ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোনামসজিদ বন্দরে ১৩ দিন ধরে বন্ধ পাথর আমদানি

প্রকাশিত: ১১:৪০, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

 সোনামসজিদ বন্দরে ১৩ দিন ধরে বন্ধ পাথর আমদানি

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ১৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পাথর আমদানি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ স্থলবন্দরটি দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ থাকার ফলে এই সময়ে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছে বহু সংখ্যক শ্রমিক। এ বন্দরে প্রধান আমদানি পণ্য তালিকায় রয়েছে ভারতীয় পাথর। জানা গেছে, পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বন্দর ট্যারিফ বাড়িয়ে দেয়ায় আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপ পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে। জানা গেছে, এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পাথর ও ফ্লাই এ্যাশ আমদানি হয়। সরকারী রাজস্ব বাদেও এতদিন ট্রাক প্রতি বন্দর ট্যারিফ হিসেবে ৭৮৩ টাকা দিয়ে আসছিল আমদানিকারকরা। এই টাকার মধ্যে ৪৯ শতাংশ যেত সরকারী কোষাগারে। বাকি ৫১ শতাংশ পেত পানামা। কিন্তু ১৪ নভেম্বর হঠাৎ করেই বন্দর ট্যারিফ টন প্রতি ১৬২ টাকা নির্ধারণ করে মৌখিক নির্দেশনা দেয় পানামা। একই সঙ্গে পানামার ভেতরে পণ্য খালাসের নির্দেশনাও দেয় তারা। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসে আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপ। কিন্তু এর সমাধান না হওয়ায় গত ১৭ নবেম্বর থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করে দেয় তারা। আমদানিকারকরা বলছেন, বন্দর চালুর পর থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখেনি পানামা। উল্টো বন্দরের অবকাঠামোগত সঙ্কটের কারণে তাদের বাইরে মালামাল খালাস করতে হচ্ছে। আমদানিকারকরা আরও বলছেন, ভারতীয় মহদীপুর প্রান্তে অতিরিক্ত খরচ, ডাম্পিং, পাথরের গুণগতমান, ধুলাবালি মিশ্রিত পাথর, একাধিক সাইজের মিশ্রিত পাথরসহ নানা অসুবিধায় এতদিন চরম বেকায়দায় ছিলেন তারা। এর সঙ্গে নতুন করে পানামা অতিরিক্ত ট্যারিফ সংযোজন ও বন্দরের ভেতরে পণ্য খালাসের ঘোষণা দিয়েছে। ব্যবসায় লোকসান ঠেকাতে বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ রেখেছেন বলে জানান তারা। সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সদস্য আসাদুল হক জানান, এতদিন ট্রাক প্রতি ট্যারিফ ৭৮৩ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু পানামা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই ট্যারিফ টন প্রতি ১৬২ টাকা নির্ধারণ করে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে। এই বন্দরে বিভিন্ন সঙ্কটের মধ্য দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে আমাদের। তার ওপর অতিরিক্ত ট্যারিফ নির্ধারণ ব্যবসায়ীদের আরও সঙ্কটে ফেলবে। লোকসান ঠেকাতে বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমদানিকারকরা যেমন আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, তেমনি সরকারও প্রতিদিন মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গৌড় বাংলাকে জানান, সরকারী মাসুল দিতেই হবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে তিনি বলেন, ভারতীয় মহদীপুর প্রান্তে অতিরিক্ত খরচ, ডাম্পিং, পাথরের গুণগতমান, ধুলাবালি মিশ্রিত পাথরসহ নানা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে এখানকার আমদানিকারকদের ব্যবসা করতে হচ্ছে। তাই নতুন করে ট্যারিফ আরোপে আমদানিকারকরা বেকায়দায় পড়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ভারতীয় অংশে খরচ কমে গেলে পানামার নতুন ট্যারিফ দিতে আমদানিকারকদের কোন অসুবিধে হবে না। বিষয়টি নিয়ে ওপারে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং কথোপকথন চলছে। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার বেলাল হোসেন বলেন, ট্যারিফ সংযোজন পানামার নিজস্ব কোন বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। বেলাল হোসেন আরও জানান, গত ১৪ নবেম্বর সোনামসজিদে স্থালবন্দরে এসেছিলেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) ড. শেখ আলমগীর হোসেন। তিনি বন্দর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন এবং এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করে যান। এরপরই ট্যারিফ সংযোজনের নির্দেশনা দেয়া হয়। অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে পানামার এ কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকরের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক ১৯ দশমিক ১৩ একর জায়গায় ট্রাক লোড আনলোড করা হয়। এতে কোন ধরনের সমস্যা হয় না।
×