ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দিয়ে বোলার ইয়াসিরের সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

 ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দিয়ে বোলার ইয়াসিরের সেঞ্চুরি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায় বলেই যুগে যুগে ক্রিকেটের আবেদন এত বেশি। ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে এ্যাডিলেডে ডে-নাইট টেস্টে অস্ট্রেলিয়াই যে জিততে যাচ্ছে সেটি অনুমেয়। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। ইনিংসহার এড়াতেই সফরকারীদের চাই আরও ২৪৮ রান। তৃতীয়দিন শেষে শান মাসুদ ১৪ ও আসাদ শফিক ৮ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন। কিন্তু রবিবার এ্যাডিলেডের গল্পটা ছিল অন্যরকম। আগেরদিনই ৯৬ রানে ৬ উইকেট হারানো পাকিরা প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৫৮৯ রানের জবাবে ৩০২ রান করল কিভাবে? আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ইয়াসির শাহ। আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া কোন ধরনের ক্রিকেটেই যার ন্যূনতম ফিফটি ছিল না সেই তিনি খেলেছেন ১১৩ রানের ইনিংস। ব্যাট হাতে রেকর্ডবইয়ের অনেক পসিংখ্যানই নাড়িয়ে দিয়েছেন এই সিরিজেই বল হাতে লজ্জায় পড়া এ পাকিস্তানী লেগস্পিনার। ম্যাচে ডেভিড ওয়ার্নারের ম্যারাথন ট্রিপল সেঞ্চুরি ছাপিয়ে এখন আলোচনায় ইয়াসির। অথচ সেঞ্চুরি পাওয়ার কথা ছিল কার? ৯৬ রানে ৬ উইকেট হারানো বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত পাকিস্তানের হয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন দলটির সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম। আউট হয়েছেন ৯৭ রানে। যখন তিনি আউট হলেন পাকিস্তানের রান ৭ উইকেটে ১৯৪। সপ্তম উইকেট জুটিতে ইয়াসিরের সঙ্গে বাবর যোগ করেন ১০৫ রান। বাবর না পেলেও ইয়াসির ঠিকই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। কি অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? হতেই পারে! ব্যাটিং তো তার মূল কাজ নয়। এর আগে ৩৬ টেস্টে ৫৪ বার ব্যাটিংয়ে নেমে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন ৪২। সেটাও আগের টেস্টেই, বলতে গেলে শেষ ইনিংসে। সেই লেগস্পিনার ইয়াসির এ্যাডিলেডে এদিন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান বনে গিয়েছিলেন। নবম উইকেটে মোহাম্মদ আব্বাসের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়ার পথে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। স্বীকৃত ক্রিকেটেই এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। ৮৬ থেকে মিচেল স্টার্কের চার বলের মধ্যে দুটি চার হাঁকিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ৯৪-এ। এরপর এক-দুই করে এগিয়েছেন সেঞ্চুরির দিকে। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগে বেশ স্নায়ুর পরীক্ষাও দিতে হয়েছে তাকে। ৯৯ থেকে জশ হ্যাজলউডের টানা চার বলে রান নিতে পারেননি। পঞ্চম বলটা তুলে মেরেছিলেন। মিডঅনে অল্পের জন্য ক্যাচ নিতে পারেননি প্যাট কামিন্স। সিঙ্গেল নিয়ে ইয়াসির পেয়ে যান স্বপ্নের সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর তার উদযাপনটাও ছিল বাঁধনহারা। সেঞ্চুরির আগেই ড্রেসিং রুম থেকে মাঠের পাশে নেমে এসেছিল গোটা দল। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ২১৩ বলে ১৩ চারে ১১৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ইয়াসির। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আটে নেমে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার নজির খুব বেশি নেই। ইয়াসিরের আগে মাত্র চারজন তা করতে পেরেছেন। ১৯৫৫ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লেয়ারমন্তে দেপেয়জা, ১৯৬১ সালে সিডনিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই গ্যারি আলেকজান্ডার, ২০১১ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের ম্যাট প্রিয়র ও ২০১৭ সালে রাঁচিতে ঋদ্ধিমান সাহা। এ তালিকায় এবার নিজের নামটা যোগ করলেন ইয়াসির। টেস্টে সেঞ্চুরির মুখ দেখাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ব্যাটিং গড় ইয়াসিরের (১৪.০৮)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেসার জেরোম টেলরকে (১২.৯৬) টপকাতে পারেননি তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে ইয়াসিরের ব্যাটিং গড় (৩২.৫৭) অবশ্য এ সময়ের অনেক স্বীকৃত ব্যাটসম্যানের চেয়েও ভাল। অথচ ইয়াসিরের যে মূল কাজ বোলিংয়ে এই সিরিজেই লজ্জার রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ব্রিসবেনে ইনিংস ও ৫ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়া প্রথম টেস্টে ৪৮.৪ ওভার বল করে দিয়েছেন ২০৫ রান। ক্যারিয়ারে তিনবার দুই শ’র ওপরে রান দেয়ার ক্ষেত্রে সবার ওপরে তিনি। এই টেস্টে রেকর্ডটা আরও সমৃদ্ধ হয়নি মাত্র ৩ রানের জন্য, ৩২ ওভারে দিয়েছেন ১৯৭ রান। ব্যাটিং কিংবা বোলিং, দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যÑ এত বেশি রং বদলায় বলেই ক্রিকেট এত মজার। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস- ৫৮৯/৩ ডিক্লে : (১২৭ ওভার; ওয়ার্নার ৩৩৫*, বার্নস ৪, লাবুশেন ১৬২, স্মিথ ৩৬, ওয়েড ৩৬*; শহীন আফ্রিদি ৩/৮৮)। পাকিস্তান প্রথম ইনিংস- ৩০২/১০ (৯৪.৪ ওভার; মাসুদ ১৯, ইমাম ২, আজহার ৯, বাবর ৯৭, আসাদ ৯, ইফতিখার ১০, রিজওয়ান ০, ইয়াসির ১১৩, আব্বাস ২৯, মুসা ১২; স্টার্ক ৬/৬৬, কামিন্স ৩/৮৩, হ্যাজলউড ১/৪৮) ও দ্বিতীয় ইনিংস- ৩৯/৩ ফলোঅন (১৬.৫ ওভার; মাসুদ ১৪, ইমাম ০, আজহার ৯, বাবর ৮, আসাদ ৮*; স্টার্ক ১/১০, হ্যাজলউড ২/১৫)। ** তৃতীয়দিন শেষে
×