ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মিহির কুমার রায়

ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোকে আয়কর মেলা ॥ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোকে আয়কর মেলা ॥ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতিবছরের মতো বর্তমান বছরেও (২০১৯-২০) আয়কর মেলার আয়োজন করেছিল, যার স্থায়িত্ব ছিল ১৪ থেকে ২০ নবেম্বর পর্যন্ত। সপ্তাহব্যাপী এই মেলার এবারের স্লোগান ছিল আয়কর প্রবৃদ্ধি, দেশ ও দেশের সমৃদ্ধি। একইসঙ্গে রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সাতদিন, প্রতিটি জেলা শহরে চারদিন ও ৪৫ উপজেলা শহরে ২ দিন করে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর বাইরেও উপজেলা পর্যায়ে সাতান্নটি গ্রোথ সেন্টারেও এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আয়কর মেলার শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী মেয়াদে, যার বয়স দশ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। প্রথমে এই মেলার সফলতা নিয়ে অনেকেই সন্দীহান ছিল, বিশেষত করের প্রতি সাধারণ মানুষের ভয়-ভীতি, অনীহা ও অসহযোগিতার কারণে। তা ছাড়াও নিজের টাকা হাত থেকে চলে যাবে সরকারের খাতায়- না জানি কি হয়। এসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকাংশে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত সময়ে এই অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে, যেখানে কর মেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষণীয়। অনেক করদাতাই এককভাবে কর রিটার্নের ফরম পূরণ করতে পারে না। আবার অনেকেই পূরণ করতে পারলেও জমা দিতে গিয়ে যদি হয়রানির শিকার হয়, এই ধরনের একটি বোধ থেকে সাধারণ করদাতারা কর মেলাকেই কর প্রদানের নিরাপদ স্থান মনে করে। এই কারণে সেখানে একটি উদ্বোধকমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আয়োজকরা এগিয়ে এসেছে মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে, যা সাধারণ করদাতাদের মন কেড়েছে। তা ছাড়াও যারা প্রথম নতুন করদাতা তাদেরও সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা মেলায় রাখা হয়েছিল হাতে কলমে কিভাবে ফরম পূরণ করা হয়। কর নির্ধারিত হওয়ায় পর ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে কিংবা ব্যাংকের পে-অর্ডারের মাধ্যমে কিভাবে টাকা জমা দিতে হয়। যেখানে মেলার স্থানে পে-অর্ডার ইস্যু করা এবং লাইনে দাঁড়িয়ে নির্ধারিত কর অঞ্চলের কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে রিটার্ন জমা দেয়া, যার বিনিময়ে করমেলার মনোগ্রাম সংবলিত একটি ব্যাগ, ১টি পানির বোতল, ১টি কলম, ১টি প্যাড, এক প্যাকেট বিস্কুট, যা কর দাতাদের জন্য একটি বাড়তি উৎসাহের উপকরণ বলে বিবেচিত। বিভিন্ন মিডিয়ার লোকজন করদাতাদের সাক্ষাত নিয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্তের সুযোগ কয়ে দিয়েছে, যেখানে কোন করদাতা হয়ত এর আগে কখনও মিডিয়ার মুখোমুখি হননি। তার মধ্যে এবার বিশেষত মহিলা করদাতারা, যারা প্রথমবারের মতো টিন পেয়ে করের খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তাদেরও আনন্দের শেষ নেই। বিশেষত দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও জাতীয় উন্নয়নে তাদের অংশীদারিত্ব, যা আমাদের তরুণ সমাজের দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করছে। আরও মজার ব্যাপার, করমেলায় সিনিয়র সিটিজেন, মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি, বিকলাঙ্গ এই সব শ্রেণীর জন্য আলাদা কাউন্টার বিশেষত বয়স্কদের বেলায় এই সুযোগ করে দেয়ায় সরকার বিশেষভাবে প্রশংসার দাবিদার। কারণ, জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কর প্রদানের এই যে বিরল সুযোগ কি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকবে, যার অংশীদার আমিও সয়ং! প্রতিবছর মেলার শুরুতেই প্রথাগতভাবে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা গত ১৪ নবেম্বর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং আয়োজক সংন্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এবিআর)-এর চেয়ারম্যান ও কোম্পানি করদাতাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানের জন্য বাড়তি আকর্ষণের সৃষ্টি করেছিলেন। