ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এইডস ॥ সতর্কতাই মুক্তির পথ

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

এইডস ॥ সতর্কতাই মুক্তির পথ

১ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব এইডস দিবস। এইচআইভি আক্রমণের চূড়ান্ত পরিণতি এইডস। এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার পর এইডসে আক্রান্ত হতে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা দেখে স্বাভাবিকভাবে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা যায়। শরীরের ওজন সহসা ১০ শতাংশ কমে যাওয়া, এক মাসের বেশি স্থায়ী জ্বর, ডায়রিয়া বা কাশি হওয়া, গায়ে ঈষৎ নীল এবং বেগুনি রঙের ফুসকুড়ি বা মুখ ও গলায় সাদা আবরণযুক্ত ক্ষত দেখা গেলে এইচআইভি জীবাণুর অস্তিত্ব আছে বলে ধরে নেয়া যায়। সভ্যতাবিনাশী এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে রক্ত আদান প্রদান এবং যৌন মিলনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অবাধ যৌনাচার প্রতিরোধ করতে পারলে এইচআইভি ভাইরাসের সংরক্ষণ এমনিতেই কমে যাবে। যৌন মিলনে কনডম ব্যবহার করলেও অনেকটা নিরাপদ হওয়া যায়। রক্ত আদান প্রদান ও অপারেশনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পূর্বে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে নিতে পারলে জীবাণু প্রতিরোধ করা সহজ হয়। এইডস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনেস্কোসহ অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংগঠন এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে পৃথিবীব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও ইতোমধ্যে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন আইন করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা সদর, মেডিক্যাল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল মিলে মোট ৯৭টি কেন্দ্রে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবাদ আছে ‘প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম।’ কিন্তু এইডসের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই একমাত্র পথ। অন্য অনেক সংক্রামক রোগের চেয়ে এইডস প্রতিরোধ করা সহজ। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা ও সতর্কতার মাধ্যমে এটি পতিরোধ করা যায়। এমন অনেক রোগ আছে, যা দ্বারা আমরা অনেক সতর্ক থাকার পরেও আক্রান্ত হতে পারি। যেমন, যক্ষ্মা। বাসে চলতে চলতে আপনার অজান্তে একটি ক্ষুদ্র মশা আপনার শরীরে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর জীবাণু ঢুকিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এইডসকে শুধু আপনার সতর্কতা ও জীবনযাপন অভ্যাসের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব। একটি সুখী পারিবারিক জীবন গড়ে তুলুন। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন। একে অপরকে গভীরভাবে ভালবাসুন এবং স্বামী-স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে দৈহিক মিলন থেকে বিরত থাকুন। অনিরাপদ দৈহিক মিলন থেকে বিরত থাকুন। দৈহিক মিলনের সময় কনডম ব্যবহার অভ্যাসে পরিণত করুন। মনে রাখবেন শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য নয়। এইডসসহ অনেক যৌন রোগ কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কোন অবস্থাতেই এইচআইভি পরীক্ষা না করিয়ে কোন রক্ত গ্রহণ করবেন না বা কাউকে নিতে দেবেন না। কখনই ব্যবহৃত সিরিঞ্জ এবং সুঁচ ব্যবহার করবেন না। আপনার রক্তের সংস্পর্শে আসতে পারে এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। যেমন- সেলুনে খুর বা অন্য কারও জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এ রকম ব্লেড ব্যবহার করবেন না। দাঁতের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, ছোটখাটো অপারেশনের যন্ত্রপাতি বিউটি পার্লারে নাক, কান ফোঁড়ানোর সুঁচ প্রভৃতি আপনার জন্য ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হোন যে সেটি সত্যিকারভাবেই এইচআইভি জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত এসব যন্ত্রপাতি নির্দিষ্ট নিয়মে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করলে বা ৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে তাপমাত্রায় ফুটিয়ে নিলে এইচআভি জীবাণুমুক্ত হয়। মাদক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। মাদক গ্রহণে একে অন্যের সিরিঞ্জ ব্যবহার এইডস সংক্রমণের একটি বড় কারণ। আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে যাতে সন্তান আক্রান্ত না হয় সে জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রসব করানো এবং সন্তানকে এইডস আক্রান্ত মায়ের দুধ না খাওয়ানো, এইচআইভি এইডস থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ উপায়।
×