ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড তাপমাত্রা বন্যা খরা উষ্ণায়নের সব বৈরী রূপই দেখছে ইউরোপ

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

 রেকর্ড তাপমাত্রা বন্যা খরা উষ্ণায়নের সব বৈরী রূপই দেখছে ইউরোপ

কাওসার রহমান ॥ এবার এমন এক সময়ে মাদ্রিদে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হচ্ছেন, যখন ইউরোপ দেখেছে জলবায়ু পরিবর্তনের চূড়ান্ত নৃশংসতা। রেকর্ড সৃষ্টিকারী তাপমাত্রা, দাবানল, বন্যা আর খরা- গত এক বছরে প্রকৃতির সব বৈরী রূপই দেখেছে ইউরোপের মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটেই কাল সোমবার শুরু হচ্ছে দুই সপ্তাহব্যাপী বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের ২৫তম বৈঠক। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়ে প্রকৃতিকে ভারসাম্যহীন করে তোলার জন্য দায়ী দেশগুলোর মনোযোগ আকর্ষণে এবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে বিশেষভাবে। এই ভারসাম্যহীন পরিবেশে বিপদাপন্ন দেশগুলোর টিকে থাকার লড়াই তুলে ধরার জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ‘কণ্ঠস্বর’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা বিশ্ব দরবারে আরও একবার উঠে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ২৫তম জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং প্রথম দিনের দুটি কর্ম অধিবেশনে যোগ দেবেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মতো বিপদাপন্ন দেশগুলোর টিকে থাকার ঝুঁকি হ্রাসে অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ দাবিতে আবারও সোচ্চার হয়ে উঠবেন। কারণ উন্নত দেশগুলোর ভোগবিলাসের কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমরা আর কত খাপ খাওয়াব। বরং তোমরা কার্বন কমাও বিশ্ব বাঁচাও। আমাদের বসবাসের জন্য দ্বিতীয় কোন পৃথিবী নেই। তাই তো নজিরবিহীন উষ্ণতা বৃদ্ধির হাত থেকে আমাদের প্রাণপ্রিয় গ্রহ রক্ষায় ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে কাজ করার জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাবেন তিনি। জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের অবস্থান বিষয়ক বক্তব্য দেবেন। তিনি জলবায়ু সংক্রান্ত বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি জলবায়ু সংক্রান্ত ম্যান্ডেট আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাবেন। প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানাবেন তিনি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের উপকূলবর্তী যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত ও হুমকির সম্মুখীন, বাংলাদেশ তার অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপকতা এবং এ কারণে সৃষ্ট ঝুঁকির ভয়াবহতা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশ্বিক আলোচনা এবং নেগোশিয়েসনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে। এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা বিশ্ব দরবারে আরও একবার তুলে ধরা সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত প্রতিকূলতাকে জয় করে সহনশীল অর্থনীতি হিসেবে অবস্থান তৈরি করতে বাংলাদেশ যেসব ভবিষ্যত কর্মকৌশল গ্রহণ করছে বৈশ্বিক পরিম-লে তা তুলে ধরা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের সামনে রোহিঙ্গা সমস্যাও তুলে ধরবেন। কারণ রোহিঙ্গারা শুধু বাংলাদেশের ওপর বোঝা হয়েই দাঁড়ায়নি, তারা দেশের উপকূলীয় এলাকার পরিবেশের ভারসাম্যও বিনষ্ট করে চলেছে। ক্রমাগত অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণতা বৃদ্ধি বিপদাপন্ন দেশগুলোর মানুষের জন্য সত্যিকার এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাইক্লোন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং মৌসুমি বন্যা মানুষের জীবন-জীবিকাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ পৈত্রিক ভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততা। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা সামান্যই। প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙ্গনে অনেক পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ছে, হারিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। বৃষ্টিপাতে অনিয়ম এবং অতিবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষকের জন্য চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়েছে, শুষ্ক মৌসুমে পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নতুন নতুন রোগ ব্যাধি বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে সফল ম্যালেরিয়া নির্মূল করা হলেও তা আবারও ফিরে আসার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। একই ধরনের রোগ ব্যাধি বাড়ছে খাদ্যশস্য, পশুসম্পদ ও পোল্ট্রি সেক্টরেও। তাপমাত্রার তারতম্যে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ বছর ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় দেশে-বিদেশে জোরালো ভূমিকা পালন করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি নিজস্ব