ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢামেক হাসপাতালের জাল সাটিফির্কেট চক্রের সদস্য এক ওয়ার্ড বয়কে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢামেক হাসপাতালের জাল সাটিফির্কেট চক্রের সদস্য এক ওয়ার্ড বয়কে গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি স্বনামধন্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। আর সেখানে কতিপয় চর্তুথ শ্রেনীর কর্মচারী , তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী, প্রশাসনিক বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা মিলে প্রতারক চক্রের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এরা জাল ও ভুয়া মেডিকেল সনদ প্রস্তুত, ছুটি, মেডিকেল লিভ কিংবা পুলিশি মামলায় ইনজুরি রিপোর্টের জন্য ভুয়া সনদ সরবরাহ করে আসছিল। সরবরাহ করা ভুয়া ও জাল সনদের বিপরীতে গুরুত্ব অনুযায়ী চক্রটি হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। সোমবার সুনির্দিষ্ট তথ্য ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢামেক হাসপাতালের নার্সিং কলেজের ভেতরের গ্যারেজ থেকে হাতেনাতে জাল জন্ম-মৃত্যু সনদ, নকল সিল ও ইনজুরি সনদ, স্ট্যাম্পসহ মোঃ আরিফ (৫০) নামে এক ওয়ার্ড বয়কে আটক করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব-১০ এর কর্মকর্তারা জানান, অল্প সময়ের মধ্যেই এই চক্রটি অর্থের বিনিময়ে জাল সনদ তৈরি ও সরবরাহ করত। ঢামেক হাসপাতালের শুধু ওয়ার্ডবয় নয়। এই চক্রের সঙ্গে হাসপাতালের অনেক কর্মচারী ও কর্মকর্তা জড়িত। এরা দীর্ঘদিন ধরে এ জালিয়াতি করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। র‌্যাব-১০ এর অভিযানের নেতৃত্বদানকারী মেজর মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে মূলত জালিয়াতি চক্রটির কাছে বিভিন্ন জাল সনদ ও ইনজুরি সার্টিফিকেটের চাহিদা যায়। তারা মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই জাল সনদ সরবরাহ করে। মেজর জাহাঙ্গীর জানান, পুলিশের যেকোনো মামলায় প্রতিবেদনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ইনজুরি সনদ দরকার হয়, যা নরমালি একটা অফিসিয়াল সিস্টেমের মধ্যে হাসপাতাল থেকে পেতে হয় এবং তা সময়সাপেক্ষ। এ সুযোগটি নিয়ে দালাল চক্রটি অল্প সময়ের ব্যবধানে জালিয়াতি চক্রটির কাছ থেকে মেডিক্যাল লিভের জন্য মেডিক্যাল সনদ, ইনজুরি সনদ সরবরাহ করত। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরও তারা জাল করত। তিনি জানান, মেডিকেল কলেজের মাধ্যমে যেকোনো প্রয়োজনে মেডিকেল সনদ নিতে গেলে সত্যতা থাকতে হয়, সময়ও লাগে। কিন্তু এ চক্রটি কেউ মারধরের শিকার হয়নি, ইনজুরি হয়নি কিন্তু তার ইনজুরি সনদ দরকার, তাদের জাল ইনজুরি সনদ সরবরাহ করে আসছে। যার ওপর ভিত্তি করে অনেকে ভুতুরে মামলাও দায়ের করছেন। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ এ চক্রের সাথে জড়িত কি না? কারণ ইনজুরি সনদসহ মেডিকেল সনদ-সংক্রান্ত যেকোনো ডকুমেন্ট পেতে হলে রেজিস্টার্ড বুক ও সিরিয়াল মেইনটেইন করতে হয়- এমন প্রশ্নের মেজর জাহাঙ্গীর জানান, ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত কি না তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে আটক মো: আরিফ ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়। তার সাথে আরও কয়েকজন জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে এ ব্যাপারে তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন এবং সত্যতা শিকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধেও তথ্য প্রমান সাপেক্ষে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মামলা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মৃত্যু সনদপত্র, ইনজুরি সাটিফির্কেটসহ বিভিন্ন সনদ সরবরাহকৃত রের্ডক রুম থেকে পেতে অনেক সময় লাগে। আর এটি কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের এক কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি এই চক্রের সঙ্গে হাত মিলে প্রশাসনিক বিভাগের ওই কর্মকর্তা ও এক ওয়ার্ড মাষ্টার বেপোরোয়া ভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। সম্প্রতি ওই প্রশাসনিক বিভাগের কর্মকর্তার বদলি আদেশ রহস্যজনক ভাবে আটকে যায়। সূত্রগুলো জানায়, তার মতো হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগে অনেক কমকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ রয়েছে। এরপরই তারা হাসপাতালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, রাজধানীতে ভুয়া সার্টিফিকেট বাণিজ্য একটি বিরাট একটি দালাল চক্র রয়েছে। এরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বৃহৎ মানবিক প্রতিষ্ঠান ঢামেক হাসপাতাল জাল বিস্তার করে রেখেছে। তিনি জানান, যে সব চিকিৎসকের স্বাক্ষরসহ সার্টিফিকেট জমা দেয়া হচ্ছে তার অধিকাংশ ভুয়া। আর এই ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়ার কারণে আদালতের কাছে বারবার চিকিৎসকদের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের সম্মান এখন হুমকির মুখে পড়েছে। সার্টিফিকেট নকল না আসল তা যাচাই করার কোন প্রতিষ্ঠান নেই জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (প্রসিকিউশ) এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক থেকে কোন মেডিকেল সার্টিফিকেট আনলেই সেটি সঠিক তা মনে করার কোন কারণ নেই। কারণ আদালতের কাছে জমা দেয়া অধিকাংশ মেডিকেল সার্টিফিকেট ভুয়া। অথচ ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেট বিরাট একটা দলিল। মেডিকেল সার্টিফিকেট আসল কি নকল তা যাচাই করে পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এব্যাপরে এডভোকেট খালেদ মাসুদ মজুমদার জানান, নারী নির্যাতন কিংবা যৌতুকের কিংবা মারামারি সংক্রান্ত কোন ফৌজদারি মামলা করতে হলে মেডিকেল সার্টিফিকেট অপরিহার্য। থানায় কিংবা আদালতে মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া কোন মামলা গ্রহণ করা হয় না। মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায় না। তিনি জানান, দীর্ঘ দিন যাবৎ এ পেশায় আছি। কোন মানুষকে ঘায়েল করতে বা ঝামেলায় ফেলার জন্য ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট এনে অহরহ থানায় এবং আদালতে মামলা হচ্ছে।
×