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার প্রতিনিধিরা আয়কর জমা দিয়ে আয়কর মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন। এই করমেলায় প্রথম আয়কর রিটার্ন জমা দিতে আসা অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা বলেছিলেন, মেলায় আসার আগে ভেবেছিলাম অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থাৎ রিটার্ন দাখিল করতে কোন সময় লাগেনি। মেলার প্রথম দিনে ২১টি বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান (এলটিইউ) ২৯১ কোটি টাকা কর দিয়েছিল, যাদের মধ্যে ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিই বেশি। এবারকার মেলা উপলক্ষে এনবিআর জানিয়েছে, সাতদিনে সারাদেশ থেকে ২ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছে, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এবারকার মেলায় ১৮ লাখ ৬৩ হাজার করদাতা মেলা থেকে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ৬ লাখ ৫৫ হাজার, যা আয়কর মেলার নতুন সংযোজন এবং নতুন ই-টিন নিয়েছেন ৩২ হাজার ৯৬১ জন। আয়কর মেলায় এবারই প্রথম রকেট, বিকাশ, ইউপের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আয়কর প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের করমেলায় ৬ হাজার ৪শ’ ২০ জন করদাতা ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কর প্রদান করেছে। এই কর প্রদানের সুযোগ ৩০ নবেম্বর, ২০১৯ পর্যন্ত চলেছে। ওপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়ম যে, দেশের করযোগ্য মানুষ কর দিতে চায়, কিন্তু করবান্ধব একটি মনোরম পরিবেশ পায় না, যা বর্তমান সরকার ২০১০ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আসীন থাকায় করমেলার মাধ্যমে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, এটি সরকারের একটি বড় সাফল্য। মানুষ এখন করভীতি থেকে মুক্ত। উপজেলা পর্যায়ে করের অফিস খোলার কাজ চলছে। উদারনৈতিক শৈথিল্যের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান নীতির ফলে সরকরী-আধাসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও করের আওতায় এসেছে এবং দেশের শ্রেষ্ঠ করদাতাদের সম্মাননা দেয় হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশের বড় করদাতাদের (ধনী-অতিধনী) নাম শ্রেষ্ঠত্বের তালিকায় নেই। যেমনÑ শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত পরিচালক, ধন্য চিকিৎসক, যারা এক হাজার থেকে দু’-হাজার টাকা রোগী প্রতি ফির বিনিময়ে সারা রাতের ঘুম হারাম করে রোগী দেখেন। আদালতের উকিল-ব্যারিস্টার, যারা প্রতি শুনানিতে লাখ টাকা ফি আদায় করেন। তাদের নাম যদি তালিকাভুক্ত থাকত এবং কর দিতেন তা হলে সরকারের ঘাটতি বাজেট পূরণের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা কিংবা বৈদেশিক সাহায্য থেকে ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন হতো না। আবার যারা ঞওঘধারী তারাও অনেকেই কর কিংবা রিটার্ন জমা দেন না, যদিও আগের তুলনায় এই হারটা কমছে। তারপরও করদাতার সিংহভাগ সরকারী কর্মকর্তা এবং বেসরকারী কর্মকর্তারাও এর মধ্যে যোগ হয়েছেন, যা অনেকটা আশার কথা। এই পরিবেশ বজায় থাকলে ঞধী ঈড়সঢ়ষুধহপব দিন দিন বাড়বে, ব্যাংক থেকে ধার কমবে, ঞধী-এউচ জধঃরড় বাড়বে। আমরা যদি ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোকে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করি