ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার

মোবাইলে দৈনিক লেনদেন ১২০০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

মোবাইলে দৈনিক লেনদেন ১২০০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। গত অক্টোবরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন ছাড়িয়েছে এক হাজার ২১৮ কোটি টাকা। অক্টোবর শেষে দেশে গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার। মোবাইল আর্থিক হিসাব (এমএফএস) নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুত, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিটেন্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মোবাইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বা দ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ যুক্ত হচ্ছে। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। জানা যায়, দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে অক্টোবর মাস শেষে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অক্টোবর মাসে মোবাইলের মাধ্যমে পারসন টু পারসন বা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে লেনদেন হয়েছে ৮ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। আগের মাস সেপ্টেম্বরে এই লেনদেন ছিল ৮ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একজন গ্রাহক হাবিবুর রহমান জানান, দেশের সুপারশপগুলোতে এখন মোবাইলের মাধ্যমেই লেনদেন বেশি হয়। বিকাশ ও রকেটসহ অন্যান্য ব্যাংক এখন ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশব্যাক অফার দেয়। এতে কেনাকাটার পাশাপাশি সাশ্রয়ও হয় কিছু টাকা। এসব লেনদেন ব্যক্তিগত হিসেবের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। পারসন টু পারসন পেমেন্টস (পি২পি) হলো একটি অনলাইন প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে অন্য ব্যক্তির এ্যাকাউন্টে ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তর করতে পারে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে মোট ১৬টি ব্যাংক। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৯০ জনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, অক্টোবরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৭৩ লাখ ৩০ হাজার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে আদান-প্রদান হয়েছে ১ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। উত্তোলন করেছে ১২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অক্টোবরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৮৬০ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে; যা আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় রেমিটেন্স এসেছে ২৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা; যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে রেমিটেন্স বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে মার্চেন্ট পেমেন্ট (কেনাকাটার বিল) করা হয়েছে ৪১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা; যা আগের মাসের চেয়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। তবে এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ১১ দশমিক ১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর সরকারী পেমেন্ট রেকর্ড পরিমাণে ১২ হাজার ৩৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারী খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার এ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচবারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন বা জমা করতে পারবেন। মাসে ২৫ বার সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুবারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারতেন একজন গ্রাহক। মাসে ২০ বারে এক লাখ টাকা ক্যাশ ইন করতে পারতেন তারা।
×