ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দীপু নাম্বার ওয়ান!

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

 দীপু নাম্বার ওয়ান!

রুমেল খান, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে ॥ প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাড়া জাগানো একটি উপন্যাস আছে। নাম ‘দীপু নাম্বার টু। ক্লাসে একই নামের এক ছাত্র থাকায় নতুন দীপুকে নাম্বার টু নামে শ্রেণীশিক্ষক পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশ জাতীয় তায়কোয়ান্দো দলেও দীপু নামের এক খেলোয়াড় আছেন। তার নামের সঙ্গে আর কারোর নামে মিল নেই। তবে সোমবার তিনি যে কীর্তির মালিক হয়েছেন, তাতে তাকে অনায়াসেই বলা যেতে পারে দীপু নাম্বার ওয়ান! ফুটবলে ভুটানের কাছে লজ্জা-হতাশার হারের দুঃখ ভোলার জন্য একটা সোনার পদকের ভীষণ প্রয়োজন ছিল সোমবার। সেই প্রয়োজনটা কি দারুণভাবেই না মিটিয়ে দিলেন দীপু চাকমা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক সাধারণ সৈনিক থেকে বনে গেলেন এসএ গেমসের সোনার পদকজয়ী গর্বিত এ্যাথলেট। কাঠমান্ডুর সাতদোবাদো তায়কোয়ান্দো হলে অনুষ্ঠিত পুরুষদের একক পুমসা উর্ধ-২৯ শ্রেণীতে ভারতের প্রতিযোগীকে হারিয়ে সোনার পদক পাওয়ার চিত্তসুখে আপ্লুত হন দীপু। রাঙামাটির ছেলে রাঙালেন কাঠমান্ডু। তাকে ইতোমধ্যেই অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি। এসএ গেমসে তায়কোয়ান্দোতে নয় বছর পর আবারও সোনা জিতলো বাংলাদেশ। ২০১০ আসরে ফারজানা শারমীন রুমি এবং শাম্মী আক্তার দুটি ¯^র্ণ এনে দিয়েছিলেন। এর আগে ২০০৬ আসরে কলম্বোতে মিজানুর রহমানের হাত ধরে এই খেলায় প্রথমবারের মতো স্বর্ণজয় করেছিল বাংলাদেশ। দীপু হলেন সার্বিকভাবে চতুর্থ এবং পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয় সোনাজয়ী। সোনাজয়ের পর কেমন ছিল দীপুর অনুভূতি? এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অন্যরকম এক অনুভূতি। চেষ্টা করেছি দেশকে কিছু দেয়ার জন্য। আত্মবিশ্বাস ছিল, তাই পেরেছি। দেশকে কিছু দিতে পারাটা অনেক গর্বের। এখন নিজেকে অনেক হাল্কা মনে হচ্ছে। অবশেষে দেশের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি। বড় ভাইয়ের আত্মত্যাগের মাধ্যমে তায়কোয়ান্দোতে আসা দীপুর। কাহিনীটা বেশ মজার-২০০১ সালের ঘটনা। রাঙামাটিতে তায়কোয়ান্দোর ওপর একটি ক্যাম্প হয়েছিল। বড় ভাই ফরম নিয়ে গিয়েছিলেন এই খেলাটি শিখবেন বলে। কিন্তু বাধ সাধলো হতচ্ছাড়া পরীক্ষা! ফলে পূরণ করতে পারেননি ফরম। তাই বলে ফরমটি কি নষ্ট করা হবে? মোটেও না। ভাইয়ের পরিবর্তে দীপুই ফরম ফিলাপ করে ভর্তি হন তায়কোয়ান্দোতে! যদিও মাঝে তায়কোয়ান্দো থেকে বিচ্ছিন্নই ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে চাকরিও হয়ে যায় তার। তাহলে আবার খেলাটিতে আবারও ফেরা হলো কিভাবে? এর গল্পটিও বেশ চিত্তাকর্ষক। ২০০৬ সালে কলম্বো এসএ গেমসে তায়কোয়ান্দো থেকে বাংলাদেশকে স্বর্ণপদক এনে দেন মিজানুর রহমান। কলম্বোর মাটিতে জাতীয় সঙ্গীত বেজেছিল। লাল-সবুজের পতাকা উড়েছিল। ওই দৃশ্য দেশে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন দীপু। দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। তাই ২০০৬ সালেই আবারও তায়কোয়ান্দোতে ফিরে আসেন (ভাগ্যিস এসেছিলেন)! এ পর্যন্ত শুনে পাঠকরা নিশ্চয়ই প্রশ্ন তুলতে পারেন, তাহলে গত ২০১০ ও ২০১৬ এসএ গেমসে কেন কোন পদক ছিল না দীপুর? এরও ব্যাখ্যা আছে। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এসএ গেমস। ক্যাম্পে থাকলেও ঘরের মাঠে দীপু খেলতে পারিনি জাতীয় দলে না থাকায়। ২০১৬ সালেও ক্যাম্পে ছিলেন। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে পুমসেতে অনুশীলন শুরু করলেও তখন এই ইভেন্টটি ছিল না। এই স্বর্ণপদক তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানাকে উৎসর্গ করছেন ৩১ বছর বয়সী দীপু। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, বেশ কয়েকবার ইনজুরিতে পড়েছিলাম। বার বার রানা স্যারই আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। আমাকে উদ্দীপ্ত করেছেন। আগামীতে দেশের জন্য আমি আরও পদক জিতে আনতে চাই। বাংলাদেশ অলিম্পিকের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা জানালেন তায়কোয়ান্দো থেকে আরও পদক পাওয়ার আশাবাদ, আমি সবসময় আশাবাদী। ইনশাল্লাহ তায়কোয়ান্দো থেকে আমাদের আরও পদক থাকবে।
×