ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রদের সব দাবি পূরণ হলো

বুয়েটে রাজনীতি ও র‌্যাগিংয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি বহিষ্কার

প্রকাশিত: ১১:১২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

বুয়েটে রাজনীতি ও র‌্যাগিংয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি বহিষ্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের পর আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে র‌্যাগিং ও সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির জন্য শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। র‌্যাগিংয়ের কারণে কোন ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এছাড়া সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির জন্যও আজীবন বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে। এদিকে এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ তিনটি দাবিই পূরণ হলো। এর ফলে দুই মাস ধরে চলা অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে বলে আশা করছেন সকলেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোন মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাংগঠনিক রাজনীতিতে কারও সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ পেলে, রাজনৈতিক সংগঠনের পদে থাকলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে মিছিল, মিটিং, পোস্টার টাঙ্গানোর মতো রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করলে রাজনৈতিক কর্মকা-ে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে মাত্রা অনুযায়ী সতর্ক করে দেয়া, জরিমানা করা, সাময়িকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে। র‌্যাগিংয়ের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে কয়েক ধাপে। কোন ছাত্রের মৃত্যুর শাস্তি বুয়েট থেকে বহিষ্কার ও থানায় মামলা দায়ের। কোন ছাত্র গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে। মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা এবং সাময়িক মানসিক ক্ষতিসহ এ-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সতর্কতা, জরিমানা, হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার বা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত রাখা। এ ধরনের অপরাধীকে শিক্ষা জীবনে ফিরতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউন্সেলিং করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে র‌্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের এবং সাংগঠনিক রাজনীতির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িতদের অভিযোগসমূহ মূল্যায়ন ও শাস্তি নির্ধারণ বিষয়ে গঠিত কমিটির রিপোর্টের আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে আবরারের মৃত্যু হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে বুয়েট। তাদের দাবি মেনে বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি নেয়া হয় আরও কিছু উদ্যোগ। শিক্ষার্থীদের ১০ দফার কয়েকটি মেনে নেয়ার পর গত ১৫ অক্টোবর মাঠের আন্দোলন থেকে সরে আসে বুয়েট শিক্ষার্থীরা। তবে মামলার অভিযোগপত্র ও অন্য দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেয়। পাঁচ সপ্তাহের তদন্ত শেষে পুলিশ গত ১৩ নবেম্বর ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিলে ক্লাসে ফেরার জন্য বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সর্বশেষ আরও তিনটি শর্ত দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিকে সকল দাবি পূরণকে স্বস্তি প্রকাশ করে দু’একদিনের মধ্যেই ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন। কথা বলেছেন শিক্ষকদের সঙ্গেও। র‌্যাগিং ও সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রেখে বিজ্ঞপ্তি জারির পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ও ক্লাসে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। আজ বুধবার শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন। মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলেছেন, ২৮ ডিসেম্বর থেকে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার সম্ভাব্য যে তারিখ দেয়া হয়েছে, সেই পরীক্ষায় বসার বিষয়টিকে শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক মনে করছেন।
×