ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ফের পেছাল

কাউন্সিলর হতে পারছেন না অনুপ্রবেশকারী ২৫০ নেতা

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

কাউন্সিলর হতে পারছেন না অনুপ্রবেশকারী ২৫০ নেতা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ফের পিছিয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর এ সম্মেলন আয়োজনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রথমে ৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের দিন ঘোষণা করা হয়। তবে ওই দিন কেন্দ্রীয় কমিটির সভা থাকায় তা পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। এদিকে এবারের সম্মেলনে কাউন্সিলর হতে পারছেন না ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগের যোগ দেয়া নেতারা। এ তালিকায় রয়েছে ২৫০ জনের নাম। যারা বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের পদে রয়েছেন। তাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের নাম বাদ দিয়ে কাউন্সিলরদের তালিকা করতে উপজেলা কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ২ ডিসেম্বর কাউন্সিলরদের তালিকা চূড়ান্ত করবে জেলা আওয়ামী লীগ। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর রাজশাহীতে তিন হাজারের বেশী নেতাকর্মী বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায়। তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করে এখন দাপট দেখাচ্ছে। কেউ কেউ জনপ্রতিনিধিও হয়েছে। আসাদ বলেন, ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন এমন ২৫০ জনের একটি তালিকা তাদের কাছে আছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সেই তালিকার কেউ যেন এ সম্মেলনে কাউন্সিলর হতে না পারে সে ব্যাপারে শতর্ক রয়েছে জেলা কমিটি। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সমন্বয়ক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের চাপে ত্যাগী নেতারা মূল্যায়ন পায় না। এ কারণে তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলরদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়াও তারা যেন কোনভাবেই পদ না পায় সে ব্যাপারেও নজর রাখছে কেন্দ্রীয় কমিটি।’ আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রমতে, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন কাঁকনহাট পৌরসভার মেয়ল আবদুল মজিদ মাস্টার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই বাগিয়ে নিয়েছেন কাঁকনহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। একই সঙ্গে নৌকা নিয়ে তিনি কাঁকনহাট পৌর মেয়রও নির্বাচিত হয়েছেন। গত সম্মেলনে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদও পেয়েছেন। একই উপজেলার যুবদলের সভাপতি রবিউল আলম এখন গোদাগাড়ী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কামরু এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি ও মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম ২০১১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক। মোঃ ইসহাক আলী গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত বছরের ১৫ আগস্ট তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তবে এখনও তিনি কোন পদ-পদবী পাননি। আর এ উপজেলার এক সময়ের শিবির নেতা শহিদুল ইসলাম এখন জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জামায়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। এছাড়াও বিএনপি নেতা মাইনুল ইসলাম বর্তমানে ওয়ার্ড সৈনিক লীগের সভাপতি, জামায়াত নেতা জাহিদুল ইসলাম যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা ও পশ্চিম জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি এবং জঙ্গি নেতা বাংলা ভাইয়ের সহযোগী মোল্লা এম আলতাফ হোসেন। এখন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। বাগমারা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। আগামী সম্মেলনে পদের আশায় রয়েছেন তিনি। জেলার পুঠিয়া উপজেলা জামায়াতের রোকন আরিফ হোসেন। তিনি এখন উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি। জামায়াত কর্মী মজিবর রহমান এখন জিউপাড়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও উপজেলার পুঠিয়া পৌরসভার বিএনপির সভাপতি আলী হোসেন, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ বিশ্বা স, পুঠিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, জিউপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল ইসলাম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে আতিকুর রহমান যোগ দিয়েই পৌরসভায় চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। মোহনপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা রুস্তম আলী ও জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুব সংহতি নেতা কামরুজ্জামান রানা বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। জাতীয় পার্টির আরেক নেতা রোকনুজ্জামান টিটু কেশরহাট পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি। চারঘাট উপজেলার চারঘাট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাবিল উদ্দিন, শলুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি তৌফিক ইসলাম, চারঘাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি শফিউর রহমান, যুবদল নেতা জাহিদুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুল কাদের ও ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তারা এখন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এছাড়াও পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি পবা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার সঙ্গে ওই ইউপির সদস্য ও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, মহিলা সদস্য রেশমা বেগম এবং রাশেদা বেগম আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন তানোর উপজেলার কলমা ইউপির ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতা আব্বাস উদ্দিন, আতাউর রহমান ও রেজাউল করিম।
×