ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের বোলিং এত খারাপ

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

পাকিস্তানের বোলিং এত খারাপ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে ভারত যদি হয় ব্যাটসম্যান জন্মের আতুরঘর, তবে পাকিস্তান পেস বোলার তৈরির কারখানা। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, এমনকি ভারতকেও দীর্ঘসময় দ্রুতগতির বোলিং নিয়ে ভুগতে হয়েছে, কিন্তু পকিস্তানকে নয়। যুগে যুগে ইমারন খান, ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আকতারে মতো বিশ্বকাঁপানো সব পেসারের আবির্ভাব হয়েছে দেশটিতে। বিভিন্ন কারণে মাঠ ও মাঠের বাইরে হয়তো দলটিকে ভুগতে হয়েছে, তাই বলে এবারের অস্ট্রেলিয়া সফরের মতো এত দুর্বল বোলিং আর কখনই দেখা যায়নি। মোহাম্মদ আমির টেস্ট থেকে অবসর নেয়ায় সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করে। ‘পাকিস্তানের মতো এত জঘন্য বোলিং আমি আমার জীবনেও দেখিনি’Ñ রিকি পন্টিং কি বাড়িয়ে বলছেন? সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, দুটি ম্যাচে ইনিংস হার, অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামাতে পারেনি সফরকারী বোলাররা। প্রতিপক্ষের ৪০ উইকেটের মাত্র ১৩টিই নিতে পারেন তারা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট নেয়া শাহিন আফ্রিদিকে দেখে মনে হয়েছে, নাহ্ দলটিতে পেসার বলে কেউ একজন আছেন। অথচ অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসার মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্সের শিকার সংখ্যা ৩২। ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টে তাও অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করতে পেরেছিল পাকিস্তানের বোলাররা। এ্যাডিলেডে গোলাপি বলের ডে-নাইট টেস্টে সেটাও পারেনি। একমাত্র ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে তোলে ৫৮৯ রানের পাহাড়। ডেভিড ওয়ার্নার একাই করেন অপরাজিত ৩৩৫ রান। ১৬২ রান করেন মার্নাস লাবুশেন। পাকিস্তানী বোলারদের মধ্যে উইকেট নিতে পারেন শুধু শাহিন শাহ আফ্রিদি। এই পেসার অস্ট্রেলিয়ার পতন হওয়া ৩ উইকেটের সবকটিই নেন ৮৮ রান দিয়ে। অন্য দুই পেসার মোহাম্মদ আব্বাস ২৯ ওভারে ১০০ ও অভিষিক্ত মোহাম্মদ মুসা ২০ ওভারে দেন ১১৪ রান। লেগস্পিনার ইয়াসির শাহ তো টানা দ্বিতীয় টেস্টে রান দেয়ার ডাবল সেঞ্চুরি করতে যাচ্ছিলেন। ৩২ ওভারে তিনি দেন ১৯৭ রান, ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি। দুই ম্যাচে ৮০.৪ ওভারে ৪০২ রান দিয়ে ইয়াসির উইকেট পান মাত্র ৪টি। সফরকারীদের এমন জঘন্য বোলিং দেখে হতাশ সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পান্টিং বলেন, ‘পাকিস্তানের বোলাররা খুব দুর্বল। টেস্টে কোন দলের বোলিং আক্রমণ হওয়ার ক্ষেত্রে ওরা ভয়াবহ। আমাদের দেশে খেলতে আসা কোন দলের এত বাজে বোলিং আক্রমণ দেখেছি কি না মনে পড়ছে না।’ পন্টিং পাকিস্তানের দল নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। প্রথম টেস্টে অভিষেক হয়েছিল ১৬ বছর বয়সী পেসার নাসিম শাহর। প্রস্তুতি ম্যাচের মতো প্রথম টেস্টেও গতির ঝড় তুলে সবার নজর কাড়েন নাসিম। কিন্তু নাসিমের জায়গায় এ্যাডিলেডে অভিষেক হয় ১৯ বছর বয়সী মুসার। পন্টিং মনে করেন, মুসা এখনও টেস্টে বল করার মতো পরিণত হয়ে ওঠেননি, ‘আমি তো বুঝতেই পারছি না যে, কেন ১৬ বছরের নাসিমকে এখানে খেলানো হলো না। পাকিস্তান খেলিয়েছে মুসাকে, যে এর আগে মাত্র সাতটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছে। ওকে তো আমার টেস্ট ম্যাচের বোলার বলেই মনে হচ্ছে না’- বলেন অস্ট্রেলিয়াকে দু’দুটি বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক। সফরে পাকিস্তান তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারার পর দুটি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জায় পড়ে। ব্রিসবেনে ইনিংস ও ৫ রানের পর এ্যাডিলেডে ডে-নাইট টেস্টে আজহার আলিদের হার ইনিংস ও ৪৮ রানে। হোয়াইটওয়াশের পথে লজ্জার হারের সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় নিজেদের কলঙ্কিত ইতিহাসটাকে আরও দীর্ঘ করে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিরা। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টানা ১৪ টেস্টে হারল পাকিস্তান। গড়ল লজ্জার রেকর্ড।
×