ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওরা যেন আর না আসে ॥ দুর্নীতিবাজ অগ্নিসন্ত্রাসী খুনীদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

ওরা যেন আর না আসে ॥ দুর্নীতিবাজ অগ্নিসন্ত্রাসী খুনীদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অগ্নিসন্ত্রাসী-দুর্নীতিবাজ-জঙ্গীবাদী বিএনপি-জামায়াত জোট যেন ক্ষমতায় ফিরে আসতে না পারে সেজন্য দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা সন্ত্রাস করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করে, যারা সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মানুষ খুন ছাড়া আর কিছুই বোঝে না- তারা যেন আর ফিরে আসতে না পারে। আর কখনও এসব হায়েনার দল এদেশের মানুষের বুকে চেপে বসতে পারবে না, মানুষের রক্ত চুষে খেতে পারবে না। কোন দুর্নীতিবাজ-সন্ত্রাসী ও অগ্নিসন্ত্রাস করে আগুন দিয়ে যারা মানুষ হত্যা করেছে- তারা আর কখনও মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। চলমান সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান, সেটা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানও চলবে। কারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ তাদের কল্যাণেই ব্যয় হবে। কারও ভোগ-বিলাসের জন্য এটা ব্যয় হবে না। কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করবেন, বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন, আর যিনি সৎভাবে জীবনযাপন করবেন তিনি সাদাসিধে জীবনযাপন করে তার জীবনটাকে নিয়ে কষ্ট পাবেন, এটা কিন্তু হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরানি-পোলাও খাওয়ার থেকে বা কোন ব্রান্ডের পোশাক পরার থেকে সাদাসিধে জীবনযাপন করা অনেক অনেক সম্মানের। অন্তত সারাক্ষণ ওই অবৈধ চোরা টাকা এটা মনে আসবে না। শান্তিতে ঘুমানো যাবে। চোরা টাকা, দুর্নীতির টাকা, অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে যতই বিলাসিতা করুক, মানুষ মুখে হয়ত খুব বাহবা দেবে, কিন্তু পেছনে একটা গালি দেবে- এই ব্যাটা দুর্নীতিবাজ, চোর। সেই গালিটা হয়ত শোনা যাবে না, বোঝা যাবে না। কিন্তু সেই গালিটা খেতে হয়। এই কথাটা মনে রাখতে হবে। জাতির পিতা সারাজীবন সাদাসিধে জীবনযাপন করে গেছেন। কাজেই আপনারা যারা তার আদর্শের সৈনিক, তাদেরও সেই অনুযায়ী চলতে হবে। টাকা বানানোর নেশাকে ‘রোগ’ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে টাকা বানানো একটা রোগ, এটাও একটা ব্যাধি, এটা একটা অসুস্থতা। একবার যে টাকা বানাতে থাকে তার শুধু টাকা বানাতেই ইচ্ছে করে। কিন্তু ওই টাকার ফলে ছেলেমেয়ে বিপথে যাবে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নষ্ট হবে। মাদকাসক্ত হবে সেটা দেখারও সময় নেই, টাকার পেছনে ছুটছে তো ছুটছেই। আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। কাজেই এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না। আমরা চাই সৎ পথে কামাই করে যে চলবে, সে সম্মানের সঙ্গে চলবে, সৎ পথে কামাই করে যে থাকবে সে সমাজেও সম্মান পাবে। শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া এতিমের কথা বলে টাকা এনেছেন। সেই টাকা এতিমদের না দিয়ে খালেদা জিয়ার এ্যাকাউন্টে চলে গেছে। অর্থাৎ সেই টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন। এই দুর্নীতির দায়ে আদালতের রায়ে তিনি কারাগারে গেছেন। এটাকে অনেকে রাজনৈতিক মামলায় রং দেয়ার চেষ্টা করছে। তাই এটা কোন রাজনৈতিক মামলা নয়, পরিষ্কার দুর্নীতির মামলা। আর আমরা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক মামলা দেইনি, এই মামলা তারই প্রিয় ব্যক্তিরা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসব মামলা দিয়েছে। এর আগে সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনস্থলে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর নৌকাকৃতির সুবিশাল ও দৃষ্টিনন্দন সম্মেলন মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট দিয়ে এবং ব্যাজ পরিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে মহানগর নেতা সালাহউদ্দিন বাদল ও মতিন ভুঁইয়ার পরিচালনায় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এর পর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আলোচনার শুরুতেই সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন উত্তর ও দক্ষিণের দফতর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল ও গোলাম রাব্বানী বাবলু। এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল সম্মেলন মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণ ছাড়াও সম্মেলন স্থল ও আশপাশের সড়ক বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। এতে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরা হয়েছে। