ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে বিষমুক্ত সবজি নিয়ে চালু হলো ‘কৃষকের বাজার’

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজধানীতে বিষমুক্ত সবজি নিয়ে চালু হলো  ‘কৃষকের বাজার’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে মিলছে বিষমুক্ত নিরাপদ শাকসবজি। সপ্তাহে দুদিন শুক্র ও শনিবার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে গ্রাহক যাতে নিরাপদ সবজি কিনতে পারেন সে ব্যবস্থা করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। যার নাম ‘কৃষকের বাজার’। মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সার ও কীটনাশকমুক্ত শাকসবজি ও দানাদার শস্যের যোগান দেবেন আশপাশের জেলা- উপজেলার কৃষক। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ‘কৃষকের বাজার’ সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। শুক্রবার মানিক মিয়া এভিনিউর সেচ ভবন প্রাঙ্গণে এ বাজারের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এখন থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার এই সেচ ভবনেই বসবে কৃষকের বাজারটি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে কৃষকের বাজারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বিএডিসির চেয়ারম্যান মোঃ সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ, বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রবার্ট ড. সিম্পসনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। ঢাকার আশপাশের মোট আটটি উপজেলা থেকে অর্গানিক বিভিন্ন সবজি নিয়ে এ বাজারে অংশগ্রহণ করেছেন কৃষকরা। প্রথমবার তাদের পরিবহন খরচ সরকার বহন করে। পরবর্তীতে কৃষক নিজ উদ্যোগেই এখানে সবজি নিয়ে আসবেন। এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন ক্রেতারা। কীটনাশকমুক্ত সবজির নিশ্চয়তা পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বেসরকারী একাধিক চাকরিজীবী মত প্রকাশ করে বলেন, এই বাজারে দুটি লাভÑ এক, কৃষক সরাসরি অর্থ পাচ্ছে। আরেকটি, আমরা ক্রেতারা ভাল সবজির নিশ্চয়তা পাচ্ছি। এ সময় অসংখ্য ক্রেতাকে ব্যাগভর্তি করে বিভিন্ন শাকসবজি কিনতে দেখা যায়। ঢাকা ও আশপাশ জেলা-উপজেলার কৃষকরা পণ্য নিয়ে এসেছেন এই বাজারে। সাভার, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেন এই বাজারে। সাভারের ধামরাই থেকে আসা এক কৃষক বলেন, বাজারে ফুলকপি পাওয়া যায়, আমাদের এখানেও ফুলকপি আছে। কিন্তু এই দুই ফুলকপির মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমরা কোনরূপ কীটনাশক ব্যবহার করি না। দৈনন্দিন আবর্জনা থেকে তৈরি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণসহ ফসলকে পোকামাকড়মুক্ত রাখতে অনেক শ্রম ও খরচ হয়। তাই আমাদের দামটা একটু বেশি হলেও আপনি নিশ্চিত মনে খেতে পারেন।। একটি ফুলকপির পেছনে খরচ হয় ২০ থেকে ৩০ টাকা। আমরা সেটা বিক্রি করছি ৪০ টাকায়। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিক্রি ভাল হয়েছে। যা সবজি নিয়ে এসেছিলাম তার সবই বিক্রি হয়ে গেছে। এত তাড়াতাড়ি সব বিক্রি হয়ে যাবে ভাবিনি। আমরা নিয়মিত এখানে সবজি নিয়ে আসব। বাজার উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই কৃষকের বাজারে যে কৃষকরা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের আমরা এক বছর ধরে প্রস্তুত করেছি। সম্পূর্ণরূপে কীটনাশকমুক্ত সবজি এখানে নিয়ে আসছেন তারা। স্বল্প পরিসরে হলেও এটি অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে এটি বৃহৎ পরিসরে করার উদ্যোগ আমরা নেব। কৃষি খাতে বাংলাদেশের আরও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলে, দানা জাতীয় খাদ্যের ক্ষেত্রে আমরা এখন উদ্বৃত্ত অবস্থায় আছি। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের শাকসবজি, খাদ্য ও কৃষিপণ্য রফতানি হয়েছে। এটি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গত অর্থবছরে কৃষিক্ষেত্রে রফতানির অগ্রগতি হয়েছে ৩৪ ভাগ। অন্যান্য সব সেক্টরের চেয়ে কৃষি সেক্টরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কোন দরকার নেই বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। মন্ত্রী বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কোন দরকার নেই। