ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

একজন রকস্টারের স্বপ্ন ও ব্যান্ডফেস্ট

প্রকাশিত: ১৩:১২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

একজন রকস্টারের স্বপ্ন ও ব্যান্ডফেস্ট

বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীত নিয়ে দুই কলম লিখলে শুরুটা করতে হয় আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে। বলতে বলতে দুই বছর হয়ে গেল আইয়ুব বাচ্চু রুপালি গিটার ফেলে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কিন্তু তার অজ¯্র এবির তৈরি করা গান শ্রোতাদের সবসময় মোহিত করছে। আসলেই বড় অবেলায় চলে গেছেন এই কিংবদন্তি। বেঁচে থেকে শুধু যে কেবল নতুন নতুন গান গেয়ে দর্শক মাতিয়েছেন তা কিন্তু নয়। আইয়ুব বাচ্চু স্বপ্ন দেখতেন ব্যান্ডসঙ্গীত নিয়ে। জীবদ্দশায় এক অনুষ্ঠানে তার একটি স্বপ্নের কথা বলেছিলেন আর তা হলো অন্যান্য ফেস্টের মতো ব্যান্ড ফেস্টের আয়োজন। তার সেই স্বপ্নের পথ ধরে গত পাঁচ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যান্ড ফেস্ট। গত পহেলা ডিসেম্বর ছিল এই ফেস্টের ষষ্ঠ আসর। অনুষ্ঠিত হয় চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে। এই উৎসবে অংশ নেন দেশের নাম করা সব ব্যান্ড দল। এবারের আয়োজন থেকে ঘোষণা আসে আসছে বছর থেকে দেয়া হবে আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে ‘রুপালি গিটার পদক’ নামে বিশেষ সম্মাননা। এই তথ্যের উল্লেখ এই কারণে যে একজন রকস্টারের স্বপ্ন এবং উদ্যোগে কিভাবে একটা বিষয় ধীরে ধীরে সার্বজনীনতার রূপ পায়। ভালবাসার বিষয়ের ওপর কতটা বিশ্বাস এবং প্রেম থাকলে এমন স্বপ্নবাজ হওয়া যায়। এবি সম্পর্কে একটা স্মৃতিকথা না বলেই নয়। জীবদ্দশায় একাধিকবার তার কনসার্টে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে আমাদের দেশে ব্যান্ডসঙ্গীত সার্বজনীন রূপ পায়। সে সময় বয়সে কিশোর হলেও আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল বলতে গেলে সমানে সমান। মনে হতো ব্যান্ড এলআরবি বুঝি আমাদের জন্যই কেবল মিউজিক তৈরি করছে। বছর ১৫ আগের কথা ধানম-ি রবীন্দ্র সরবরে মাদকবিরোধী কনসার্টে গাইবেন ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু। বন্ধু মারফত খবর পেলাম। সামনের সারিতে দাঁড়ানোর সুযোগ রেখে ফোন করল। দ্রুত চলে এলাম কনসার্ট প্রাঙ্গণে। তখন কেবল নবীন শিল্পীরা স্টেজে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসব অনুষ্ঠানে যেতে ভীষণ উত্তেজনা কাজ করতে বিশেষ করে যখন শুনতাম যে স্টেজে এলআরবি, নগর বাউল, মাইলস, সোলস, ওয়ারফেজ, দলছুট কিংবা আজম খানের ব্যান্ড উচ্চারণ মঞ্চ মাতাবেন সে সবের অনুভূতি এই বয়সে এসে ভাষায় ব্যক্ত করার শব্দ আমার ভা-ারে আপাতত নেই। সময়ের অল্প ব্যবধানে সেসব এখন রূপকথার মতো মনে হয়। অনেক কিছুর সঙ্গে কনসার্টের জৌলুস ও বুঝি হারতে বসেছে। ব্যান্ড সঙ্গীতের ভেতর তারুণ্যে একটা উন্মাদনা সব উপলব্ধি করে এসেছি। এখন সেই উন্মাদনা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। তরুণদের মাতিয়ে রাখার মতো সেই কোলাহলপূর্ণ ব্যান্ডসন্ধ্যা সচরাচর দেখা যায় না। তারপরও উৎসব প্রিয় জাতি হিসাব ব্যান্ড ফেস্টের সময় এবং ব্যাপ্তি বাড়লে আইয়ুব বাচ্চুর মতো লিজেন্ডদের তৈরি করা পথটা আরও লম্বা হবে। এবারের ফেস্টে অংশ নিয়েছে ১৮টি ব্যান্ড দল। এরমধ্যে তালিকায় আছে এলআরবি, ফিডব্যাক, অবসকিওর, আর্ক, ভাইকিংস, ওয়ার সাইট, ধ্রুবতারা, দলছুট, শিরোনামহীন, পার্থিব, আরবোভাইরাস, মেকানিক্স, হৈচৈ, সিম্পনি, জলের গান, ব্ল্যাক মুন, তীরন্দাজ ও মেট্রিক্যাল নামের দল। এই দলগুলো দর্শক মাতিয়ে আবারও আইয়ুব বাচ্চু এবং তার অবদানের কথা মনে করে দেয়। সব্যসাচী দাশ
×