ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলনে কাদের

বিএনপির নৈরাজ্যের সমুচিত জবাব দেয়া হবে

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৩০ নভেম্বর ২০১৯

 বিএনপির নৈরাজ্যের সমুচিত জবাব দেয়া হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য করলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে বরদাশত করা হবে না, এটা আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই। তবে তারা (বিএনপি) শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করলে রাজনৈতিকভাবে আমরা তা মোকাবেলা করব। শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট (কেআইবি) মিলনায়তনে মৎস্যজীবী লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি যদি মনে করে সহিংসতা সৃষ্টি করে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে রয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই প্রস্তুত হয়ে যান, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। এখনও চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয় সরকারকে হটানোর চক্রান্ত চলছে। এ চক্রান্ত রুখতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ আজগর নস্কর। কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাইফুল আলম মানিক। নবনির্বাচিত নেতাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে আমরা বারবার বলেছি, আমরা তাঁকে জেলে নেইনি। আদালতে মামলার রায়ে তিনি জেলে আছেন। বিএনপি আইনী লড়াই করে তাঁকে মুক্ত করুক। আমাদের সরকারের কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না। তিনি বলেন, বিএনপি আদালত মানে না, আইনের শাসন মানে না, বিচার মানে না, সালিশ মানে না। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতের ওপর চাপ দিতে সেখানে তারা ভাংচুর করেছে। সেখানে তারা পুলিশের ওপরে হামলা করেছে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। আদালত প্রাঙ্গণকে রণাঙ্গনে পরিণত করেছে। এরা ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিরাপদ থাকবে না। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এত উন্নয়ন অর্জনের পরও বিএনপি ও তার দোসররা সরকারের উন্নয়ন দেখে না। তারা চোখে কালো চশমা পরেছে। কালো চশমার ফাঁক তারা উন্নয়ন দেখতে পায় না। জনগণ তাদের চায় না। আন্দোলন করতে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ তারা। এখন তাদের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে প্রেস ব্রিফিং, তাদের অবলম্বন হচ্ছে নালিশ। বিএনপি এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি হয়ে গেছে। এখন দেশে ঠাঁই না পেয়ে বিদেশীদের কাছে নালিশ দিচ্ছে। মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সহ-সভাপতি পদে পাঁচজনের নাম ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এর মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। তারা হলেন- আবুল বাসার, আবদুল গফুর, মুহাম্মদ আলম, নূরে আলম রহু এবং নাসরিন সুলতানা। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল আলিম, টিপু সুলতান ও রফিকুল ইসলাম রফিক। এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সভাপতি, কার্যকরী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদের জন্য প্রস্তাবনা আহ্বান করেন। সেখানে সভাপতি পদে পাঁচজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৮ জনের নামের প্রস্তাব আসে। পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের নিজের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচনের আহ্বান জানান। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে মৎস্যজীবী লীগের নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। বেলা ১১টায় জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মৎস্যজীবী লীগের শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে। আমাদের প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে এই সংগঠনে কর্মীর চেয়ে নেতা বেশি। সত্যিকার অর্থে মৎস্যজীবীদের প্রতিনিধি পেছনে পড়ে আছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকায় বসে যারা নেতৃত্ব করেন, তারা মঞ্চ দখল করে আছেন, এটা কিন্তু ঠিক নয়, এভাবে সংগঠন টিকবে না। সত্যিকারে যারা মৎস্যজীবী তারা প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলে, এ ধরনের লীগ করার, এ ধরনের দোকান খোলার কোন প্রয়োজন নেই। মৎস্যজীবী লীগে সত্যিকার অর্থে মৎস্যজীবীদের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব দরকার। কোন চাঁদাবাজের দোকান আমরা খুলতে চাই না। মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই, ঢাকায় বসে কার্ড বানিয়ে জায়গায়-জায়গায় গিয়ে চাঁদাবাজি করবে এমন নেতার দরকার নেই। আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, মৎস্যজীবীর নামে, মৎস্যজীবীর ওপরে যারা ক্ষমতার দাপট দেখাবে তাদের আমরা নেতৃত্বে রাখব না।
×