৃন্দকে। আমার বিশ্বাস, আপনাদের হাত ধরে সিলেটে আওয়ামী লীগের অবস্থান আরও শক্তিশালী ও গতিশীল হবে। ভবিষ্যতে আপনাদের সকল কর্মসূচীতে আমার সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে ইনশা আল্লাহ। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সিলেটে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সম্মেলন সফল করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। নতুন নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আপনাদের এমন সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা করি। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই, আমার রাজনৈতিক অভিভাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমার দীর্ঘদিনের, দুঃসময়ের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা অধ্যাপক জাকির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়ায় আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। মুকুট হারালেন কামরান সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র। নগরবাসীর কাছে ‘মেয়র সাব’ নামে পরিচিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের মুকুট হারালেন দীর্ঘ তিন দশক পর। ১৯৬৯-এর উত্তাল সময়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কামরানের। ’৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান তিনি। সেই থেকেই সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝখানে প্রবাসে থাকায় একবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। ফিরে এসে ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান কামরান। ২০০৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুইবার কারান্তরীণ হন কামরান। ২০০৮ সালে কারান্তরীণ অবস্থায় নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন কামরান। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব পান। দীর্ঘ তিন দশক সিলেটের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও দলের প্রয়োজনে পুরো সিলেট বিভাগ চষে বেড়িয়েছেন কামরান। প্রত্যেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের পক্ষে সরব ছিলেন তিনি। ভোট চেয়েছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে। দীর্ঘ সময় ধরে সিলেটে আওয়ামী লীগের সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেটের রাজনীতিতে শফিকুর রহমান চৌধুরীর উত্থান ছিল চমক জাগানিয়া। যুক্তরাজ্য থেকে এসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপির ডাকসাইটে প্রার্থী ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। আর ২০১১ সালে সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ‘খলিফা’ হিসেবে পরিচিত ইফতেখার হোসেন শামিমকে সরিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে সবাইকে চমকে দেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। শফিকুর রহমানের উত্থান যেমন চমকপ্রদ, শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তার বিদায়ও অনেকের কাছে বিস্ময়কর। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে শফিকুর রহমান থাকছেনই- বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনটিই ধরে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। শফিক পদোন্নতি পাচ্ছেন না স্বপদে বহাল থাকছেন, এটি নিয়েই ছিল আলোচনা। তবে নেতাকর্মীদের অবাক করে দিয়ে বৃহস্পতিবার ঘোষিত সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ঠাঁই হয়নি জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর। অবশ্য বুধবার রাতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে জেনে গিয়েছিলেন- নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বাদ পড়তে যাচ্ছেন কামরান-শফিক-আসাদ। প্রবাসের রাজনীতি থেকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উঠে আসা শফিকুর রহমান চৌধুরীর খ্যাতি রয়েছে কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে। যে কোন নেতাকর্মী ডাকলেই তাকে কাছে পায় এমন খ্যাতিও রয়েছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এই সময়ে শফিকুর চৌধুরী এসব থেকে দূরে ছিলেন বলেও দাবি তার অনুসারীদের। শফিকুর রহমান চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাখা হচ্ছে এমনটিই নিশ্চিত ছিলেন তারা। ফলে বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ঘোষিত নামে শফিকুর রহমান চৌধুরীর না থাকা বিস্ময় হয়ে এসেছে তাদের জন্য। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে আফসোসও প্রকাশ করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে। তবে কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি আওয়ামী লীগের কোন নেতাই। স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, শফিকুর রহমান নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে রাজনীতি করেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রায় একক প্রচেষ্টায় দলকে সংগঠিত করার কাজ করেছেন। সবাই ডাকলেই তাকে কাছে পায়। তার বাসাও সকলের জন্য সব সময় উন্মুক্ত থাকে। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোন সুবিধা নেননি। জানা যায়, ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ছাত্রজীবনে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং ছাত্রলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ’৮০’র দশকে যুক্তরাজ্য যাবার পর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকও হন।
×