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি, বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাসহ মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ, ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হন। বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের উদ্বোধন করে আরও বলেন, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করে তাদের উন্নয়ন ও ভাগ্যের পরিবর্তন করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ কাজ করেছে বলেই আজকের বাংলাদেশ এত উন্নত হতে পেরেছে। আজকের বাংলাদেশ বিশে^ সম্মান পাচ্ছে, উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা অতীত সরকারগুলোর মতো সেরকম বিলাসব্যসনে গা ভাসালে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতো না। এই বাংলাদেশ বিশে^ সম্মানও পেত না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের নামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাস ও ভাংচুরের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমার বিরুদ্ধে ১২টি মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির মামলা দেয়নি। বরং তার (খালেদা জিয়া) পছন্দের প্রিয়ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছে। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সেই আসামির জন্যই হামলা হলো, ভাংচুর হলো। তবে এটা বিএনপি নেতাকর্মীদের পুরনো অভ্যাস। এটাই তারা সব সময়ই করেছে। নির্বাচন বানচালের আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তারা সারাদেশে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করেছে, অগ্নিসন্ত্রাস করে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ক্ষমতায় থাকতে তারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মানিলন্ডারিং করেছে। খুন, সন্ত্রাস, নির্যাতন, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি আর দুর্নীতিই ছিল তাদের নীতি। বক্তব্যের শুরুতে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার (শেখ হাসিনা) মুক্তির আন্দোলনে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাত্র ১৫ দিনে ২৫ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তার মুক্তির জন্য তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জমা দিয়েছিলেন। এটা না হলে সেদিন তার মুক্তি ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া কঠিন হতো। জাতির পিতার ত্যাগের আদর্শে মানুষের পাশে থেকে তাদের কল্যাণে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে। আওয়ামী লীগ সব সময়ই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে। আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ হলো জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের জীবনমান নিশ্চিত করা। জাতির পিতা এদেশের মানুষকে সংগঠিত করে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। মন্ত্রিত্বের পদ ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েছিলেন কেবল জনগণের সেবা করার জন্য। কাজেই আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষা নিতে হবে। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলগুলো সৃষ্টি হয়েছে অবৈধভাবে, ষড়যন্ত্র করে। ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দলগুলো গঠন করা হয়েছে। দলগুলো মাটি থেকে গড়ে ওঠেনি। কোন বিরোধী দলে থেকেও গড়ে ওঠেনি। দলগুলো মানুষের কথা চিন্তা করে গড়ে ওঠেনি। মানুষের জন্য কাজ করা, মানুষের উপকার করা, এগুলো তারা বোঝে না। দুর্নীতি-খুন-সন্ত্রাস-অর্থ পাচার করা এসবই তারা বোঝে। কাজেই তাদের চরিত্রটা হচ্ছে আলাদা। এরা হচ্ছে সুবিধাবাদী, খাওয়াপার্টি। এরা মানুষকে কিছু দিতে পারে না। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শ ও নীতি নিয়ে পথ চলার আহ্বান জানিয়ে বলেনÑ কী পেলাম সেটা নয়, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণকে কী দিতে পারলাম সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণের কল্যাণ কিসে হবে সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণের অর্থ ভোগবিলাসে ব্যয় হবে না। জনগণের অর্থ জনগণের জন্য ব্যয় হবে। আজ আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি, এটা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তোলা প্রশ্নের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের আমি জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ-না ভোট ও ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। কেমন নির্বাচন তারা করেছিল? সেখানে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেনি। তাদের কথাই ছিল- ১০টা হুন্ডা, ২০টা গু-া নির্বাচন ঠা-া। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিল জেনারেল এরশাদও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান যেমন স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করেছিল, প্রধানমন্ত্রী করেছিল, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেও সেই একই কান্ড ঘটাল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া একটা নির্বাচন করেছিল। যে নির্বাচনে বাংলাদেশের কোনও দল অংশ নেয়নি। সেটা একটা সাজানো নির্বাচন ছিল। সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি নির্বাচন করল। যেখানে বোধ হয় দুই শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণের ভোট চুরি করে নির্বাচন করে খালেদা জিয়া নিজেকে তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিল। তিনি বলেন, ভোট চুরি করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রশিদকে নির্বাচিত