ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাম-বাংলার যাত্রাপালাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ॥ আমিনুর রহমান সুলতান

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

  গ্রাম-বাংলার যাত্রাপালাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ॥ আমিনুর রহমান সুলতান

ড. আমিনুর রহমান সুলতান। একাধারে কবি-প্রাবন্ধিক-গবেষক। বাংলা একাডেমির ফোকলোর উপবিভাগের উপপরিচালক। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সমসাময়িক বিষয় তার লেখার প্রেরণা। ‘বঙ্গবন্ধু গবেষক’ হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছেন। কবিতা ও গবেষণা নিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫। সম্প্রতি ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প সম্পর্কে নানামাত্রিক চিন্তা-ভাবনা করছেন। লিখেছেন দুটি মৌলিক যাত্রাপালা। আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ নামের একটি পালা মঞ্চায়ন হবে। এ উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পালার মঞ্চায়ন উদ্বোধন করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। নতুন এ যাত্রাপালা এবং বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে গুণী এ ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। আপনার রচিত ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ পালাটি মঞ্চে আসছে, আপনার অনুভূতি কেমন? আমিনুর রহমান সুলতান : যে কোন সৃষ্টিশীল কর্মের সফল রূপায়ণ দেখতে অনেকে দারুণ অপেক্ষায় থাকেন। যাত্রা কিংবা নাটক যাই বলি না কেন, দর্শকমন যদি জয় করা যায় তাহলে সেই সাফল্যের আনন্দ হয় একটু অন্যরকম। আপনার ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ যাত্রাপালা কোন্ পটভূমিকায় নির্মিত? আমিনুর রহমান সুলতান : সমগ্র বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই বাংলাদেশ, এই স্বাধীনতা প্রাপ্তি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক নেতৃত্বগুণে। এই যে নেতৃত্বদান এবং মহানায়কের জীবন ও সংগ্রাম এই যাত্রাপালায় যাত্রার আঙ্গিকে দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী আলবদর-রাজাকার-এসব ঘৃণ্য চরিত্রের মুখোশও উন্মোচন করা হয়েছে। এ যাত্রাপালায় কোন্ বিষয়কে তুলে ধরেছেন? আমিনুর রহমান সুলতান : এটি একটি ঐতিহাসিক যাত্রাপালা। নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ইংরেজ ও দেশীয় দালালদের যে ষড়যন্ত্র এই চিরপরিচিত কাহিনীর সঙ্গে নতুন আখ্যানটি এখানে যুক্ত হয়েছে, তা হলো ঐতিহ্যবাহী মসলিন রক্ষায় তাঁতি, ফকির ও সন্ন্যাসীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এ পালায় আমি দেখিয়েছি রক্তরাঙা পলাশীর বিয়োগান্তক পরিণতির পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল সন্ন্যাসী, ফকির ও তাঁতি সম্প্রদায়। বিশেষ করে মসলিন তৈরির তাঁতি। তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বেদনার বিস্তৃতি ঘটে বিদ্রোহে ও বিক্ষোভে। চম্পা বাঈ, শুভংকর, অঞ্জলী প্রভৃতি চরিত্রের মধ্য দিয়ে যা পরিস্ফুট হয়েছে। পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হয়ে ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ প্রদর্শনীতে দর্শক সমাগম কেমন হবে? আমিনুর রহমান সুলতান : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এখন প্রতি সন্ধ্যায় নতুন নাটক, নাটকের উৎসব, নাটকের সেমিনার লেগেই আছে। লোকে লোকারণ্য। তবে যাত্রার প্রতি দর্শকের একটা মজ্জাগত কৌতূহল রয়েছে। এ জায়গা থেকে আমরা সুধি দর্শকের উপস্থিতি আশা করতে পারি। বলতে চাই আপনারা আসুন, দেখুন। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় গ্রাম বাংলার যাত্রাপালাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নাগরিক সমাজের লেখক হয়েও পালা রচনায় উৎসাহী হলেন কেন? আমিনুর রহমান সুলতান : যাত্রার সঙ্গে আমার আশৈশব নিবিড় সম্পর্ক। আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। বাবা মরহুম আজিজুর রহমান ছিলেন যাত্রা ও মঞ্চাভিনেতা। তবে কখনও ভাবিনি এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে হবে। আমার লোকজ সংস্কৃতি বিষয়ক কার্যক্রম দেখে বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের বর্তমান সভাপতি মিলন কান্তি দে কয়েক বছর আগে আমাকে অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদকে ভূষিত করেন। যাত্রার প্রতি প্রীতি ছিল বাবার সূত্রে। আর দায়বদ্ধ হলাম মিলনদা’র সূত্রে। ওই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি যাত্রাপালা রচনায় আগ্রহী হয়ে উঠি। বাংলাদেশে কোন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার (মামুনুর রশীদ ছাড়া) কিংবা শিক্ষিত ব্যক্তিরা যাত্রাপালা রচনাকে একটা ‘বাজে কাজ’ বলে মনে করেন। এই মন মানসিকতা ও হীনম্মন্যতা রুখতেই আমার যাত্রাপালা লেখায় এগিয়ে আসা। এবার আরেকটি নতুন পালার আয়োজন শেষ করে এনেছি। এটি হচ্ছে পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেনের রূপকার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর জীবন ও সংসার নিয়ে। পালার নামকরণও করা হয়েছে ‘বলধা গার্ডেন’। বর্তমানে আপনার সাহিত্য বিষয়ক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই- আমিনুর রহমান সুলতান : কয়েকটি লোকগল্প নিয়ে আমার একটি গ্রন্থ আগেই প্রকাশ হয়েছে। সেই গল্পগুলোকে মোটিভ করে আধুনিক ফর্মে একটি কবিতার বই বের করেছি। এ বছরের গোড়ার দিকে প্রকাশিত হয়েছে ‘লোকগানে জনকের মুখ’ নামে একটি ভিন্নধর্মী গ্রন্থ। বাংলার জারিগান, কবিগান, বাউল গান, পুথিপাঠ, গম্ভীরা ও যাত্রাগানে আমাদের গ্রামগঞ্জে পড়ে থাকা লোককবিরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে বিচিত্র চিন্তাভাবনা করছেন, তার দেশপ্রেম ও মাহাত্ম্য নিয়ে লেখালেখি করছেন, সেসব না-জানা অধ্যায় এ বইয়ে উঠে এসেছে। বলতে পারেন, আমাদের সাহিত্য পরিম-লে এ ধরনের প্রয়াস এটাই প্রথম। ফোকলোর নিয়ে একটি পত্রিকা বের করছেন শোনা যাচ্ছে? আমিনুর রহমান সুলতান : হ্যাঁ দু’চার দিনের মধ্যেই এটি বের হচ্ছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী এর সম্পাদক। আমি নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এখানে একটি কথা বলতেই হয়, বাংলা একাডেমির ফোকলোর উপবিভাগ যথেষ্ট সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এর আগে ফোকলোর বিষয়ে কোন পত্রিকা প্রকাশ হয়নি। বর্তমান মহাপরিচালকের আগ্রহ ও উদ্যোগের ফলেই এ বছর এটা সম্ভব হচ্ছে। যার নামকরণ হয়েছে ‘বাংলা একাডেমির ফোকলোর পত্রিকা’। -সাজু আহমেদ
×