ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে যে কারণে

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে যে কারণে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নগদ প্রণোদনা প্রদান ও টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে বৈধ পথে বাড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহ। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) রেমিটেন্স এসেছে ৭৭১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ৬২৯ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসাবে গত নবেম্বরের চেয়ে এ বছর নবেম্বরে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে। সদ্যসমাপ্ত নবেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার সমমূল্যের অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা, যা গত বছরের নবেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। গত বছর নবেম্বর মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১৮০ কোটি ৪ লাখ ডলার। ব্যাংকার ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে মূলত দুটি কারণে। একটি হলো- সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দুই শতাংশ প্রণোদনা দেয়া শুরু করেছে। অন্যটি হচ্ছে- ডলারের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এখন ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা দেশে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছরও বৈধ চ্যানেলে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। এদিকে রেমিটেন্সের প্রণোদনার অর্থ যেন সহজে প্রবাসীরা পান সেজন্য বিভিন্ন শর্ত শিথিল করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়, দেড় লাখ টাকার রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার কাগজপত্র লাগবে না। আগে ১,৫০০ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে বিনা প্রশ্নে প্রণোদনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের বুঝার সুবিধার্থে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি দেড় লাখ টাকার ওপরে রেমিটেন্সের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। তবে দেড় লাখ টাকা বা দেড় হাজার ডলারের বেশি রেমিটেন্স প্রেরণকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হয়। আগে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রেমিটেন্সের কাগজপত্রাদি দাখিলের সময়সীমা ছিল। এটি বাড়িয়ে ১৫ কার্যদিবস করা হয়েছে। জানা গেছে, দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংকের শাখায় পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতার দেয়া নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে হয়। রেমিটেন্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে ব্যবসার লাইসেন্সের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। চা?হিদা বাড়ায় চলতি বছ?রে সর্ব?শেষ ১৮ নবেম্বর টাকার বিপরীতে ডলারের দাম পাঁচ পয়সা বা?ড়ি?য়ে?ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হবে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা, যা এক বছর আগের তুলনায় দশমিক ৯২ টাকা বেশি। গত বছর একই সময়ে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৮৮ পয়সা। আমদানি দায় শোধ করতে এ হার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সাধারণ মানুষ, যারা ভ্রমণ করতে বিদেশ যাচ্ছেন, তাদের ডলার কিনতে হচ্ছে ৮৭ টাকার উপ?রে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) দেশে রেমিটেন্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠান, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ। রেমিটেন্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর আগে গত চার বছরের মধ্যে দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল। এ সময় রেমিটেন্স আসে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
×