ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাণিতিক পরিসংখ্যান দিয়ে নয়, পার্বত্যবাসীদের জীবনযাত্রায় চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিফলন দেখতে চাই। ২২ বছর পরও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আশাহত হলেও আমরা আরও আশাবাদী হতে চাই। শান্তিচুক্তি করে অত্যন্ত সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি নিঃসন্দেহে আন্তরিক প্রয়াস ছিল, অগ্রগতিও হয়েছে। কিন্তু আমরা অর্জন করি, অর্জন ধরে রাখতে পারি না। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আন্তরিক রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বছরপূর্তি উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন বনাম পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের কো-চেয়ার এ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতি এ্যাসোসিয়েশন ফল ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন আয়োজিত সংলাপে প্যানেল আলোচক ছিলেন বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মিজানুর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা , জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা এবং লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এএলআরডির চেয়ারপার্সন খুশী কবির। বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক বলেন, ২২ বছর পরও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আশাহত হলেও আমরা আরও আশাবাদী হতে চাই। ২২ বছর পরও চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলতে হবে ১৯৯৭ সালে তা ভাবিনি। এটি আবার গভীর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর কত বছর চলবে? চুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট শান্তির জায়গায় আবার অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পাচ্ছি এবং অনেক মায়ের কোল খালি হচ্ছে। প্রত্যাশিত মাত্রায় চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা আশাবাদী মানুষ। আশা করতে করতে ২২ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ীদের বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হবে, আমরা যেন জিয়া-এরশাদের আমলে চলে গেছি। শান্তি চুক্তির আগে এবং পরের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টে গেছে। তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি করে অত্যন্ত সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি নিঃসন্দেহে আন্তরিক প্রয়াস ছিল। বড় অগ্রগতিও হয়েছে। কিন্তু আমরা অর্জন করি, অর্জন ধরে রাখতে পারি না। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আন্তরিক রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন রাশেদ খান মেনন। চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় অভিমানের সুরে ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ২২ বছরে চুক্তি নিয়ে নানা তালবাহানা দেখতে দেখতে তিক্ত অভিজ্ঞতা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে বলতে, লিখতে আর ভাল লাগে না। তিনি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টি দেশবাসী জানে না। পার্বত্যাঞ্চলের স্বকীয় সত্তার ওপর বিরামহীন আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ীদের এড়িয়ে শুধুমাত্র সেটেলার বাঙালীদের স্বার্থরক্ষায় মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশনার কপি দেখিয়ে তিনি বলেন, যেখানে পাহাড়ীদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে চলছে অনেক বৈষম্যমূলক কার্যক্রম, সেখানে অলিখিত কত বৈষম্যমূলক নিপীড়ন চলতে পারে তা ভাবতেই পারছেন। নানা দমন নিপীড়নে পাহাড়ীদের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে পার্বত্য চুক্তি অবাস্তবায়িত রেখে দেশের প্রত্যাশিত উন্নয়নের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। গাণিতিক পরিসংখ্যান দিয়ে শান্তিচুক্তির বাস্তবায়িত অংশসমূহ পরিমাপ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, চুক্তির মূল বিষয়বস্তু অবাস্তবায়িত রেখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ বাস্তবায়ন করে চুক্তি বাস্তবায়নের শতাংশ হিসাব করাটা অর্থহীন। ভূমি মালিকানা বুঝিয়ে দিলেই চুক্তির অনেক অংশ এমনিতেই বাস্তবায়িত হয়ে যাবে।
×