ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে সাড়ম্বরে গারোদের ‘ওয়ানগালা’ উৎসব পালিত

প্রকাশিত: ১২:০৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

 রাজধানীতে সাড়ম্বরে গারোদের  ‘ওয়ানগালা’  উৎসব পালিত

নিখিল মানখিন ॥ সাত বছরের গারো আদিবাসী মেয়ে কৃষ্টি বনোয়ারী। তার সারা শরীরে গারো সংস্কৃতির ছাপ। ছোট আকারের নকমান্দা ও টি-শার্ট পরে সে রাজধানীর লালমাটিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একই পোশাক পরেছে তার বড় বোন মাটি বনোয়ারী। মঞ্চে চলছে গারো নাচ ও গান। মনের অজান্তেই নিজেদের সংস্কৃতির অতি পরিচিত গানের তালে তালে নাচতে থাকে এই দু’বোন। বছরে একদিন এমন পোশাক পরার এবং সকলের সঙ্গে নিজেদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ পায় তারা। শুধু এই ছোট দু’বোন নয়, শুক্রবার রাজধানীতে বসবাসরত সব বয়সের কয়েক হাজার গারো আদিবাসী করে তাদের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব ‘ওয়ানগালা’। এদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া স্কুল ও হাইস্কুল মাঠে দিনব্যাপী পূজা-অর্চনা, আলোচনা, নাচ-গানে এই উৎসবটি পালন করেছে রাজধানীতে বসবাসরত গারো সম্প্রদায়। ওয়ানগালার নকমা (গ্রাম্য প্রধান) আলেক্সসিউস চিচাম জনকণ্ঠকে জানান, ‘ওয়ানগালা’ ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব। আদিবাসী গারোদের বিশ্বাস, শস্য দেবতা বা ‘মিশি সালজং’ পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন এবং তিনি সারা বছর পরিমাণ মতো আলো-বাতাস, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে ভাল শস্য ফলাতে সহায়তা করেন। তাই নবান্নে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় ‘মিশি সালজং’কে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করে গারোরা। ফসল দেবতাকে উৎসর্গ না করে তারা কোন খাদ্য ভোগ করে না। ‘ওয়ানগালা’ আদিবাসী মান্দি বা গারোদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দেড় এক যুগ ধরে প্রতিবছর নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় বসবাসরত গারোরা এ উৎসব আয়োজন করছে। যুগ যুগ ধরে গারোরা তাদের শস্য দেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে আসছে। খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর গারোদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে করে পালন করা হয়।
×