সম্পদ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠন করেছেন। অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচী বাস্তবায়নে এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছেন। দেশের মানুষকে জলবাযুর বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে রক্ষায় সব সময় সক্রিয় হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট রবিবার সকালে মাদ্রিদের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। বিমানটির স্পেনের স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা ৪০ মিনিটে মাদ্রিদ টোরেজন বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে একটি সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে মাদ্রিদের হোটেল ভিলা ম্যাগনায় নিয়ে যাওয়া হবে। স্পেন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এ হোটেলেই অবস্থান করবেন। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী স্পেনের সর্ববৃহৎ প্রদর্শনী কেন্দ্র এবং ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যু ফিরিয়া দ্য মাদ্রিদে ২৫তম কনফারেন্স অব দ্য পার্টির (কপ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরে তিনি সম্মেলনের ওয়ার্কিং সেশনে যোগ দেবেন এবং নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্ন ভোজে অংশগ্রহণ করবেন এবং পুনরায় অপরাহ্ণে ওয়ার্কিং সেশনে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেড্রো সানচেজের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। সোমবার সন্ধ্যায় রাজ প্রাসাদে স্পেনের রাজা ও রানী আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশ নেবেন তিনি। তিন দিনের সরকারী সফর শেষে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় প্রধানমন্ত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে দেশের পথে রওনা হবেন। ঢাকার স্থানীয় সময় বুধবার রাত বারোটা ৪০ মিনিটে বিমানটির হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। এ বছরই বিশ্বজুড়ে জলবায়ু জরুরী অবস্থা আরও ঘণীভূত হয়েছে। মানবজাতির ইতিহাসে কার্বন নির্গমন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ বছর জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি নৃশংসতা দেখেছে ইউরোপবাসী। পুরো ইউরোপজুড়েই ধাক্কা লেগেছে জলবাযু পরিবর্তনের। রেকর্ড সৃষ্টিকারী তাপমাত্রা, দাবানল, বন্যা আর গত এক বছর প্রকৃতির সব বৈরী রূপই দেখিয়েছে ইউরোপের মানুষ। ’১৯ সালে ইউরোপজুড়ে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গেছে। জুলাই যে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে জার্মানিতে। তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ছয় ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এক বছরেই দুবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙ্গেছে ফ্রান্স। ৪৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পুড়েছে সেখানকার মানুষ। যেই তাপপ্রবাহে পুড়েছে ফ্রান্স ও জার্মানি, যা ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের জন্ম দিয়েছে স্পেনে। আগুনে ধ্বংস হয়ে গেছে গ্রান কানারিয়া দ্বীপের ন্যাশনাল পার্ক, যা দেশটিতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইউরোপের তাপমাত্রা হয়ে উঠছে একদিকে উষ্ণ, অন্যদিকে শুষ্ক। এর ফলে এমন দাবানলের ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে। খরা, ঝড় আর তীব্র তাপে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে জার্মানির বনাঞ্চল। জার্মানির বন বিষয়ক একটি সংগঠনের হিসাবে ২০১৮ সালের পর এখন পর্যন্ত ১০ লাখ গাছ মরেছে। এটা কোন একক আবহাওয়ার ঘটনা নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হয়েছে। আল্পসের ইতালি অংশে মঁ ব্লঁ পর্বতের বরফ গলে গেছে এ বছর। সুইস আল্পসের পিজল নামের একটি হিমবাহও পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। এজন্য অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ারও আয়োজন করা হয়েছে সেখানে। বিজ্ঞানীরাও বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে আল্পসের এসব হিমবাহ। পরপর দুই বছরের খরায় বিপাকে পড়েছেন জার্মান কৃষকরা। ’১৮ সালে রেকর্ড খরার পর ’১৯ সালের তাপপ্রবাহে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে জার্মানি এমন বৈরী আবহাওয়ায় আক্রান্ত হতে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন জার্মান আবহাওয়া বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাউল বেকার। বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন প্রবণতা বাড়বে প্রতিবছরই। অথচ জলবাযু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্ব নেতাদের সামনে অপার সুযোগের যে দরজাগুলো ছিল তা একে একে সবই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ ছোট দরজাটাও এখন বন্ধের পথে। তাই ২৫তম জলবায়ু সম্মেলন হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে আনার বহুপক্ষীয় সহযোগিতার আরও একটি সুযোগ। এই সুযোগটি হচ্ছে উচ্চাভিলাসী মাত্রায় কার্বন নির্গমন কমিয়ে এনে বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তোলার। মাদ্রিদ সম্মেলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে প্রশমন উচ্চাকাক্সক্ষা বাড়িয়ে প্যারিস চুক্তিকে কার্যকর করা। আগামী ’২০ সালে প্যারিস চুক্তিভুক্ত সব দেশই কার্বন কমানোর ব্যাপারে নতুন করে নিজ নিজ অঙ্গীকার জমা দিতে হবে। গত ২৪তম জলবায়ু সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি কার্যকরের বেশিরভাগ গাইডলাইন-ই সম্মতি পেয়েছে। কেবল চুক্তির ৬ নম্বর ধারাটি ছাড়া। এ ধারায় কার্বন কেনাবেচার আন্তর্জাতিক বাজারকে কিভাবে কার্যকর করা যায় তার কথা বলা হয়েছে। যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বের অর্থনীতির অন্যতম টুলবক্স। এছাড়া ২৫তম জলবায়ু সম্মেলনে অভিযোজন, ক্ষয় ও ক্ষতি (লস এ্যান্ড ডেমেজ), অর্থায়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, আদিবাসী ইস্যু, সমুদ্র, বন, লিঙ্গ ইত্যাদি বিষয়ও এজেন্ডায় রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকে সবুজ অর্থনীতিকে পরিণত করা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তি খুবই জরুরী বিষয়। জলবায়ু অর্থায়নের ব্যাপারে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের জোগানে উন্নত দেশগুলোকে এবারের সম্মেলনেও চাপ সৃষ্টি করা হবে। বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল ম্যাকানিজম অব লস এ্যান্ড ডেমেজ। উন্নত দেশগুলো এ ব্যাপারে আগ্রহ না দেখালেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষ থেকে লস এ্যান্ড ডেমেজের বিষয়ে ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল ম্যাকানিজমকে কার্যকর করার জোরালো দাবি তোলা হবে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউএনইপি অতিসম্প্রতি বিশ্বের কার্বন নির্গমন সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। জিএপি রিপোর্ট ২০১৯ নামের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বৈশ্বিক গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ৭.৬ শতাংশ হারে কমাতে না পারলে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর তামপাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা যাবে না। তাই প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দেশগুলোকে সামগ্রিকভাবে কার্বন প্রশমন উচ্চাকাক্সক্ষা বর্তমানের চেয়েও ৫ গুণ বেশি হারে কমাতে হবে। আর বর্তমান হারে যদি কার্বন নির্গমন চলতে থাকে তাহলে এই শতাব্দী শেষে বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। যা মানবজাতির ওপর বিরূপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়, পৃথিবী নামক এই গ্রহের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। প্রাক শিল্প যুগের চেয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রীর মধ্যে রাখতে হলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ৪.৫ শতাংশ হারে কমাতে হবে। আর ৫০ সাল নাগাদ এই গ্যাসের নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিশ্বের এই অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য দায়ী মূলত চীন, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এবং ভারতের বড় ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্র ও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর যানবাহন। যা স্থলে, জলে, বাতাসে উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে কার্বন-মনোক্সাইড, কার্বনডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা বিশ্বে যে পরিমাণে গ্রীন হাউস গ্যাস তৈরি হচ্ছে, তার ২৬.৮ শতাংশের জন্য দায়ী চীন একা। ১৩.১ শতাংশ গ্রীন হাউস গ্যাস তৈরি করেছে আমেরিকা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে ওই গ্যাস তৈরি হচ্ছে ৯ শতাংশ। আর বিশ্বের মোট গ্রীন হাউস গ্যাস উৎপাদনের ৭ শতাংশ হচ্ছে ভারতে। গ্রীন হাউস গ্যাস উৎপাদনের নিরিখে ভারতের পরেই রয়েছে রাশিয়া (৪.৬ শতাংশ), জাপান (৩ শতাংশ), ব্রাজিল (২.৩ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়া (১.৭ শতাংশ), কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়া (১.৬ শতাংশ করে)। চিলিতে না হলেও মূলত চিলি সরকারই এবারের জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করছে। আর এই আয়োজনে সহায়তা করছে স্পেন সরকার। উল্লেখ্য, এবারের জলবায়ু সম্মেলন প্রথমে আয়োজন করতে চেয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু অর্থ সঙ্কটের কারণে ব্রাজিল অপারগতা প্রকাশ করলে এগিয়ে আসে চিলি ও নতুন স্বাগতিক দেশ হয়। কিন্তু সম্মেলন আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও ঠিক বৈঠকের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে অক্টোবরের একেবারে শেষে এসে চিলি ২৫তম জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনে অপারগতা জানায়। তখন জাতিসংঘ, চিলি এবং স্পেনের মধ্যকার পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে স্পেন সম্মেলন আয়োজনের এগিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত স্থান পরিবর্তন হলেও পূর্ব নির্ধারিত সময়েই এবারের জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
×