করল। কর্নেল রশিদ ও মেজর হুদাকে নির্বাচিত করে পার্লামেন্টে বসাল। খুনী রশিদকে খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতার সিটে বসিয়ে দিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই ক্ষমতায় বেশিদিন থাকতে পারেনি। ভোটচুরির কারণে মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় ছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়ে, ৩০ মার্চ দেশের জনগণ আন্দোলন করে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। প্রধানমন্ত্রী পঁচাত্তর পরবর্তী ঘটনাবলীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ’৭৫-এর হত্যাকা-ের বিচার রুখে দিতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। খুনীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। এরশাদও জিয়ার পথ অবলম্বন করে ক্ষমতা দখল করল। তার থেকেও একধাপ এগিয়ে খালেদা জিয়া। তিনি ১৯৯৬ সালে সাজানো নির্বাচন করলেন। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের এমপি-মন্ত্রী করলেন। যারা এভাবে আত্মস্বীকৃত খুনীদের মদদ দিতে পারে, তারা গণতন্ত্রের কথা কীভাবে বলে? বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলের দুঃশাসনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি, নির্যাতন করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘর ছাড়তে হয়েছে। আমরা গোপালগঞ্জে সে সময় অনেক নেতাকর্মীকে আশ্রয় দিয়েছি। গোটা দেশেই তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে, হাত কেটে নিয়েছে, চোখ তুলে নিয়েছে। নেতাকর্মীদের ভিটাবাড়িতে পুকুর কেটে কলাগাছ লাগিয়েছিল। ওই সময় হাজার হাজার মেয়েকে রেপ (ধর্ষণ) করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার নির্দেশেই এগুলো করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কাজই ছিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা। বাংলাদেশ যেন কখনও এগিয়ে যেতে না পারে এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তাদের আমলে ঢাকা শহরে বিদ্যুত ও পানির হাহাকার দেখা দেয়। আজকে ঢাকা শহরের পানির চাহিদা আমরা পূরণ করছি। আমরা আরও পানি শোধনাগার করছি। এখন ঢাকা শহরে কেউ এলে দেখবে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। পুরো ঢাকা শহরের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। এসময় বিদ্যুত ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি ও বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। আপনাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কলা খেয়ে রাস্তায় খোসা ছুড়ে ফেলা যাবে না। বাস থেকে খাবার খেয়ে বাইরে ফেলা যাবে না। প্রয়োজনে বাসে বিন রাখতে হবে। নিজেদের শহরকে নিজেদেরই পরিষ্কার রাখতে হবে। বিনোদনের জন্য শহরে খেলার মাঠ রাখতে আমরা কাজ করছি। মেয়েদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের কথা বলেছেন। এসব মানুষের ভাগ্য কতটুকু গড়তে পারি, তাদের কতটুকু সুন্দর জীবন দিতে পারি, মানুষের ভাগ্য সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি, প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছি বলেই আজকের বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই এই সম্মানটা ধরে রাখতে হবে। আগামীতে যারা নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন, নেতৃত্বে আসবেন তাদের সেই কথাটাই মনে রাখতে হবে যে, আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। যে ত্যাগের মহিমা জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন সেই পথ ধরে চলতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যেন আর কখনও পেছনে ফিরে না তাকায়, বাংলাদেশের অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়, সুশৃঙ্খল জীবন পায়, সমৃদ্ধশালী জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। ইনশাল্লাহ! বাংলাদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর-দক্ষিণের আগামী দিনের নেতৃত্বের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে যারা নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন বা যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদেরকে আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। যে ত্যাগের মহিমা জাতির পিতা রেখে গেছেন, সেই ত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আজকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের এই ধাপ ধরেই আমাদের উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। আমরা সামনে আরও কর্মসূচী নিয়েছি। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০। আমরা শত বছরের প্ল্যান দিয়েছি। এই বাংলাদেশ যেন আর কখনও েিপছনে ফিরে না যায়। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়, সমৃদ্ধ জীবন পায়; সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই পরিকল্পনা ৈৈতরি করেছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলার মানুষকে নিয়ে যুদ্ধ করে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। কাজেই আমাদের কাজ হবে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের উন্নয়ন করা। আর সেই উন্নয়ন কাজই আমরা করে যাচ্ছি।
×