ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রিটকারী উভয় আইনজীবীরাই বলেন শীঘ্রই কপি পাব

ঋণখেলাপীদের বিশেষ সুবিধা বহাল রেখে শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ রায়

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

 ঋণখেলাপীদের বিশেষ সুবিধা বহাল রেখে শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ রায়

বিকাশ দত্ত ॥ ঋণখেলাপীদের পুনর্তফসিল সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা বহাল রেখে হাইকোর্ট যে রায় ঘোষণা করেছে তার পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী জানিয়েছেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ জাজমেন্ট পাইনি। আশা করছি শীঘ্রই পাব। অন্যদিকে রিটকারী আইনজীবী বলেছেন, আশা করি ডিসেম্বরেই এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পাব। রিটকারী আইনজীবী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ গত ৩ নবেম্বর এ রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্ট তার রায়ে ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে খেলাপী ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারকে বৈধ ঘোষণা করে তার মেয়াদ তিন মাস (৯০ দিন) বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে এসব ঋণখেলাপীর নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ’১২ সালের ‘মাস্টার সার্কুলার অন লোন রিশিডিউলিং’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারকে ৩ নবেম্বর থেকেই তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মুনীরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, অনুমান করা যায়, যারা এ সময়ের মধ্যে আবেদন করেছেন তারা সুবিধা পাবেন। যারা করেননি, তারাও নতুন করে সুযোগ পাবেন। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারে ৯০ দিনের সুযোগ দিয়েছে। অন্যদিকে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পেয়ে যেতে পারি। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর যদি দেখি এতে অসামঞ্জস্য আছে, তাহলে আপীলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করা হবে। গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। এরপর রিটকারীদের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ মে ওই সার্কুলারের ওপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ২৪ জুন এ স্থিতাবস্থার মেয়াদ আরও দুইমাস বাড়ানো হয়। পরে এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপীল বিভাগে আবেদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগের ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ জুলাই আপীল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ দেন। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানোর আদেশ দেন। চেম্বার জজ আদালত ৮ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে। ৮ জুলাই এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ানো হয়। আপীল বিভাগ তখন বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চকে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপীর তালিকা দাখিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে রুল জারি করে। রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ২৪ জুন হাইকোর্টে ঋণখেলাপীদের তালিকা দাখিল করা হয়। এ রিটের সঙ্গে সম্পূরক আবেদন হিসেবে ঋণখেলাপীদের সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা জারি করেছিল তা স্থগিতে আবেদন করে রিটকারী পক্ষ। ২০ অক্টোবর ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে খেলাপী ঋণ পরিশোধের যারা সুযোগ গ্রহণ করবেন তারা অন্য কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশের মেয়াদ আরও এক মাস অথবা এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যেটা আগে শেষ হয়। শেষ পর্যন্ত আগেই শুনানি শেষ হয়েছে। অবশেষে ৩ নবেম্বর রায়টি ঘোষণা করা হয়। হাইকোর্টের রায়ে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুরবস্থা নিরসনে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে। সেখানে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে বিশেষজ্ঞদের এই কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের এমডি থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ পদে নিয়োগের বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আদালত আরও বলেছে, আমরা মনে করি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুদের হার ডাবল ডিজিট থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা উচিত। রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট। আর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাংক। রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশ ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেছিলেন, আদালত কমিশন গঠনে সরকারের প্রতি কোন নির্দেশনা দেয়নি। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি কমিটি করতে বলেছে। ব্যাংকিং সেক্টরে কমিটির কাজ হচ্ছে- ব্যাংকিং সেক্টরে অনিয়ম কেন হয়েছে সেটি তদন্ত করে দেখে রিপোর্ট তৈরি করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্কুলার (২ শতাংশ) দিয়েছিলেন সেটি অবৈধ হয়নি বরং আরও তিন মাস সময় বাড়িয়ে দিয়েছে ওই সার্কুলারের মেয়াদ। দুই শতাংশ জমা দিয়ে পরে লোন নিতে পারবে। তবে পরে লোন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেটি মাস্টার সার্কুলারে উল্লেখ আছে, সেই বিধিবিধান যেন মান্য করা হয়। তিনি আরও বলেন, এ রায়ের ফলে আমাদের মনে হয় না ব্যাংকিং খাতে কোন সমস্যা আছে। এর ফলে বরং ব্যাংকিং সেক্টর আরও ভাল হবে। আদালত বলেছে, সব ব্যাংক যেন সুদকে সিঙ্গেল ডিজিটে আনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষের আইনজীবী মুনীরুজ্জামান বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়েই বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিটির পরামর্শ নিয়ে কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি যে, আদালত ওইদিন (৩ নবেম্বর) যে কমিটি গঠন করতে বলেছে, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজের কাজে ইন্টারাপ্ট হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সফলভাবে কাজ করতে পারবে।
×