ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেলাঙ্গনে জনস্রোত

চট্টগ্রামে জমে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা

প্রকাশিত: ১২:০৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

চট্টগ্রামে জমে উঠেছে  মুক্তিযুদ্ধের  বিজয়মেলা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীর আউটার স্টেডিয়ামে জমেছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই মেলা অভিমুখে জনস্রোত। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থী ছিল উপচেপড়া। সেখানে বসেছে পরিচ্ছদ, গৃহস্থালি থেকে শুরু করে রকমারি পণ্যের পসরা। শিশু কিশোর থেকে সকল বয়সী মানুষ ভিড় করছে মেলাঙ্গনে। বিশেষ করে নারীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, বীর বাঙালীর অহঙ্কার’ স্লোগানে ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া এই মেলা ছড়িয়েছে সারাদেশে। তবে চট্টগ্রামের বিজয়মেলার রূপটাই আলাদা। চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামে এখন অনেকরাত পর্যন্ত মানুষের কোলাহল। মেলা এদেশের সংস্কৃতিরই অংশ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার আমেজ বরাবরই আলাদা। কারণ এরসঙ্গে রয়েছে স্বাধীনতার চেতনা ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গীকার। চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম বিশেষায়িত হয়ে আছে বিজয়মেলার জন্য। নগরবাসী সারাবছরই প্রতীক্ষায় থাকে এ সময়টির জন্য। আউটার স্টেডিয়ামের সুপরিসর জায়গায় বসেছে অসংখ্য স্টল। পোশাক পরিচ্ছদ, গৃহস্থালির পণ্য, তৈজসপত্র, মুখরোচক খাবার, শিশুদের খেলনা থেকে শুরু করে কী নেই এই মেলায়। পাওয়া যাচ্ছে হাঁড়ি-পাতিল, দা, বঁটি, ঝাড়ুসহ সকল রকমের পণ্য। শুধু তাই নয়, হাঁটতে হাঁটতে এমন জিনিসও চোখে পড়ে যাচ্ছে, যা হয়তো গৃহিণী খুঁজছেন অনেকদিন ধরে। চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জব্বারের বলীখেলার বৈশাখী মেলার পর বিজয়মেলা আরেকটি আয়োজন, যা নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা এবার পদার্পণ করেছে ৩১ বছরে। দীর্ঘ তিন দশকের ধারাবাহিকতায় বিজয়মেলাও আরেকটি ঐতিহ্যে পরিণত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার জন্য পথিকৃৎ হয়ে আছে চট্টগ্রাম। কেননা, বিজয়ের মাসে এখানেই প্রথম শুরু হয় এই মেলা, যা সারাদেশে সম্প্রসারিত হয়েছে। ডিসেম্বর শীতের মাস। শুষ্ক এ মৌসুমে বেড়াবার আনন্দ যেমন আছে, তেমনিভাবে শীতের জন্য প্রয়োজন গরম কাপড়ের। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলায় বসেছে পোশাক পরিচ্ছদের অসংখ্য স্টল। ঠা-া এসে পড়ায় সবচেয়ে বেশি ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে শীত পোশাকের স্টলে। সোয়েটার, ব্লেজার, চাদর, মাফলার, ক্যাডস এবং শীত নিবারণের পণ্যগুলোর দোকানে বিকিকিনি বেশ জমে উঠেছে। দোকানে শোভা পাচ্ছে দেশী-বিদেশী গরম কাপড়। রয়েছে ইন্ডিয়ান, থাই ও চীনা শাল। সবই কেনা যাচ্ছে সুবিধাজনক দামে। দামাদামির দোকান যেমন রয়েছে, তেমনই আছে একদরের বিপণিও। নারী ও শিশুরা বেছে নিচ্ছে পছন্দের পোশাক। কম যাচ্ছে না কিশোর তরুণরাও। তাদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট, স্যান্ডেলসহ বাহারি পণ্য। মেয়েদের শাড়ি, তৈরি পোশাক ও থ্রি পিসের সমাহার এই মেলায়। প্রতিদিন দুপুরের পর মেলাঙ্গন উন্মুক্ত হয় দর্শনার্থীদের জন্য। তখন থেকেই মানুষের স্রোত থাকে মেলার দিকে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মঞ্চে প্রতিদিনই পরিবেশিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন মঞ্চে আসছে তাদের পরিবেশনা নিয়ে। শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনা, রাইড ও বিভিন্ন ধরনের গেমস। বিকেলের সময়টুকু চমৎকার আমেজে কাটাবার একটি আকর্ষণীয় স্থান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিকেলে শিখা প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মঞ্চের মূল অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়মেলা উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার প্রধান উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সেদিন থেকে বিজয়মঞ্চে প্রতিদিনই থাকবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, আলোচনা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের মনোজ্ঞ পরিবেশনা। তবে মেলা শুরু হয়ে গেছে ১ ডিসেম্বর। বিজয় শিখা প্রজ্বালনের আগেই বরাবরের মতো আউটার স্টেডিয়ামে জমে উঠেছে এই প্রাণের মেলা।
×