ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ(পিসিএনপি)’ নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

 ‘ পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ(পিসিএনপি)’ নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পার্বত্যাঞ্চলে ‘ পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ(পিসিএনপি)’ নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত সংগঠনগুলো অর্থাৎ পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য অধিকার ফোরামসহ আরো কয়েকটি সংগঠনের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম বিলুপ্ত করে এই নতুন সংগঠন গঠন করা হয়েছে। নতুন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে , পার্বত্যাঞ্চলকে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) সম্পৃক্ত রয়েছে। সন্তু লারমার নেতৃত্বে পার্বত্যাঞ্চলে সন্ত্রাসী ও হত্যাকান্ডসহ পার্বত্যাঞ্চলবাসীর স্বার্থ বিরোধী নানা অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে। চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নিপীড়িত ও বঞ্চিত সকল মানুষের স্বার্থ রক্ষায় এই নতুন সংগঠনের জন্ম হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার আল মামুন ভূইয়াকে আহ্বায়ক এবং এসএম মাসুম রানাকে সদস্য সচিব করে সংগঠনটির ৪২ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার আল মামুন ভূইয়া এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মজিবুর রহমান, বাঘাইছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুম , পার্বত্য গণ পরিষদের মো. পারভেজ তালুকদার, পিবিসিপি’র সাবেক জেলা সভাপতি মো. সোলায়মান, সম-অধিকারের মহাসচিব মো. মনিরুজ্জামান মনির, অধিকার ফোরামের মো. আনিছুজ্জামান ডালিম ও সালমা আহমেদ মৌ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে , বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অপরূপ সৌন্দর্যময় সবুজ পার্বত্য ভূমিকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি নতুন কোন ঘটনা নয়। এই অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি আলাদা রাষ্ট্র তৈরী করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিষাক্ত করে তোলা হয়েছে। শান্তি ও উন্নয়নে গৃহিত সরকারি সকল প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজাতীয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলো জ্বালাও- পোড়াও ও হত্যাকান্ড অব্যাহত রেখেছে। আর চাঁদাবাজিি ও নৈরাজ্যের এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পক্ষান্তরে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অজুহাত দেখিয়ে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কারণে অস্ত্রধারীদের নির্যাতনের পাশাপাশি পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বঞ্চনা ও হতাশা। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৯১ সালে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠনসহ অন্যান্য বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা বজার রেখে সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক ‘ পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শান্তিবাহিনী আত্মসমর্পন করার সময় কিছু অস্ত্র জমা দিয়ে সশস্ত্র তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে পাহাড়ীরা। চাঁদাবাজীর টাকায় তাদের অস্ত্রের ভান্ডার দিন দিন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। চাঁদাবাজীর টাকার লোভে জনসংহতি সমিতি ভেঙ্গে মোট চারটি উপজাতীয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্ম হয়েছে। ফলে পার্বত্য চুক্তির কাঙ্খিত সুফলতা পাচ্ছে না পার্বত্যবাসী। উপজাতীয় সংগঠনগুলোার আধিপত্য বিস্তারের অংশ হিসেবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে পাহাড়ি-বাঙালি কেউ সন্ত্রাসীদের নিপীড়ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠী পড়ছে সন্ত্রাসীদের টার্গেটে এবং বলিরপাঠা হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অসহায় মানুষ। পিসিএনপি’র আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আল মামুন ভূইয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র অনন্তকাল ধরে চলতে দেয়া যায় না। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাগুলোকে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাহাড়িদের হাতে বলির পাঠা হতে দেয়াও গ্রহণযোগ্য নয়। আর এই লক্ষ্যেই নতুন সংগঠন ‘ পিসিএনপি’ গঠন করা হয়েছে। নবগঠিত এই সংগঠনটি কোনভাবেই শুধুমাত্র বাঙালীদের সংগঠন নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য এই সংগঠনটির দ্বার উন্মুক্ত থাকবে।
×