ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের দেড়শত কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না ঈগল পরিবহনের মালিক

প্রকাশিত: ১২:০৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

ব্যাংকের দেড়শত কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না ঈগল পরিবহনের মালিক

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ দেশের পরিবহন ব্যবসার অন্যতম ঈগল পরিবহন। দেশের প্রায় সব জেলাতে তাদের গাড়ি চলাচল করে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্য আমদানিতেও নাম পরিবারটির। বছর পাঁচেক আগে মসুর ডালের বড় চালান আমদানি করে তারা। ডালের সে ব্যবসাই ডুবিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম এ ব্যবসায়ী পরিবারকে। এ পরিবারের কাছে চার ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড়শত কোটি টাকা। দফায় দফায় পুনর্তফসিল করার পরও তা পরিশোধ করছে না কাপুড়িয়া পরিবার। ভোগ্যপণ্যে বড় লোকসানের ধাক্কা লেগেছে ‘ঈগল’ পরিবহনেও। জানা গেছে, কোম্পানিটির অনেক বাস এখন বসে আছে। যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে পরিবহন পুলে পড়ে আছে শতাধিক বাস। ব্যাংকাররা বলছেন, কাপুড়িয়া পরিবারের সদস্যরা দেশের বাইরে টাকা পাচার করেছেন। ব্যাংক ঋণের অর্থ সরিয়ে নেয়ার কারণেই অপু কাপুড়িয়া ও পবিত্র কাপুড়িয়ার ব্যবসায় ধস নেমেছে। দেশে ও দেশের বাইরে বিপুল সম্পদ থাকলেও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না দুই ভাই। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন দফায় দফায়। তাদের লক্ষ্য ব্যাংকের টাকা ফেরত না দেয়া। যশোরের কাপুড়িয়া পরিবারের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এমকে মোটরস, আরজি ট্রেডার্স ও অর্ণব এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঋণ রয়েছে এনসিসি, আইএফআইসি, ব্যাংক এশিয়া, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি, আইপিডিসি, ইউনাইডেট ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। সব মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড়শত কোটি টাকা। কাপুড়িয়া পরিবারকে ঋণ দিয়ে বিপদে আছে এনসিসি ব্যাংক। এ পরিবারের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা রয়েছে এমকে মোটরসের কাছে। বাকি ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আছে অর্ণব এন্টারপ্রাইজের নামে। এ ঋণ নিয়ে অনেকদিন থেকেই বেকায়দায় রয়েছে ব্যাংকটি। শ্রেণীকৃত হওয়ায় এখন পর্যন্ত চারবার পুনর্তফসিল করা হয়েছে ঋণটি। সর্বশেষ পুনর্তফসিলের পর এখন পর্যন্ত কোন কিস্তি পরিশোধ করেনি কাপুড়িয়া পরিবার। ফলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ঋণটি আবারও খেলাপীর খাতায় তুলবে এনসিসি ব্যাংক। বহুবার সময় নিয়েও কাপুড়িয়া পরিবার ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করেনি বলে জানান এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, মসুরের ডালসহ ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য আমরা এলসি সুবিধা দিয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছর পার হলেও অপু কাপুড়িয়া ও পবিত্র কাপুড়িয়া ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করেননি। ‘ঈগল’ পরিবহনের বিপরীতেও আমাদের ঋণ আছে। সে ঋণও তারা পরিশোধ করছে না। ব্যাংকের পক্ষ থেকে পুনর্তফসিলের একাধিক সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেনি। ব্যাংকের টাকা আদায়ে চূড়ান্তভাবে আমরা আইনী পথে হাঁটছি। এরইমধ্যে পবিত্র কাপুড়িয়ার বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৬০ হাজার টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা করা হয়েছে। কাপুড়িয়া পরিবারের প্রতিষ্ঠান অর্ণব এন্টারপ্রাইজের কাছে প্রায় ২২ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার। ভোগ্যপণ্য আমদানি ও ‘ঈগল’ পরিবহনের জন্য এ ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। যদিও সে ঋণ ফেরত দিচ্ছে না কাপুড়িয়া পরিবার। ব্যাংক এশিয়া বলছে, ডালসহ ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য অর্ণব এন্টারপ্রাইজকে ব্যাংকিং সুবিধা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়নি। ডালসহ ভোগ্যপণ্য আমদানির পর বিক্রি না হলে প্রতিষ্ঠানটির গোডাউনে তা থাকার কথা। যদিও গোডাউনে গিয়ে মজুদকৃত কোন পণ্য পাননি ব্যাংক এশিয়ার যশোর শাখার ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, অনেক আগেই আমদানিকৃত ডাল বিক্রি করে দিলেও ব্যাংকের টাকা তারা দিচ্ছে না। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ ‘মিসম্যাচ’ হয়েছে বলে মনে করেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আরফান আলী। তিনি বলেন, অর্ণব এন্টারপ্রাইজের ঋণ খেলাপী হয়ে যাওয়ায় পুনর্তফসিল করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য আমরা পথ সহজ করে দিয়েছি। এখন কাপুড়িয়া পরিবার নিজেদের দায়িত্ব পালন করলে ভাল। অন্যথায় আমাদের জন্য আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া বিকল্প থাকবে না। মোঃ আরফান আলী জানান, ব্যাংক এশিয়ার কাছে কাপুড়িয়া পরিবারের ৬ কোটি টাকার একটি এফডিআর জামানত হিসেবে আছে।
×