ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয়ার ইনজুরিতে ফস্কে গেল স্বর্ণ

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রিয়ার ইনজুরিতে ফস্কে গেল স্বর্ণ

স্পোর্টস রিপোর্টার, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে ॥ আগেরদিনই স্বর্ণজয়ের সাফল্যে হেসেছিলেন মারজান আক্তার প্রিয়া। মেয়েদের কারাতেতে ব্যক্তিগত কুমিতে মাইনাস ৫৫ কেওজন শ্রেতে সোনা জিতে হাসিয়েছিলেন লাল-সবুজের বাংলাদেশকে। বুধবারও একই কীর্তি গড়তে পারতেন, তবে এককভাবে নয়, দলীয়ভাবে, কিন্তু হতচ্ছাড়া ইনজুরিতে পড়ে গেলেন। গুরুতর আহত হন। জরুরীভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। তবে চোট পেলেও ঠিকই দলকে ফাইনালে ওঠাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাকে ছাড়াই দল ফাইনালে খেলে। কিন্তু ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে (সেমিতে শ্রীলঙ্কাকে একই ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ) হেরে গিয়ে রৌপ্যপদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। অনেকেই এতে আক্ষেপ করে বলেছেন, ফাইনালে যদি প্রিয়া খেলতে পারতেন (ফাইনালে প্রিয়ার পরিবর্তে খেলেন নাঈমা খাতুন), তাহলে নিশ্চয়ই বাংলাদেশ স্বর্ণ জিততে পারত। বুধবার দুপুরে কাঠমান্ডুর ললিতপুরের সাতদোবাদতো স্পোর্টস কমপ্লেক্স। মহিলা কারাতেতে দলগত কুমির ইভেন্টের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি। লাল-সবুজবাহিনীর কারাতেকারা ছিলেন হুমায়রা আক্তার অন্তরা, মারজান আক্তার প্রিয়া এবং মাউনজেরা বর্ণা। প্রথম ম্যাটে নামেন বন্যা। তিনি চোট পেলেও ৮-৪ পয়েন্টে ম্যাচ জিতে যান। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নামেন প্রিয়া। তার প্রতিপক্ষ ছিলেন শ্রীলঙ্কার বান্দারা। তিনি প্রথমইে প্রিয়ার পেটে তীব্র ঘুষি মারেন। ঘুষির তীব্রতায় ম্যাটে লুটিয়ে পড়েন প্রিয়া। চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। খেলা শুরু হতেই বান্দারা এবার প্রিয়ার মুখে পাঞ্চ করেন। এবার রক্তাক্ত হন প্রিয়া। তার ঠোঁট কেটে যায়। ফলে আবারও তাকে চিকিৎসা নিতে হয়। ওই সময় বান্দারা এগিয়ে ছিলেন ১-০ পয়েন্টে। এদিকে প্রথম রাউন্ড শেষ হতে সময় বাকি ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ড। চিকিৎসা নিয়ে আবারও ম্যাটে ফিরে আসেন প্রিয়া। এবার কোন বিপত্তি ছাড়াই অনেকক্ষণ লড়ে যান। এরপরই আবারও ঘটে বিপত্তি। বান্দারার একটি আঘাত তার মাথায় লাগে। ম্যাচ শেষ হতে তখনও ৪৭ সেকেন্ড বাকি। প্রিয়া তখন ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না, রীতিমতো টলছিলেন। এদিকে রেফারির সঙ্কেত পেয়ে মেডিক্যাল টিম ফের ম্যাটে আসে। তারা প্রিয়ার প্রেশার মাপার পাশাপাশি তার ঠোঁটে আইস ব্যাগ লাগিয়ে পরিচর্যা করেন। কিন্তু তারপরও প্রিয়া উঠে দাঁড়াতে পারছিলেন না। তাকে মেডিক্যাল টিম দাঁড়াতে সাহায্য করে। উঠে দাঁড়িয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন প্রিয়া। তখন বাংলাদেশ শিবিরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। উপস্থিত ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেও প্রিয়ার জ্ঞান ফেরাতে পারেননি। ফলে তখন জরুরীভিত্তিতে এ্যাম্বুলেন্সে করে প্রিয়াকে ভেন্যুর সঙ্গেই অবস্থিত ব্লু ক্রস হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা করে তাকে সেখান থেকে একটি সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্লু ক্রস মেডিক্যালের ডাক্তার, নিউরোসার্জন ডাঃ অভিষেক চতুর্বেদী জানান, ‘প্রিয়া মাথায়, গাল আর ঘাড়ের মাঝামাঝি, পেটে ও ঠোঁটে আঘাত পেয়েছে। এখন প্রিয়া আশঙ্কামুক্ত।’ বাংলাদেশের আরেক কারাতেকা আবিদা সুলতানা আভা জানান, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় বাউটের খেলা। প্রথমটি খেলেছে বর্ণা, দ্বিতীয়টি ছিল প্রিয়ার। শ্রীলঙ্কার প্রতিদ্বন্দ্বিরা বেশ জোরেই আক্রমণ করেছিল। হিটগুলো ভয়ানকই ছিল। প্রথমটি বাম কানের পিছনে লাগে এর আগের কিকটি লাগে ডান পাশের চোয়ালের নিচে। তখনই সে তাল সামলাতে পারেনি। ইমার্জেন্সি ডাক্তার প্রথমে প্রেশার মাপার পর ইসিজি করেছে। প্রিয়া বলছিল তার ঘাড়ের পিছনে ব্যথা করছে। ডাক্তার একটা পেইন কিলার দিয়েছেন এবং সিটি স্ক্যান করতে বলেছেন।’ মঙ্গলবার প্রিয়া যে নৈপুণ্য দেখিয়ে স্বর্ণ জিতেছিলেন, বুধবারও যদি সেই নৈপুণ্য দেখাতে পারতেন এবং চোট না পেয়ে ফাইনালে খেলতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশ যে জিতেও যেতে পারত, আরেকটি স্বর্ণসাফল্যের আনন্দে ভাসতে পারত, এমনটাই মনে করে আক্ষেপে পুড়ছেন বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদরা।
×