ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুনরুদ্ধার দাবি

যশোরের ভায়না খাল দখল করে মাছ চাষ

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

যশোরের ভায়না খাল দখল করে মাছ চাষ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ঝিকরগাছা উপজলোর ভায়না খাল দখল করে চলছে মাছ চাষ। শুধু তাই নয়, নদী জমি নিজেদের নামে দলিলপত্র করে নিয়েছে দখলবাজরা। এদিকে পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ নানা কর্মসূচী পালন করছে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, ঝিকরগাছা উপজলোর রাধানগর গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভায়না খাল ভারতের ইছামতি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। এই খাল কপোতাক্ষ নদে গিয়ে মিশেছে। স্থানীয়রা এই খালের পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজসহ তাদের দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। স্থানীয় সাবেক মেম্বার রশিদ ও তার জামাই লোকমান প্রথমে খালের জমি দখল করে মাছ চাষ শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের মাঠ জরিপে সরকারী খালের জমি ব্যক্তি মালিকানায় নিয়ে নেন তারা। এরপর স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা খাল তাদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ঘরে বানিয়ে মাছ চাষ করছে। এ কারণে তারা স্থানীয়দের খালের পানি কৃষি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। সেই সঙ্গে খালে বাঁধ দেয়ায় বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে আশপাশের প্রায় ২০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় রাধানগর গ্রামের মোজাহার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজাপুর গ্রামের লোকমান ও রশিদ ২০ বছর ধরে জোরপূর্বক খাল দখল করে মাছ চাষ করছে। জাল দলিলের মাধ্যমে তারা খালের জমি নিজ নামে রেকর্ড করেছে। কথা হয়, ওই গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ সালেহা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। খালের পানিতে পোল্ট্রি মুরগির পায়খানা দিয়েছে। এ কারণে খালের পানিতে আমরা নামতে পারি না। হাঁস-মুরগি খালের কিনারে যেতে পারে না। ১১টি হাঁস মেরে ফেলেছে। এই হাঁসের ডিম দিয়ে তার সংসার চলত। ওষুধ কিনত। কিন্তু হাঁসগুলো মারা যাবার কারণে তিনি অনেক দিন ওষুধ কিনতে পারেন না। তিনি বলেন, দখলবাজরা খুবই শক্তিশালী। খালে গোসল করতে গেলে সন্ত্রাসীরা এসে বাড়ির ওপর গিয়ে আমাদের বৌ-মেয়েদের মারপিট পর্যন্ত করে। একই গ্রামের শামছুর রহমান বলেন, খালের জমি সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত। এ খালে এক সময় আশপাশের গ্রামের লোকজন এসে মাছ ধরত। যে মাছ বিক্রি করে অনেকের সংসার চলত। কিন্তু আজ কেউ খালে নামতে পারে না। নামলেই দখলকারীরা এসে আমাদের মারপিট করে। আমাদের সব সময় ভয়ে থাকতে হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারী খালের জমি কিভাবে মানুষের নামে রেকর্ড হয়। খালের ধারে কথা হয়, ৮৫ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাং এ মানুষ মাছ চাষ করে খেত। ২০০০ সালের বড় বন্যার আগে এই খাল দখল হতে শুরু হয়। তারপর থেকে আজ খাল মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। আজব দুনিয়াতে আর কত কিছু দেখব। স্থানীয়দের অভিযোগ খাল পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করায় তাদের ওপর কয়েক দফা হামলাও করা হয়েছে। এই অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা ভায়না খাল পুনরুদ্ধারে জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে দখলবাজ লোকমান জানান, তিনি ও তার শ্বশুর রশিদ মেম্বার ক্রয়সূত্রে ওই জমির মালিক। কোরবান আলী নামে এক ব্যক্তির ওয়ারেশদের কাছ থেকে তিনি জমিটি কিনেছেন। খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সরকারী খাল কারও দখলে থাকলে তা উদ্ধার করতে জেলা প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
×