তা হলে দেখা যায় যে, আয়কর প্রত্যক্ষ করের অংশ এবং বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ে প্রত্যক্ষ করের অবদান ক্রমশ বাড়ছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের প্রত্যক্ষ করের অংশ ৩৩% ধরা হয়েছে। প্রবৃদ্ধির বর্তমান এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে মোট কর রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অবদান ৫০% ছাড়িয়ে যাবে। উল্লেখ্য, রাজস্ব প্রাপ্তি হিসেবে আয়কর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও আমদানি শুল্ক (আশুক)-এর পেছনে রয়েছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো চিত্র অর্থাৎ বর্তমানে সার্বিক রাজস্ব আয়ে মূসকের অংশ ৩৭% এবং আশুকের অংশ ৩০%। যদি বিগত ছয় বছরের উপাত্ত পর্যালোচনা করা হয় তবে দেখা যায় যে, (২০১২-১৭) গড় প্রবৃদ্ধি আমদানিতে (২২%), জিডিপি (৫-৭% ) ও মূল্যস্ফীতির (৭-৯%) এবং স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরোক্ষ কর থেকে আয়ের ২৫% এর বেশি হওয়া যুক্তিযুক্ত। আমরা যদি বর্তমান বছরের বাজেটের দিকে তাকাই তবে লক্ষণীয়, বাজেটের প্রাক্কলিত মোট আয় ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা জিডিপি-এর ১৪.৫৩%। এর মধ্যে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৪.১%, যার ৮০% জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আহরণ করবে। দেশে কর-জিডিপি অনুপাতর তুলনামূলক কম হলেও প্রতি বছর রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য আগামী দুই বছরের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানের ১০ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে উন্নীত হবে। বর্র্তমান বছর থেকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং ১৫% ভ্যাটের পাশাপাশি নির্র্দিষ্ট কর পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে, ৫%,৭.৫% ও ১০% ভ্যাট আরোপ, স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে কর কমানোর জন্য ভ্যাট হার ৫% নির্ধারণ, ওষুধ ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ২.৪০% এবং ২% অব্যাহত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাট অব্যাহতি পাবে। তাছাড়াও কৃষি যন্ত্রপাতি, নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত ব্যবসায় শোরুম, হাইটেক পার্ক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জোগানদার ও বিদ্যুত বিতরণকারী সেবার ওপর ভ্যাটের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মোট কর রাজস্বে আয় করের অবস্থা ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে, যা আরও গতিশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়, কারণ যে গতিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছেÑ কখনও বাড়ছে কখনও কমছে, যা স্থিতিশীল গতিতে প্রবাহিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়কর আদায়ের হার সমধর্মী, অন্যান্য করের শ্রেণীর চেয়ে অনেক অগ্রগামী এবং প্রত্যক্ষ করের প্রাধান্য সবসময় বেশি। কিন্তু আমাদের অবস্থা হলো এই বিষয়গুলো প্রাতিষ্ঠানিভাবে দুর্বল রয়েছে অনেকদিন থেকে। যেমন, এই জটিল কাজটি সমাধান করার জন্য দক্ষ লোকের অভাব, সাধারণ মানুষের করের প্রতি ভয়ভীতি, যা তাদের অনাগ্রহকে অনেকাংশে ত্বরান্বিত করে। এক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্নটি বিশেষভবে জড়িত। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের এই পথপরিক্রমায় চার দশক পরেও দেশে কর্পোরেট ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলেও কোম্পানি প্রদত্ত আয়করের প্রবৃদ্ধি তেমন হারে বাড়েনি। অপর দিকে কোম্পানি ব্যতীত করদাতাদের মধ্যে ব্যক্তি করদাতা, পার্টনারশিপ ফার্ম, এ্যাসোসিয়েশন অব পারসনস ইত্যাদি রয়েছে, যাদের কর্পোরেট করের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ কারা প্রয়োজন। