ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলে লজ্জার হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

ফুটবলে লজ্জার হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

রুমেল খান, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে ॥ আগের চারবারের সাক্ষাতে তিনটিতেই জয়। ড্র একটিতে। এসএ গেমস ফুটবলে প্রতিপক্ষ ভুটানের বিরুদ্ধে বেশ সন্তোষজনক পরিসংখ্যানই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সোমবার এই পরিসংখ্যান হালনাগাদ করে দিল ভুটান। এসএ গেমস ফুটবলে তারা দারুণ এক জয় কুড়িয়ে প্রথমবারের মতো হারিয়ে দিল বাংলাদেশকে, ১-০ গোলে। কাঠমান্ডুর দশরথের রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশই হেসেখেলে জিতবে, এমনটাই অনুমেয় ছিল। কিন্তু সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিল ভুটান। যে আসরে ভারতের মতো শক্তিশালী দল ফুটবল নাম প্রত্যাহার করে নেয়, সে আসরে বাংলাদেশের তো অনায়াসেই স্বর্ণপদক জেতা উচিত। কিন্তু একি হলো? ভুটানের মতো দলের কাছে এমন লজ্জাজনক হার! এখন তো ফাইনালে ওঠাই মুশািকল হয়ে গেল! এর আগে ২০১৬ সালে ভুটানের কাছে যে ম্যাচে বাংলাদেশ ৩-১ গোলে হেরে প্রবল সমালোচিত হয়েছিল, সেটা ছিল এএফসি কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ। ওই কলঙ্কের কথা বাদ দিলে ভুটানের কাছে আর কোন পর্যায়েই হারেনি বাংলাদেশ, কি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ; কি এসএ গেমস ফুটবলে। অথচ সোমবার এসএ গেমস ফুটবলেই ভুটানের কাছে প্রথমবারের মতো হেরে লজ্জার সাগরে নিপতিত হলো জেমি ডের সুযোগ্য শিষ্যরা! গ্যালারিতে খেলা দেখতে আসা কিছু বাংলাদেশী দর্শক ক্ষোভে মন্তব্য করেন, ‘জঘন্য ফুটবল খেরেচে বাংলাদেশ। ভুটানের মতো দলের সঙ্গেও পারে না। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বিচার হওয়া উচিত। তিন কোন্ মুখে বলেন ২০২২ বিশ^কাপে বাংলাদেশ খেলবে। দুঃস্বপ্নের ম্যাচটি শেষে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের কোচ জেমি ডে বলেন, ছেলেদের পারফরম্যান্সে আমি হতাশ। কোন অর্ধেই তারা ভাল খেলেনি। গোলের সুযোগগুলো তারা ভালভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। এরকম ফলের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। সত্যিই হতাশ হয়েছি।ব্রিটিশ এই কোচ আরও বলেন, ‘ভুটানের সঙ্গে গত মাসে দুটি ম্যাচে জয় পেয়েছিলাম আমরা। যদিও তারা ভাল দল। কিন্তু আমাদের চেয়েও আজ তারা ভাল খেলেছে। এখন সামনের ম্যাচটি (প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ) আমাদের জন্য আরও কঠিন হবে। জীবন প্রথম অর্ধে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ড্রিবল করে একবারও সফল হননি। একাধিক ভুল পাস দিয়েছেন। বল নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত করতে পারেননি কয়েকবার। দুই দলই প্রথমার্ধে গতিময় ফুটবল খেলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ খেলে দুই উইং ব্যবহার করে, আর ভুটানের লক্ষ্য ছিল মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করে খেলা। দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর আগে বাংলাদেশ দলকে মাঠে কোন টিমি মিটিং করতে দেখা না গেলেও ভুটানকে দেখা গেছে। বরং বাংলাদেশের চেয়ে তাদেরকেই বেশি উজ্জীবিত মনে হয়েছে। ৬৫ মিনিটে গোল হয়। বাংলাদেশ নয়, গোলের দেখা যায় ভুটান। অনেকটা সময় চাপ সৃষ্টি করে খেলার পার অবশেষে গোলের সন্ধান পায় তারা। বা প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যায় ভুটান। এক সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে তড়িৎ গতিতে বল নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন বাংলাদেশের ত্রাস চেনচো। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাকে বাধা দেয়ার তেমন চেষ্টা করেননি। হয়তো ভেবেছিলেন পেছন থেকে ট্যাকল করলে চেনচো পড়ে গেলে নেপালি রেফারি নবীন্দ্র মহারজন পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে দিতে পারেন। বাংলাদেশী ডিফেন্ডারদের এই ইতস্তত ভাবকে কড়ায়-গন্ডায় কাজে লাগান চেনচো। বল নিয়ে দ্রুত গতিতে ঢুকে পড়েন। সামনে একমাত্র গোলরক্ষক জিকো। এদিকে বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে বাধা দিতে আসেন জিকো। কিন্তু তকে সেই সুযোগ আর দেননি ভুটানের রোনালদো খ্যাত চেনচো। বা পায়ের আলতো চিপে কোনাকুনিভাবে বলকে জালে পাঠিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে মেতে ওঠেন গোলের আনন্দে। এগিয়ে যায় ভুটান (১-০)। ইনজুরি সময়ে (৯০+১ মিনিট) গোল শোধের জন্য মরিয়া বাংলাদেশের শেষ প্রচেষ্টাও মাঠে মারা যায়। বদলী আরিফুর রহমানের গড়ানো ক্রস আরেক বদলী রাকিব হোসেন কাজে লাগাতে পারেননি বক্সের ভেতরে। এরপর রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে একরাশ হতাশা আর হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। আজ মঙ্গলবার একই ভেন্যুতে মালদ্বীপের মুখোমুখি হবে লাল-সবুজরা। * বাংলাদেশ দল ॥ আনিসুর রহমান জিকো, বিশ^নাথ ঘোষ, রহমত মিয়া, ইয়াসিন খান, জামাল ভুঁইয়া (অধিনায়ক), বিপলু আহমেদ (রাকিব হোসেন), সাদ উদ্দিন, নাবিব নেওয়াজ জীবন (মাহবুবুর রহমান সুফিল), রবিউল হাসান (আরিফুর রহমান), মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রিয়াদুল হাসান।
×