ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৩০ নভেম্বর ২০১৯

  ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজনীতির মাঠে প্রবাদ আছে- ‘ঢাকার রাজপথ দখলে যার, গোটা দেশ দখলে তার’। অর্থাৎ ঢাকা মহানগরীতে যে রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক শক্তি যত বেশি, মাঠ দখলে রাখার ক্ষমতা রাখে- তার প্রভাব গোটা দেশেই পড়ে। অতীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীতে সাংগঠনিক শক্তি প্রবল ছিল বলেই ’৯০-এর আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন, ’৯৬ সালে জনতার মঞ্চ করে বিএনপি সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। এরপর ২০০৫ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পতন এবং সর্বোপরি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নির্বাচন আদায় এবং সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসতে মহানগর আওয়ামী লীগ শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। অতীত রাজনৈতিক এসব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই আজ শনিবার দু’ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। শুদ্ধি অভিযানের ভেতরে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে ত্যাগী, পরীক্ষিত ক্লিন ইমেজের নেতাদের মূল নেতৃত্বে এনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে ঢেলে ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত অন্যান্য সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তনের ও নতুনদের আবাহনের মধ্যে ঢাকা মহানগরের দুই শাখার সম্মেলনকে ঘিরেও ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস বেশ স্পষ্টই। অতীতের মতো সাংগঠনিকভাবে ঢাকার রাজপথ দখলে রাখতে দক্ষ সংগঠক, জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের উত্তর ও দক্ষিণের বড় বড় পদে দেখা যেতে পারে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের চলমান সম্মেলনের অংশ হিসেবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। আজকের সম্মেলনকে ঘিরে চলছে নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ। এ সম্মেলনে যে নতুন কমিটি আসছে, তাতে বাদ পড়তে পারেন মহানগরের অনেক সিনিয়র নেতাই। টেন্ডারবাজি, দলে কোন্দল সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্য, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারী ও টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বর্তমান কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে বিতর্কিতদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন দলের হাইকমান্ড। প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে আজকের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। দীর্ঘ প্রায় সাতবছর পর অনুষ্ঠেয় আজকের সম্মেলনকে ঘিরে নগরীর নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নৌকাকৃতির সুবিশাল মঞ্চ তৈরি ছাড়াও সম্মেলনস্থল সোহওরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকাকে মনোরম সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আজ শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে বিকেল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের ™ি^তীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন আয়োজিত হবে। কাউন্সিলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই অংশের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন এবং ঘোষণা করা হবে। মহানগরীর সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার কাউন্সিলর এবং প্রায় তিন হাজার ডেলিগেট সম্মেলনে যোগ দেবেন। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এর তিন বছর পর নগর আওয়ামী লীগকে উত্তর ও দক্ষিণ- দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ, ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মহানগর উত্তরে এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপিকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে হাজী আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এদিকে এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনার কথা শোনা যাচ্ছে। নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ত্যাগী ও দক্ষ এবং বিতর্কমুক্ত, স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদেরই প্রাধান্য দেয়া হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর গত তিন বছরে দুই অংশের নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ততাসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে দলীয় অনেক বড় পদে থাকা কয়েকজনের বিরুদ্ধে। কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের বিনিময়ে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে বিএনপি-জামায়াত-ফ্রিডম পার্টির ক্যাডারসহ মাদকব্যবসায়ী ও বিতর্কিতদের ঢোকানোর অসংখ্য লিখিত অভিযোগও কেন্দ্রীয় দফতরে জমা আছে। এসব বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন কমিটি গঠনের কথা আলোচনায় রয়েছে। জানা গেছে, এই অবস্থায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপি ছাড়াও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি এবার সভাপতি পদের শক্তিশালী প্রার্থী। এছাড়াও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, নগর উত্তরের বর্তমান সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, আসলামুল হক আসলাম এমপি, আজিজুর রহমান বাচ্চু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের খান প্রমুখের নাম আলোচনায় রয়েছে। এদিকে নগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও উত্তরের অর্থ সম্পাদক বারবার নির্বাচিত কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল উদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা এস এম মান্নান কচি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান, দফতর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল আসতে চাইছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বিএমএ’র সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের ছেলে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, নগর দক্ষিণের বর্তমান সহ-সভাপতি আবুল বাশার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, আওলাদ হোসেন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির এবং কে এল. জুবিলী স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায় সমর প্রমুখ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ স্বপদে থাকতে আগ্রহী। তিনি ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপর রয়েছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দিলীপ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, গোলাম আশরাফ তালুকদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ আকতার হোসেন, প্রয়াত সাবেক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আজিজের ছেলে কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুল আজিজ তামিম, কাউন্সিলর বি এম সিরাজুল ইসলাম, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ, সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সরকার পলাশ, গোলাম সারোয়ার কবির প্রমুখ।
×