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে এটা বলতে কোন দ্বিধা নেই যে, প্রতি বছর জুলাই-নবেম্বর মাস এলেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর মেলা আয়োজন থেকে শুরু করে অন্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চোখে পড়ে। কিন্তু বছরব্যাপী এই ধরনের তৎপরতা চোখে পড়ে না। অথচ বাজেটভিত্তিক সরকারের আর্থিক ব্যস্থাপনায় রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি অতীব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ, যার সঙ্গে সরকারের প্রশাসনিক পরিচালনার ব্যয়ের বিষয়টি জড়িত। কারণ প্রতি বছর সরকার রাজস্ব আয়ের ঘাটতির কারণেই ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ করে প্রশাসনিক ব্যয় বহন করতে হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্ণিত অবস্থায় সার্বিক কর ব্যবস্থায় কিছু সুপারিশ নিচে প্রদত্ত হলো : প্রথমত : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রশাসনিকভাবে কাঠামোগত বিন্যাসের প্রয়োজন রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে কর কাঠামোর কোন অফিস নেই, যা থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ উপজেলা শহরগুলোতে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী কর প্রশাসনে রেজিস্ট্রিভুক্ত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে কেউ কোন দিন তাদের অবহিত করেনি। কর মেলা কেবল ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে ও জেলা শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা শহরগুলোতে কম হয়। এ ব্যাপারে আরও গতিশীল হওয়া প্রয়োজন; দ্বিতীয়ত : প্রশাসনের প্রতি করযোগ্য জনগণের অনীহা ও ভয়ভীতি অনেকাংশে সাধারণ মানুষকে কর প্রদান থেকে বিরত রাখে। এই ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ সার্বিক আয়করের বিষয়টির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থিক ব্যবস্থাপনা জড়িত বিধায় কাজটি অনেক ক্ষেত্রে হিসাব নিরূপণ ও কর যুক্ত আয় বের করা কিছুটা কষ্টসাধ্য। এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচীতে যোগদান করার প্রয়োজন রয়েছে। তৃতীয়ত : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামোতে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে, যা অবিলম্বে মেটানো প্রয়োজন। সরকার এই বিষয়গুলোকে কম নজর দিচ্ছে। অথচ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এই সংস্থাটির গুরুত্ব অপরিসীম। তা ছাড়াও স্টাফ পর্যায়ে যে সমস্ত জনবল রয়েছে তারা বিভিন্ন সময় কর প্রদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে থাকে, যা প্রতিনিয়ত শোনা যায়। ফলে যাদের ব্যবসার আকার বড় তারা সরাসরি না গিয়ে আয়কর উকিলের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করের রিটার্ন জমা দেয়, যা তাদের জন্য একটা বাড়তি খরচ। চতুর্থত : সার্বিক কর ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ করের প্রাধান্য বাড়ানো প্রয়োজন এবং এর অংশ হিসেবে সকল টিনধারীকে আয়কর রিটার্ন প্রদানে বাধ্য করতে হবে। এর অংশ হিসেবে আইনের ভয় দেখিয়ে নয়, বরং বাংলাদেশের জাতি গঠনে তাদের প্রদেয় করের যে ভূমিকা রয়েছে তা বোঝাতে হবে। তবেই কেবল জাতি গঠনে কর কাঠামো তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মান জাতির কাছে উঠে আসবে। পঞ্চমত : বাংলাদেশে টিনধারী লোকের সংখ্যা কত এবং তার মধ্যে কতজন নিয়মিত কর দেন, তার সঠিক হিসাব নিরূপণ করা প্রয়োজন। করমেলার পরও সারা বছর ধরে এনবিআর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, জাতি তাই প্রত্যাশা করে। লেখক : অধ্যাপক ও গবেষক, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
×