ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চরে ঘোড়ায় চালিত যান পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ কমেছে

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

চরে ঘোড়ায় চালিত যান পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ কমেছে

মরুর জাহাজ উটের পথ ধরে চরের জাহাজ হয়েছে ঘোড়া। চরের বালুর ওপর দিয়ে এই ঘোড়া ছুটে নিয়ে যায় বিশেষ ধরনের এক যান। যা দেখতে অনেকটা গরুরগাড়ির মতো। তবে ভিন্ন ধরনের যান। চরের মানুষ ঘন বালির ওপর দিয়ে সহজে হাঁটতে পারে না। গ্রীষ্মে তপ্ত ও শীতে বরফ। হেঁটে চলা খুবই কষ্ট। গরু ও মহিষ গাড়ি টানাতে পারে না। এমন অবস্থায় তারা ঘোড়ায় চালিত এক গাড়ি উদ্ভাবন করেছে। যা দেখতে টমটমও না আবার গরু গাড়ির মতো নয়। এই গাড়ির সঙ্গে মোটরের টায়ারের চাকা যুক্ত করা হয়েছে। ঘোড়া তার শক্তিতে (যে শক্তি যান্ত্রিক ক্ষমতার একক হয়ে ইংরেজীতে নামকরণ হর্সপাওয়ার) চরের বালির ওপর দিয়ে পায়ের নিচে লাগানো বিশেষ প্রলেপে চলতে পারে)। ব্রহ্মপুত্র যমুনা পদ্মার চরে এমন যান নদী চরে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে। ভোগান্তি কমিয়েছে চরের মানুষের। এখন আর তাদের শীত গ্রীষ্মে বালির ওপর দিয়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় না। দূরের হাটবাজারে পরিবহনের কষ্ট দূর হয়েছে। চরের মানুষ এই যানের নাম দিতে পারেনি। শুধু ডাকে ঘোড়া। জলবায়ুর পরিবর্তনের পালায় নদ নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমেও অনেক চর জেগে থাকে। যমুনা তীরের বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা, লালমনিরহাট, নীলফামারীতে তিস্তা, কুড়িগ্রাম ময়মনসিংহ জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র, রাজশাহীতে পদ্মা পাড়ে গেলে দৃষ্টিতে পড়ে শুধুই বালিয়াড়ি। সারিয়াকান্দি উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন চরগ্রাম। যে হারে নদী শুকিয়ে যাচ্ছে তাতে আরও ইউনিয়ন বালিয়াড়িতে ঢাকা পড়ার পথে। এক সময় উৎপাদিত পণ্য বিপণনে হাট বাজারে নিয়ে যেতে পোহাতে হতো মহাদুর্ভোগ। অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছিল কঠিন। গরুর গাড়ি গ্রামের সড়কে যতটা সহজে চলতে পারে চরের বালির ওপর দিয়ে সেভাবে টানতে পারে না। চরের ওপর দিয়ে এক ঘোড়া যে পরিমাণ বোঝা বহন করতে পারে এক জোড়া শক্তিশালী গরু তা পারে না। যে কারণে চরের যোগাযোগে ঘোড়ার গাড়ি বড় ভূমিকা রাখছে। চরবাসী এখন বলে ঘোড়া এখন চরের জাহাজ। কাজলা চরের আবুল কালাম বললেন, মোটর গাড়ির চাকা টায়ার, রিং আনুষঙ্গিক জিনিস ঠিকঠাক করে বাঁশ কাঠের কাঠামোর সঙ্গে এঁটে দিয়ে ঘোড়ার চালিত এই গাড়ি তৈরি করেন। জামালপুরের মাদারগঞ্জ হাট থেকে ঘোড়া কিনে আনেন। স্বচ্ছন্দে পরিবহন করেন যাত্রী ও উৎপাদিত পণ্য। অন্তত দশ মণ করে পণ্য পরিবহন করা যায়। উৎপাদিত ফসল পরিবহন করে নিয়ে যান দূরের হাটবাজারে। বোহাইল গ্রামের আফজাল বললেন তার ঘোড়া গাড়ি এক চর থেকে আরেক চরে লোকজন নিয়ে যায়। ঘোড়া গাড়ি চালিয়ে চরের অনেক জীবিকা নির্বাহ করছে। দিনে ৮শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছে। চালুয়াবাড়ির মনসুর আলী বললেন ঘোড়াসহ তার গাড়ি তৈরিতে খরচ পড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ঘোড়ার খাবারের জোগান দিতে না পাড়ায় কেউ ঘোড়া পালন করতে চায় না। শহরের কোন র‌্যালি, কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ শখ করে টমটম ভাড়া করে। যমুনায় খেয়া পারাপারের পর লোকজন খোঁজে চরের ঘোড়া গাড়ি। এই গাড়িগুলো আশপাশেই থাকে। লোকজন দেখলেই বাসের কন্ডাক্টরের মতো হাঁক দেয় ঘোড়া। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×