ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নের মাইলফলক রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

উন্নয়নের মাইলফলক রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের একক বৃহত্তম প্রকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের মাইলফলক হয়ে থাকবে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই প্রকল্পকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ এবং যারা প্রকল্পে কাজ করছেন তাদেরকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ১৯৬১ সালে পাবনার ঈশ্বরদী থানার রূপপুরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২-১৯৭৫ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০০ মেগা-ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সময়মত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ২ হাজার ৪ শ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে ৬০ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এর পেছনে বার্ষিক খরচ হবে মাত্র এক হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ ব্যয়ের এই প্রকল্পে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে দেশের ৬ কোটি মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করবে। দেশের মানুষের সেবা আওয়ামী লীগ সরকারের এই উদ্যোগ সফল ভাবে সম্পন্ন করতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা সকলেই। সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য সেখানে ভবন নির্মাণের কাজও শেষ করা হয়েছে অকল্পনীয় দ্রুত সময়ের মধ্যে। প্রতি ফ্লোরে ২০ হাজার স্কয়ার ফিটের ছয়টি ইউনিটের তিনটি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র একবছরে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এধরণের একেকটি ভবন তৈরি করেতে যেখানে কম করে হলেও তিনবছর সময় লাগে। অবশ্য এত দ্রুত ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার অন্যতম কারণ হচ্ছে জরিমানা থেকে রক্ষা পাওয়ার সঙ্গে রাশিয়ানদের নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করা। নির্ধারিত সময়ে ভবনগুলো নির্মাণ করতে না পারলে ৪০ হাজার কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে সরকারকে। দেশের উন্নয়নে সরকারের এই প্রকল্পে স্বতস্ফুর্ত ভাবে কাজ করেছে আমাদের দেশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ২৩ নভেম্বর স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হকের নেতৃত্বে কমিটির সদস্য মোজাফফর হোসেন, শিরীন আহমেদ ও হাবিবা রহমান খান প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক, প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর, প্রকল্পের উপদেষ্টা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রুহুল হক বলেন, এর আগে এসে শুধু মাটি ভরাট দেখেছিলাম। তথ্য-উপাত্ত মুখে শুনেছিলাম। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার ও রাশানদের কর্ম প্রচেষ্টায় ও সুন্দর ব্যবস্থাপনায় কাজের অগ্রগতি দেখে আমরা আজ অভিভূত। আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী বাংলাদেশের একজন নামকরা স্থপতি। তিনি নিয়মিত এখানে এসে কাজের তদারকির কারণে প্রকল্পের কাজ সুন্দরভাবে সম্পাদিত হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেছিলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যারা দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করছেন তারা হলেন দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা।’ রূপপুরের এই মহাকর্মযজ্ঞকে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ ভেবে কাজ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই আছেন, যারা একাত্তর দেখেননি এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মধ্যে ছিল রূপপুর প্রকল্প। প্রকল্পের কাজ নতুন প্রজন্মকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ এখানে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে।’
×