ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

অকুতোভয় বাদল স্মরণে

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

অকুতোভয় বাদল স্মরণে

গত ৭ নবেম্বর সকাল ৮টার দিকে পাশের ঘর থেকে স্ত্রী সিতারা অতর্কিতে আমার পড়ার ঘরে এসে বললেন, শুনেছ তোমার বন্ধু মইন উদ্দীন খান বাদল আর নেই। টিভিতে সংবাদ- বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। শুনে স্তম্ভিত হয়ে রইলাম বেশ কতক্ষণ। বাদল অসুস্থ ছিলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বছরখানেক আগে, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, ভাবিনি। মনে এলো, ‘সত্যের স্পর্ধিত উচ্চারণ’ শিরোনামে ২০০৯ এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ এর ৪ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে বাদলের সব বক্তৃতা সংকলিত করে একই বছরের আগস্ট মাসে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এর প্রকাশনা উৎসবে আমি উপস্থিত ছিলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আরও ছিলেন বক্তা বাদল এবং তার স্ত্রী সেলিনা। তার বক্তৃতার এই সঙ্কলন বাদলের জীবনের লক্ষ্য, আদর্শ ও বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য আমাদের সকলের জন্য অনুসরণীয় অবয়বে তুলে ধরেছে। মইন উদ্দীন খান বাদল ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়ন ও সমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৭ নবেম্বর তার মৃত্যুতে সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ক্রমে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে কথা স্মরণে রেখে জনাব বাদলের সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা যারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, এমনকি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ- প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাদলের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আমরা যখন ঐক্যজোট গঠন করি, আমাদের ঐক্যজোটের সঙ্গেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলন সংগ্রামের রাজপথে এবং এই সংসদে (তার সঙ্গে) একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমাদের’। বাদলের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে নবম সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি যখন যোগ দেন। এই কমিটির সভাপতি হিসেবে তার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা স্থির করি যে, (১) ১৯৭৫ থেকে শুরু করে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের শেষ ১৯৯৫ পর্যন্ত সংসদে উপস্থাপিত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের সকল অসম্পন্ন প্রতিবেদন আমরা নিষ্পত্তি করে সরকারের আর্থিক জবাবদিহিকে সমকালীন পর্যায়ে উঠিয়ে কার্যকারণসূত্র অনুযায়ী অর্থবহ করব, (২) নিরিখের দায়িত্ব যথার্থভাবে অর্পণ ও পালনের লক্ষ্যে একটি সুচিন্তিত নিরিখ বা অডিট আইন প্রণয়ন করব এবং (৩) সংবেদনশীল দৃঢ়তার সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে দৃষ্ট অনিয়মসমূহ শনাক্ত, দায়ী নির্বাহীদের সংশোধন ও আগামীতে এখন পর্যন্ত দৃষ্ট অনিয়মাদি ঘটার আশঙ্কা সীমিত করে আনব। বেশ পরিশ্রম করে আমরা এই ৩টি লক্ষ্যই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। তবে নিরিখ আইনটি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ও সকল সদস্যের সম্মতি নিয়ে প্রণীত হয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিতের সম্মতি সত্ত্বেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার বিবর থেকে এখনও বের হয়নি। বাদল সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির অন্যতম সদস্যের ভূমিকায় আমার সঙ্গে অন্যান্য দেশের এরূপ কমিটিগুলোর সঙ্গে কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপনে সচেষ্ট ছিলেন। এই লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি আমার সঙ্গে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, কানাডীয় পার্লামেন্ট ও ভারতীয় লোকসভার সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন। ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের সরকারী হিসাব কমিটির তৎকালীন (২০১৫) সভাপতি মার্গারেট হোজ ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় আমরা ১৮৬১ থেকে শুরু করে ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের সরকারী হিসাব কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্যাবলীর বিবর্তন অনুধাবন করি। আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হই যে, হাউস অব কমন্সের আলোচিত বিবর্তনের আলোকে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত ও জোরদার করার জন্য আমরা বাংলাদেশের সংসদে কাজ করে যাব। কানাডার হাউস অব কমন্সের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সহসভাপতি আলেকজান্ডার মেন্ডেস ও সদস্য চন্দ্র আর্যের সঙ্গে তেমনি আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এই আলোচনায় অন্যদের মধ্যে কানাডার ভিক্টোরিয়া এলাকার প্রাদেশিক সাংসদ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মনোমিত সিং অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের সঙ্গে আলোচনায় আমরা বাংলাদেশের সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত কমিটিকে অধিকতর সংবেদনশীল ও কার্যশীল করার অভিজ্ঞান অর্জন করি। দিল্লীতে ভারতীয় লোকসভার সরকারী হিসাব সম্পর্কিত কমিটির তৎকালীন সভাপতি মুরলী মনোহর জোশীও অন্যান্য সাংসদের সঙ্গে তেমনি আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিভূরা এক্ষেত্রে কিভাবে জনস্বার্থে দায়িত্বশীল ও একাগ্র ভূমিকা পালন করেন, তা ভারতীয় লোকসভার সরকারী হিসাব সম্পর্কিত কমিটি আমাদের কাছে বিস্তারিত ও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। এই সকল আলোচনায় আমার সঙ্গে বাদল বাংলাদেশের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত কমিটির ভূমিকা তাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। বাংলাদেশ বিষয়ে ভরাট গলায় বাদলের ভাষ্য তাদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নব্য স্বাধীন কসভো সরকারের আমন্ত্রণক্রমে জনাব বাদল ও আমি ২০১২ এর জুলাই এ সে দেশ সফর করি। এই সফরকালে আমার সঙ্গে বাদল প্রিজিরিনা শহরে কসভোর স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা আদম জাশেরীর সমাধিস্থলে সকল দেশের সকল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কালে পৃথিবীব্যাপী মানুষের অধিকার অর্জন ও সংরক্ষণে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় অবদানের কথা বলেন। কসভোর অন্যান্য নেতার মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ক দায়িত্ব প্রাপ্ত উপপ্রধানমন্ত্রী বেদেজগাত পাকোলি, পার্লামেন্টের স্পীকার ড. জাকুব ক্রাশনিকির সঙ্গে কসভো - বাংলাদেশের বাণিজ্য ও সংসদীয় সম্পর্ক প্রসারিত করার লক্ষ্যে বাদল ও আমি ফলপ্রসূ আলোচনা করি। কসভোর জনগণের মধ্যে ৯৩% মুসলিম। এই প্রেক্ষিতে বাদল উপপ্রধানমন্ত্রীকে তার স্বভাবসুলভ বলিষ্ঠতার সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি না করে কসভোর জনগণ নিজেদের কিভাবে ইউরোপে পৃথক সত্তা হিসেবে পরিচিত রাখবেন? ফিরে এসে আমি ও বাদল কসভোকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার অনুকূলে যুক্তি সমূহ আমাদের সরকারের কাছে তুলে ধরি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি ৫-এ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে সংসদে শোক জানাবার ক্রমে বাদল তাকে মুক্তির প্রজন্মের পুরোধা ও একজন পূর্ণাঙ্গ সংসদ সদস্য বলে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধের প্রতিফলক হিসাবে ২০১৭ এর ১ জানুয়ারি তিনি দেশের হকার উচ্ছেদ অভিযান সংবেদনশীল করার লক্ষ্যে ভারতীয় লোকসভায় ২০১৪ এর ২০ ফেব্রুয়ারি গৃহীত হকার ও পথ বিক্রেতার সুরক্ষামূলক আইনের আদলে এদেশেও একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার প্রতি সকল সংসদ সদস্যস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। জীবনের শেষ দিকে জাসদের এক ধারার পথিক হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতারের