ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ভুটানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে স্বর্ণজয়ের মিশন শুরু

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

আজ ভুটানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে স্বর্ণজয়ের মিশন শুরু

রুমেল খান, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে ॥ সাফল্য এমন একটা ব্যাপার যার জন্য অনেক সাধনা করতে হয়। সেই সঙ্গে দরকার হয় ভাগ্যের পরশও। এসএ গেমসের ফুটবলে ১২ বারের মধ্যে এমনটা বাংলাদেশ ফুটবল দলের ক্ষেত্রে ঘটেছে মাত্র দুইবার! দ্বিতীয় ও সর্বশেষ এই সাফল্য লাল-সবুজরা পেয়েছিল নিজেদের মাটিতে ২০১০ সালে। প্রথমবার ১৯৯৯ সালে, এই নেপালের মাটিতে। তার মানে নেপালেই প্রথমবার কপাল খুলেছিল আলফাজ-জুয়েলদের। ২০ বছর পর আবারও সেই পয়মন্ত ভেন্যুতে সোনা জয়ের সুনীল স্বপ্ন দেখছে জামাল ভুঁইয়ারা। সেই লক্ষ্যে আজ তাদের দিতে হবে প্রথম পরীক্ষা। পরীক্ষার নাম ভুটান। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর সোয়া ১টায় শুরু হবে ম্যাচটি। কাঠমান্ডুর সুন্দরা হোটেল থেকে হালচকের আর্মড পুলিশ ফোর্স স্টেডিয়ামের ট্রেনিং গ্রাউন্ড। ট্যাক্সিতে যেতে সময় লাগে আধাঘণ্টার মতো। কখনও উঁচু, কখনও নিচু, কখনও সাপের মতো আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তা। চলন্ত পথে মাঝে মধ্যেই চোখ আটকে যাচ্ছিল ছোট-বড় পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত অসংখ্য ঘরবাড়ি। স্টেডিয়ামটি তেমনই বেশকিছু সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত। মাঠের নয়নাভিরাম পরিবেশ দেখে চিত্ত জুড়িয়ে যেতে বাধ্য। এই মাঠেই ২০১৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ১-১ গোলে ড্র করে হতাশার অনলে পুড়েছিল বাংলাদেশ। সেবার তারা বিদায় নিয়েছিল গ্রুপপর্ব থেকেই। সেই মাঠেই রবিবার লাল-সবুজবাহিনী অনুশীলন করে। অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া বলেন, ‘তাই নাকি? জানতাম না তো। তাহলে তো এবার জিততেই হবে। আমরা জেতার জন্যই এখানে এসেছি। ২০ বছর আগের পুনরাবৃত্তি এবার করতে পারব বলে বিশ্বাস আছে। শতভাগ নয়, ১২০ ভাগ মেলে দিতে তৈরি সবাই। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’ দলের কোচ জেমি ডে বলেন, ‘প্রথম ম্যাচ খেলার অপেক্ষায় আছি। দলের সবাই ফিট এবং সুস্থ আছে। ভুটানকে আমরা ঢাকায় সম্প্রতি দুবার হারালেও এই পরিসংখ্যানকে পাত্তা দিতে চাই না। এখানে তাদের আমরা সমীহই করছি। ভাল খেলতে পারলে আমরা ভুটানকে হারাতে পারব, এটুকু বলতে পারি।’ নেপালে এসে বাংলাদেশ দল যে হোটেলে উঠেছিল সেখানে জিম এবং সুইমিং পুল না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন জেমি। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘এই সমস্যা শুধু আমাদেরই নয়, অন্য দলেরও। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলতে এলে হোটেলগুলোতে অবশ্যই এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত। আরেকটা কথা না বলে পারছি না। আমি কখনই এ রকম টাইট সিডিউলে ফুটবল হতে দেখিনি।’ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল বেশ ভালই খেলছে। কিন্তু তাদের মূল সমস্যা হলো আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেভাবে গোল আসছে না। এ প্রসঙ্গে নাবিব নেওয়াজ জীবন বলেন, ‘হ্যাঁ, কয়েকটি ম্যাচে আমি গোল করার অনেক সুযোগ নষ্ট করেছি। তবে আশা করছি এবার এসএ গেমসে আমি সুযোগ পেলে গোল করব। এ নিয়ে আমি আলাদাভাবে অনেক কাজ করেছি। আশাকরি স্কোরিং সমস্যা দূর করতে পারব এবং গোল করে দলকে জেতাতে পারব।’ ভুটানের বিপক্ষে জীবনের গোল আছে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভুটানের বিপক্ষে অনেকবারই আমরা খেলেছি। তাদের সম্পর্কে আমাদের ভাল ধারণা আছে। তাদের বিপক্ষে সাফে আমরা কখনই হারিনি। নিজেদের সেরা নৈপুণ্যটা দিতে পারলে এবারও তাদের হারাতে পারব ইনশাল্লাহ্।’ ক্লাব ম্যাচে অহরহ গোল পেলেও জাতীয় দলের জার্সিতে গোল করতে যেন ভুলে যান জীবন। কেন এমনটা হয়? জীবনের ভাষ্য, ‘আসলে এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি হতে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে গোল করার প্রচুর সুযোগ পাই। এবারের এসএ গেমসে টানা তিন-চার ম্যাচে যদি গোল করতে পারি তাহলে আবারও আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে।’ ২০১০ সালের পর ফুটবলে বাংলাদেশ দলের কোন সাফল্য বা অর্জন নেই। এবারের এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ের মাধ্যমে শিরোপাখরা ঘোচানোর ভাল সুযোগ আছে (যেহেতু এবার ফুটবলে ভারত অংশ নিচ্ছে না)। এ প্রসঙ্গে জীবন বলেন, ‘দলীয়ভাবে ভাল খেললে এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে এবার আমরা শিরোপা জিততে পারব। এ জন্য প্রথম ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমাদের টানা ম্যাচ খেলতে হবে, এটা খুব কষ্টকর। তারপরও আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত এবং সিরিয়াস।’ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত তিনটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচে ভুটানকে হারিয়েছিলেন জামালরা। সেই দলটি ছিল জাতীয় দল। এটা অনুর্ধ-২৩। অবশ্য বাংলাদেশের বর্তমান দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের বয়সের গড় ২৩। তাই একসঙ্গে খেলার কারণে সবার সঙ্গে বোঝাপড়াটাও দারুণ। এটাই বাংলাদেশ দলের বড় শক্তি। এই দলে সিনিয়র দলের ১৬ ফুটবলার আছেন। এখন দেখার বিষয়, ১৯৯৯ সালে আলফাজরা নেপালের মাটিতে যে স্বর্ণসাফল্য পেয়েছিলেন, ২০ বছর পর সেই নেপালের মাটিতেই আরেকটি বিজয়গাঁথা রচনা করতে পারেন কিনা জামাল ভুঁইয়ারা। হেড টু হেড (এসএ গেমস) সাল ফল ১৯৮৪ বাংলাদেশ ২-০ ভুটান ১৯৮৭ বাংলাদেশ ৩-০ ভুটান ২০১০ বাংলাদেশ ৪-০ ভুটান ২০১৬ বাংলাদেশ ১-১ ভুটান
×