ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ জিততে না পারলে বিদায় নিশ্চিত

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

আজ জিততে না পারলে বিদায় নিশ্চিত

স্পোর্টস রিপোর্টার, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে ॥ বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে যারা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই এই বিষয়ে একমত হবেন যেÑ গত এক বছরে অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আর চমৎকার কুশলী এক ব্রিটিশ কোচ পেয়েছে লাল-সবুজরা, যার নাম জেমি ডে। ত্রয়োদশ এসএ গেমস ফুটবলে ভারত না থাকায় বাংলাদেশই দীর্ঘ নয় বছর পর এই ইভেন্টে দ্বিতীয়বারের মতো স্বর্ণজয় করতে যাচ্ছে, এমনটাই ধারণা ছিল ফুটবলামোদীদের। কিন্তু তাদের সেই ধারণায় চিড় ধরেছে ইতোমধ্যেই। কেননা প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ ১-০ গোলে হেরে গেছে দুর্বল ভুটানের কাছে। এই আসরে এই প্রথম ভুটানের কাছে হারের তেত স্বাদ পেল তারা। এটাকে যদি অঘটন বলা হয় তাহলে তো তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্যই জেতার কথা। কিন্তু সে ম্যাচেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি। মালদ্বীপের সঙ্গে ড্র করে ১-১ গোলে। দুই ম্যাচে একটিও গোল করতে পারেনি বাংলাদেশ। মালদ্বীপের সঙ্গে খেলতে গিয়ে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে একটি গোল আত্মঘাতী হিসেবে উপহার পেয়েছিল। রাউন্ড রবিন লীগে ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে তলানিতে। শীর্ষ দুই দল খেলবে ফাইনালে। বাংলাদেশ ফাইনালে উঠবে, সেই সম্ভাবনা এমনিতেই ক্ষীণ। তার ওপর আজ বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৫টায়) দশরথের রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে যদি পয়েন্ট হারায় তাহলেই এই আসর থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে বাংলাদেশের। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করেই কেন বিবর্ণ-নিষ্প্রভ হয়ে গেল বাংলাদেশ ফুটবল দল? এর রহস্যটা কী? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা করা হচ্ছে। রীতিমতো ধুয়ে দেয়া হচ্ছে ফুটবলারদের। বাদ পড়ছেন না বাফুফের হর্তাকর্তারাও। ফেসবুকে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ‘অতীতে দেখা গেছে প্রতিটি ম্যাচেই বাংলাদেশ ফুটবলাররা জানবাজি লাগিয়ে খেলেছেন। অথচ এবার দেখা যাচ্ছে নেপালে তারা যেন পা বাঁচিয়ে খেলছেন। সিরিয়াসনেস বলতে কিচ্ছু নেই। এর কারণ একটাই হতে পারে। আর তা হলো ঘরোয়া ফুটবলের মৌসুম শুরু হচ্ছে অচিরেই। ক্লাব থেকে কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেয়া ফুটবলাররা ইনজুরিতে পড়ার ঝুঁকি নিতে চাননি। সেক্ষেত্রে তাদের আগেই ক্লাব কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। এ জন্যই এসএ গেমসে দলের এই দুরবস্থা। ক্লাব আগে না দেশ আগে?’ ফেসবুকারদের এসব অভিযোগ একেবারে উড়িয়েও দেয়া যাচ্ছে না। কেননা প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে গোলটি হজম করে তাতে ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের নিষ্ক্রিয়তা ছিল রহস্যজনক। দ্রুতগতিতে বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া চেনচো গেইলশেনকে আটকানোর কোন চেষ্টাই করেননি তিনি। ফলে সহজেই বক্সে ঢুকে গোল করেন চেনচো। মঙ্গলবার বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ম্যাচে মালদ্বীপ যে গোলটি করে সমতা আনে সেই গোলটিও ছিল সন্দেহজনক। লাইনে থেকেও বলটি গ্রিপে নিতে পারেননি গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। ফেসবুকারদের অভিযোগগুলো কিন্তু আসলে নতুন কিছু নয়। অতীতে যতবারই জাতীয় দল জঘন্য খেলেছে, ততবারই এমন অভিযোগ উঠেছে। গত ১৫ অক্টোবর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারতকে ১-১ গোলে রুখে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সেই বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ ফুটবলারই এসএ গেমসের বর্তমান দলের সদস্য। সেই তাদেরই পারফর্মেন্স এখন বিবর্ণ কেন? আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ফেডারেশন কাপ দিয়ে শুরু হচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসুম। এটা ভালভাবেই অবগত ক্লাব কর্মকর্তারা। দল গঠন করতে মৌসুমের জন্য বেশিরভাগ ক্লাব কোটি টাকার বেশি খরচ করে। আর ফুটবলারদের উপার্জনের একমাত্র উৎসই হলো লীগ ফুটবল। সেই লীগের আগে যদি তারা চোট পান, তাহলে গোটা মৌসুমটাই নষ্ট হতে পারে; তাতে ক্লাব যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি সেই ফুটবলারও অর্থনৈতিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হতে পারেন। এ জন্যই ক্লাবকর্তারা ফুটবলারদের সাবধান করে দেন, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে কোনভাবেই ইনজুরিতে পড়া চলবে না ... এমনটাই ধারণা ফুটবলপ্রেমীদের। বসুন্ধরা কিংস এসএ গেমস উপলক্ষে জাতীয় দলের ফুটবল ক্যাম্প শুরুর আগে নাটকীয়ভাবে তাদের আট ফুটবলারকে ছাড়তে চায়নি। এ জন্য বাফুফে বাধ্য হয়ে ক্যাম্প শুরুর তারিখ পিছিয়ে দেয়। অনেক চেষ্টা করেও কিংসকে রাজি করাতে পারেনি বাফুফে। পরে দুইপক্ষের আলোচনার পর অনেক পরে ফুটবলার ছাড়তে রাজি হয় কিংস কর্মকর্তারা। এরপর ২৭ নবেম্বর নেপালে আসে ফুটবল দল। কিন্তু ওইদিন দলের সঙ্গে যোগ দেননি কোচ জেমি ডে। পরদিন আসেন তিনি। ক্লাবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছাড়াও ফুটবলারদের নেপাল পাঠানো নিয়েও ঝামেলা করেছিল বাফুফে। বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনকে (বিওএ) দিয়ে দু’বার টিকেট কাটিয়েও তা বাতিল করে তারা। গেমস নিয়ে বাফুফের খামখেয়ালিপনা শুরু তখন থেকেই। এর প্রভাবই হয়তো পড়েছে মাঠের লড়াইয়ে।
×