বিরুদ্ধে বাদলের ছিল গভীর ক্ষোভ। বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের জনক ও নেতা হিসেবে বার বার উল্লেখ করে বাদল বলেছেন ইনু আর শিরীন ভুল পথে হাঁটছেন। বাদল বাংলাদেশের সংসদে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য নির্ভীক ও বস্তুনিষ্ঠ বক্তা। জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব বিষয়ে ২০১২-এর ৪ সেপ্টেম্বর যে ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছিলেন, তা আমাদের সকলের স্মর্তব্য। তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আমাদের সংসদ সার্বভৌম আর বিচার বিভাগ স্বাধীন। স্বাধীনতার মোড়কে বিচার বিভাগ সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংসদের ক্ষমতা ও অধিকার তত্ত্বাবধান বা নির্ণয় করতে পারে না। এই বিষয়ে সংসদের ক্ষমতা ও অধিকার একমাত্র সংসদই নির্ধারণ করতে পারে। ব্রিটেনের ১৬৬৯ সালের অধিকার বিষয়ক আইন উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, ‘সংসদের কথা বলা, বিতর্ক করা এবং এর কার্যক্রম নির্ণয় করা কখনও সংসদের বাইরে বা আদালতে অভিশংসিত বা প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না’। এসব বলে বাদল বিচার বিভাগীয় জবাবদিহিবিহীন স্বৈরতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সকলকে সাবধান ও সচেতন করে দিয়েছিলেন। বাদল বার বার ধর্ম নিরপেক্ষতাকে বাংলাদেশের ভিত্তি এবং এই রাষ্ট্রের অলংঘনীয় অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে বিবৃত করেছেন। ২০১৩ এর ৪ নবেম্বর তিনি সংসদে সকলকে স্মরণ রাখতে উল্লেখ করেছিলেন : ১৯৭২ সালে কলকাতার দৈনিক যুগান্তরে এক সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন : ‘আমি ধর্মনিরপেক্ষতার ১টি চারা বাংলাদেশে রোপণ করেছি, এই চারা যদি কেউ ছিঁড়ে ফেলতে চায়, উপরে ফেলতে চায় তাহলে বাংলাদেশ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে’। ২০১৬ এর ৭ জুলাই এ সংসদে প্রদত্ত বাদলের ভাষণ এখনও আমাদের কানে বাজে : ‘৪৫ বছরের রাজনৈতিক ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবেন, বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতার শিখরে বা মূলে যা কিছুই বলেন, তাতে আছে জামায়াত এবং তার ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি। আর মাথার ওপর ছাতা ধরে আছে বিএনপির খালেদা জিয়া’। ২০১০-এর জানুয়ারি ২০ এ বাদল সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘খাদ্য জোগাড় করার ক্ষমতা যদি কোন জাতির না থাকে, ঐ জাতির সার্বভৌমত্বের রং ফিকে হয়ে যায়।’ একই দিনে তিনি জাসদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট বাঁধার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দারিদ্র্যবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি ও পদক্ষেপকে। তিনি যোগ করেছিলেন, ‘নেত্রী যখন গভীর প্রত্যয়ে বলেন, আমাদের এক শত্রু- সে হলো দারিদ্র্য তখন আমি বঙ্গবন্ধু মুজিবের প্রতিচ্ছায়া দেখি’। এই উক্তির পটভূমিকা তিনি তুলে ধরেছিলেন ২০১০-এর ৩ মার্চে সংসদেই। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ক্ষমতার মোহ ও প্রমত্ততা ছেড়ে, ক্ষমতার বলয় ছেড়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল তৈরি করেছিলাম।’ সংসদে ২০১১ এর ৭ মার্চ বাদল বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১-এর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বলেছিলেন : ‘আমি বিশ্বাস করি আরও হাজার বছর ধরে এই ভাষণ এই জাতিকে, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, আন্দোলিত করবে।’ ২০১২-এর ১০ জুন তিনি বাজেটের ওপর বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে এর আগে একই বিষয়ের ওপর অর্থনীতিবিদ হিসেবে সংসদে দেয়া আমার বক্তব্যের রেশ টেনে বলেছিলেন যে, তিনি সাধারণবিদ, অর্থনীতিবিদ নন। বাজেটের ওপর আমার অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেয়া বক্তব্যের বিপরীতে তিনি কিছু বলেননি। তথাপিও সাধারণবিদ হিসেবে আমার মতই গর্ব ও সন্তোষের সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। দেশে খাদ্য উৎপাদনের উদ্বৃত্তের প্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, এক সময় আলোচনা ছিল ‘খাব কিভাবে আর এখন আলোচনা শুরু হয়েছে রাখব কিভাবে?’ ২০১৪-এর ৯ জুন সংসদে বাজেট আলোচনা করতে গিয়ে বাদল প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দের অধিকতর বিবরণ ও ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এক্ষেত্রে ‘গর্দভদের দেশ’ পাকিস্তানকে অনুসরণ করার অযৌক্তিকতা তুলে ধরেন। একই বক্তৃতায় তিনি সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন : ‘সম্পদ হরণ, দখল ও আত্মসাতের মাধ্যমে আমরা আদৌ বিত্তশালী কিনা এবং সেই সম্পদশালীদের হাতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা আমাদের সে উত্তর দেয়া বাঞ্ছনীয়।’ একই বছরের ২৫ জুন সংসদে তিনি এই উক্তিটি সম্প্রসারিত করে বলেন, ‘বাঙালী জাতির এই উত্থান পর্বে আমাদের যাত্রা হওয়া চাই নির্মোহ। উন্নয়নের কর্মকান্ডে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের কথা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা। সম্পদশালী হওয়া বড় কথা নয়, সম্পদের ন্যায্য বণ্টন আরও বড় কথা। আমাদের সংবিধান বলেছে জনগণই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক। সংবিধান মানুষে মানুষে বৈষম্যের বিপরীতে সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করেছে। সাংবিধানিক অঙ্গীকারের ভিত্তিতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট নীতি কৌশল প্রণীত না হলে, সেই মোতাবেক পরিকল্পনা গৃহীত না হলে, বাজেট বিন্যস্ত করা না হলে, কোন না কোন দিন আামদের সাংবিধানিক বিচ্যুতি ঘটেছে বলে প্রশ্ন উঠতে পারে।’ ২০১৬ এর ২১ জুন সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনাকালে এই দর্শনের সম্প্রসারণ করে বাদল সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘এই আর্থিক সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে, এই আর্থিক জঙ্গীদের ব্যাপারে সরকার নির্মোহ হয়ে দৃঢ় আচরণ করতে না পারলে, আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে, বিত্তের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করলে, শাস্তির হাতকড়া না পরালে ইতিহাস আমাদের একদিন সংবিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।’ একই দিনের বক্তৃতায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনবদ্য প্রগতির লক্ষ্যে অহর্নিশি সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে বলেছিলেন, ‘আমার কি আয়ু আছে জানি না। তবু বিধাতার কাছে বলব আমার মতো মানুষের আয়ু নিয়ে শেখ হাসিনাকে আয়ুস্মতী করা হোক। ‘Because history has given her a chance, because history has given her an obligation, because history has given her a right to take this nation and country to a height, from where it will never look back…’। এই বক্তৃতার উপসংহারে বাদল বলেছেন, ‘(আমি) মানুষকে ভালবাসি। আমার নেতা বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালবেসেই মরেছেন। বাঙালী মানসের সৃষ্টিকর্তা রবিঠাকুরও (একই কথা) বলে গেছেন’। এই মানুষের ভালবাসাকে মনে চির জাগরিত রেখে বাদল আগেই বলেছিলেন : ‘আমি সম্মান চাই, আমার অহংকার আছে, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, তার সারা জীবনের পবিত্রতম কাজ একটি, আমি যখন মারা যাব আমার লাশটাকে বাংলার পতাকা দিয়ে মুড়ে দেবেন’ (সংসদে বাদলের ২০১৫ এর ৬ জুনের ভাষণ)। গত ৮ নবেম্বর জাতীয় সংসদের দক্ষিণের সুরঙ্গ পথে অকাল বৃষ্টি থেকে দূরে জড়ো হয়ে তার জানাজা শেষে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বেগম সেলিনা বাদলের উপস্থিতিতে অপলক আমরা সংসদ সদস্য, সহযোগী ও বন্ধুরা তাই করেছিলাম, বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে তার মরদেহ ঢেকে দিয়ে নীরবে শ্রদ্ধাভরে তাকে এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় জানিয়েছিলাম। জয়তু, সহযোগী সুচরিত বন্ধু মইন উদ্দীন খান বাদল- আপনি চিরজীবী থাকুন বাংলাদেশের পতাকার পটে। লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
×