ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওবায়দুল কাদেরের কড়া হুঁশিয়ারি

নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

  নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, রাজনীতিকে আমরা রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করব। কিন্তু অরাজনৈতিকভাবে সহিংসতার পথে গেলে তারও সমুচিত জবাব দিতে জানে আওয়ামী লীগ। যদি দেশে কোন নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয় তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। সহিংসতা করা হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যখন যা করার প্রয়োজন সেটাই করা হবে। রবিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ, অনেক চ্যালেঞ্জ। আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ও তার দোসররা চক্রান্ত করছে। নৈরাজ্য করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ পাঁয়তারা করছে। আদালত প্রাঙ্গণকে তারা রণাঙ্গনে পরিণত করেছে। তারা আইন, বিচার এবং আদালত মানে না। কিন্তু অরাজনৈতিক কর্মকান্ড কোনভাবেই সহ্য করা হবে না। মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম এমপি, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ উপকমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় আওয়ামী লীগ দেশে ‘নম্বর ওয়ান’ মন্তব্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের ১০টি সাংগঠনিক জেলা সম্মেলন সুন্দরভাবে সফল হয়েছে। উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে এমন কিছু হয়নি যাতে খারাপ খবরের শিরোনাম হতে পারে। এমনকি কমিটি ঘোষণার সময় স্বাভাবিক যে বিশৃঙ্খলা হয়ে থাকে সেটাও হয়নি। তাই আমি দাবি করে বলতে পারি, এখনও অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চায় আওয়ামী লীগ এ দেশে নম্বর ওয়ান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এদেশে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং ঐক্যবদ্ধ। ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এবং সকলের সহযোগিতায় চারটি সহযোগী ও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনের নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযান, সেই শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা ও সঙ্গতি রেখে একদিকে যেমন আমাদের প্রত্যেকটি সম্মেলন যেমন সুশৃঙ্খল এবং স্বতঃস্ফূর্ত হয়েছে, তেমনি নেতৃত্ব নির্বাচনেও শৃঙ্খলার পরকাষ্ঠা প্রদর্শিত হয়েছে। আমাদের দল শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সলিডলি ঐক্যবদ্ধ সেটাও প্রমাণিত। জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আমরা দেশের জনগণের কাছে ক্লিন ইমেজের বার্তা দিতে পেরেছি। তিনি বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন-পুরাতনের সমন্বয়ে আমরা আমাদের দলকে ঢেলে সাজাব। প্রযুক্তির সঙ্গে ঐতিহ্য, আইডিয়ালিজমের সঙ্গে রিয়ালিজম এবং আধুনিকতার সঙ্গে বিশ্বাসের ব্যালেন্স করে আমরা আমাদের আওয়ামী লীগকে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরা এমনভাবে পার্টিকে সাজিয়ে নিচ্ছি যাতে মুজিববর্ষ উদযাপন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে আমরা সারা দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন ইভেন্টে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, সরকারপ্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। কাজেই আমরা সেভাবেই আমাদের দলকে প্রস্তুত করতে চাই। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী দুই বছর আমাদের অলস হয়ে ঘরে থাকার কোন সুযোগ নেই। পুরো দুটো বছরই আমাদের কর্মযজ্ঞ, পুরো দুটো বছরেই কোন না কোন কর্মসূচীর মধ্যে আমাদের মাঠে থাকতে হবে। এ জন্য আমাদের নেতাকর্মীকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাই। যেন নেত্রীর ডাকে আমাদের সকল সংগঠন শৃঙ্খলার সঙ্গে শক্তি প্রদর্শন করতে পারি। সম্মেলনে আমরা সাজসজ্জার দিকে না গিয়ে, আমাদের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, সৌন্দর্য এবং শৃঙ্খলা বৃদ্ধির জন্য আমাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমরা একটা সুশৃঙ্খল জাতীয় কাউন্সিল করতে চাই। তাই যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয় সেটা পালন করতে হবে। এতে যেন কোন গাফলতি এবং আমাদের দলের সুনাম ও ভাবর্মূতি যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ‘সরকারী দল টাকা বানানোর রোগে আক্রান্ত’- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতির জন্য বিএনপি দেশকে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। হাওয়া ভবনে বিকল্প পাওয়ার হাউজ সৃষ্টি করে বিএনপির টাকা বানানোর মেশিন ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগে টাকা বানানোর বিকল্প কোন পাওয়ার সেন্টার নেই। আমাদের সম্পদ হলো দেশের জনগণের ভালবাসা। আমাদের মধ্যে যারা দুর্নীতি করবে তাদের রেহাই নেই, শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা কাজের প্রমাণ দিয়েছেন। গুটিকয় অপকর্মকারীর দায় দলের ত্যাগী কর্মীরা কেন নেবে? তাই নেত্রী যে পথ বেছে নিয়েছেন সেটা সঠিক পথ হয়েছে।
×