ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক নিরাপত্তার বরাদ্দ

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

সামাজিক নিরাপত্তার বরাদ্দ

দারিদ্র্যসীমাকে শূন্যের অবস্থানে আনতে আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাজেটকে দ্বিগুণ করার ঘোষণা এসেছে স্বয়ং অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে বাংলাদেশকে নিতে হবে অনুকরণীয় কোন মডেল। সেক্ষেত্রে বিশ্ব পরিসীমায় সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলো হতে পারে অনুসরণযোগ্য। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সরকারী পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্ব সংস্থাকে জানানোর জন্য রাজধানীতে দু’দিনব্যাপী এক সম্মেলন ও জ্ঞানমালার আয়োজন হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক অনুষ্ঠিত এই বৃহৎ ও মহৎ মিলনমেলার মূল বার্তাটি ‘সামাজিক নিরাপত্তা ও জ্ঞানমেলা’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে উদ্বোধন করা হয়। এই মহতী মেলার উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জীবনমান উন্নয়নে ১৪৫টি কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই মেলায় মন্ত্রণালয় ছাড়াও জাতিসংঘ, ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সেভ দা চিলড্রেন’সহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্মিলিত উপস্থিতি এবং সম্পৃক্ততায় দারিদ্র্য সীমাকে অতিক্রম করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। চলতি বাজেটে অর্থমন্ত্রী সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকার যে বরাদ্দ দেন, তা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ হিসাবে মূল্যায়িত হয়েছে। এমন অনুমোদনের মাত্রা সামনের অর্থবছরগুলোতে আরও বেড়ে যাবে বলে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেন, যা দারিদ্র্য বিমোচনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। লক্ষ্যমাত্রায় রূপকল্প-২১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য আর অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে হরেক রকম প্রকল্পে এগিয়ে নিয়ে মূল গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এরই সুদূরপ্রসারী কর্মযোগে প্রতিবছর বরাদ্দ অর্থ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে। সামাজিক নিরাপত্তাকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে যে সরকারী অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, তাতে সংশ্লিষ্টদের জীবনমানের উৎকর্ষের দিকেও বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। উপস্থিত দাতা সংস্থাগুলো সরকারী কর্মসূচীতে বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করে আয় বৈষম্য কমানোর ব্যাপারে মন্ত্রণালয়গুলোর উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে মনে করছে। মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী দারিদ্র্য বিমোচনকে অনেকটা লাঘব করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে এমনসব জনহিতকর কার্যক্রমকে তার নির্ধারিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখা হচ্ছে। দারিদ্র্যসীমা ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে ২০৩০ সালের মধ্যে অতিদরিদ্রের হারকে বিবেচনায় আনা হয়েছে। তবে দারিদ্র্য বিমোচনের যেসব প্রকল্পে মন্ত্রণালয়গুলো এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে দারিদ্র্য প্রায় ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দারিদ্র্য হ্রাসে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে, যেখানে হতদরিদ্রের সংখ্যা শহরাঞ্চলের চাইতে অনেক বেশি। মূলত তাদেরই নিরাপত্তা ও খাদ্য বেষ্টনীর আওতায় এনে বিত্তহীনদের জীবনমান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়টি কর্মপরিকল্পনায় এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনের মেগা প্রকল্পগুলো কর্মসূচীর যথার্থ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের জীবনমানে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখবে, এমন প্রত্যাশা সকলের।
×