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল রয়েছে। চাল নিয়ে কারো উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। চালের বাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি আরও বলেন, চালের বাজার নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। চিন্তা হতে পারে যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। এখন আপনারা আমাদের সহযোগিতা করেন, কৃষক যাতে তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়। খামারে যারা কৃষিকাজ করে তারা যেন সঠিক মূল্য পায়, এটিও আমাদের দেখতে হবে। একমণ ধান করতে লাগে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। সেটা যদি ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হয় তাহলে কৃষকরা করবে না। এবার ৭০০ টাকা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য, বাংলার লাখ লাখ কৃষকের জন্য। তাদের ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। মোটা চাল নিয়ে মন্ত্রী বলেন, মোটা চাল বিক্রি করতে পারি না আমরা। ওএমএসের গাড়ি যায়, তারা চাল বিক্রি করতে পারে না, ডিলাররা একটনও চাল তুলছে না। কোন গ্রাহক নেই। মোটা চাল খারাপ তো কিছু না। পুষ্টির দিক দিয়ে ভাল। তবে সবাই চিকন চালই খেতে চায়। পেঁয়াজ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, যখন দেশে পেঁয়াজ উত্তোলন করা হয় তখন বিদেশী পেঁয়াজের আমদানির কারণে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারে না আমাদের কৃষক। তাই আমরা পেঁয়াজের মৌসুমে তা আমদানি বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রী বলেন, কৃষি উন্নয়নে গবেষণায় সাফল্যের ফলে দেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্ত। কৃষকদরদি মানবিক প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা,দূরদর্শিতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা কৃষকের প্রতি তার যে দরদ তার প্রমাণ আবারও রেখেছেন ৫ম বারের মতো সারের মূল্য হ্রাস করে। এটি বঙ্গবন্ধুর কন্যার দ্বারাই সম্ভব। এখন আমাদের লক্ষ্য নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিরাপদ সবজির জন্য কৃষকের বাজারের আয়োজন। আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্যের জন্য সচেতনতা বেশি প্রয়োজন। কৃষির উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে শিল্পের উন্নয়ন। কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানসহ এই শিল্পটি প্রসারিত হবে। এ বছর এই হাটে ভোক্তাদের যে সাড়া পড়েছে আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই হাটের আয়োজন করা হবে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলার দুটি করে গ্রামকে নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে এবং প্রতিটি জেলার বাজারে একটি করে নিরাপদ সবজি কর্নার থাকবে যেখানে চাষি নিরাপদ সবজি বিক্রি করবে। এতে করে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন। ভবিষতে এ বাজার সাত দিন করে করা হবে এবং এ বাজারের পণ্যের মানের তদারকি করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কৃষি সচিব বলেন, পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া কৃষকের অধিকার। সরকার কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিএডিসি ৮০ হাজার কন্ট্রাকট ফার্মারের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি আধুনিক কৃষির পথচলার শুরু। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন কূটনৈতিকপাড়ায় এ রকম একটি হাটের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানান। এর আগে মেলার উদ্বোধন করে মন্ত্রী মেলার স্টল পরিদর্শন করেন এবং স্টলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কৃষক ও কৃষিপণ্য বিষয়ে কথা বলেন। অনষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ ইউসুফ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএডিসির চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুল ইসলাম। এ সময় কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছাড়াও নিরাপদ সবজি নিয়ে আসা কৃষক ও সবজি কিনতে আসা ক্রেতাও উপস্থিত ছিলেন।
×