ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ বছর অন্তর পরীক্ষার নিয়ম মানা হচ্ছে না

ঝুঁকি বাড়ছে গ্যাস সিলিন্ডারে

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৯

ঝুঁকি বাড়ছে গ্যাস সিলিন্ডারে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ প্রতি পাঁচ বছর অন্তর লিক্যুফায়িড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার পরীক্ষা করার নিয়ম মানা হচ্ছে না বগুড়া অঞ্চলে। অনেক বাসা বাড়ি ও মোটর যানে গত প্রায় ১২ বছরেও সিলিন্ডার পরীক্ষা করে নেয়া হয়নি। এদিকে বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথার চার ধারে এসব সিলিন্ডার রিক্সা ভ্যানের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলিয়ে চুলার কাছে রেখে রেগুলেটর ছাড়া সরাসরি জ্বালিয়ে মুখরোচক খাবার তৈরি হচ্ছে। জনসমাগম স্থলে এভাবে গ্যাসে রান্না এবং কয়েকদিনের বাসি তেল ও উপকরণে অস্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি হচ্ছে কর্তৃপক্ষের সামনে। এমনও দেখা যায়, পিকআপভ্যানে কয়েকটি সিলিন্ডার রেখে রাস্তার মধ্যে রাবার পাইপে মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিতে অন্য যানবাহনে গ্যাস সররবাহ হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। পাবলিক পরিবহনে (সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার, বাস মিনিবাস পিকআপভ্যানে) পুরনো সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে চলাচলে এবং ভেজাল খাবারে মৃত্যুঝুঁকি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকার পরও সাধারণের কোন সচেতনতা নেই। প্রশাসনও নীরব। বগুড়া নগরীতে প্রতিদিন বিকেলের পর সাতমাথা কৃষ্ণচূড়া চত্বর, প্রধান ডাকঘরের সামনে, জিলা স্কুলের সামনে, নবাব বাড়ি সড়কের দুই ধারে, টেম্পল রোডের ধারে রাজনৈতিকদলগুলোর অফিসের সামনে, বিদ্যুত বিভাগের অফিসের সামনে শহীদ খোকন পার্কের পেছনের গেটের ধারে বাদাম, চানাচুর, চা, কফি, চটপটি, ফুচকা, ভাপা পিঠা, সবজি রোল, বার্গার, সিঙ্গারা, হালিম, বিরিয়ানি, খিচুরি, মুরগির গ্রিল, সেদ্ধ ডিম, মোগলাই পরোটা, গরু-ছাগলের উচ্ছিষ্ট গোশতে লটপটি, ভুরি, ফাস্টফুডের নানা সামগ্রী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোংরাভাবে তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি ভ্যান দোকানের (ভ্রাম্যমাণ দোকান) সামনে প্লাস্টিকের চেয়ার কাঠের বেঞ্চ রাখা হয়। শহরের অনেকে পরিবারের সদস্য ও অতিথিদের নিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে রাতের অনেকটা সময় (ন’টা দশটা অবিধি) বসে আড্ডা দিয়ে এসব খাবার খাচ্ছে। রিক্সা ভ্যানে ঝুলন্ত সিলিন্ডারের কাছে বসে থাওয়া দাওয়া করছে তারা। যে কোন মুহূর্তে বড় কোন দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকার পরও কেউ তোয়াক্কা করছে না। এদিকে মোটরগাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার সংযোজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বক্তব্য : মোটরযানে যেসব সিলিন্ডার সংযোজন করা হয়েছে তার মেয়াদ ২০ বছর থাকলেও গ্যাস রিফিলের সময় চাপ কমবেশির কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যক্ষমতা কমে আসে। যে কারণে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড তার অনুমোদিত সিএনজি সিলিন্ডার টেস্টিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিলিন্ডার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, যানবাহনে প্রতিবছর ফিটনেস সনদ নেয়ার সময় সিলিন্ডার টেস্ট রিপোর্ট দেখানো বা উপস্থাপনের নিয়ম আছে। যা মানা হয় না। বগুড়ায় ২০০৫ সালে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরুর পর গ্যাস ফিলিং স্টেশন স্থাপিত হয়। ২০০৬ সালে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলাচল ও প্রাইভেটকার বাস কোচ ট্রাক চলাচল শুরু হয়। ২০০৬ সাল থেকে চলতি ২০১৯ সাল পর্যন্ত (১৩ বছরে) সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বেড়েছে অন্তত ২০ হাজার। রেজিস্ট্রেশন হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। প্রায় ৮০ শতাংশের ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। ৯৫ শতাংশের সিলিন্ডার পরীক্ষার সনদ নেই। বগুড়ায় সিলিন্ডার টেস্টিংয়ের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। তারা গ্রাহক না পেয়ে ব্যবসা গুটিয়েছে। দুই-একটি কোম্পানি থাকলেও সিলিন্ডার টেস্টিংয়ের সংখ্যা খুব কম। একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জানান, দেড় বছর আগে প্রতিষ্ঠান খুলে প্রায় এক শ’টি সিলিন্ডার পরীক্ষা করেছেন। তার মধ্যে অর্ধেক বাসাবাড়ির গৃহকত্রী পরীক্ষা করে নিয়েছেন। সিএনজি চালিত অটোরিক্সার কয়েক চালক বললেন, বিষয়টি তারা বোঝেন। কিন্তু মালিক সিলিন্ডার পরীক্ষা করতে চান না। প্রতি সিলিন্ডার পরীক্ষায় দেড় দুই হাজার টাকা দিতে হয়। একবার পরীক্ষা করলে কোন ঘটনা না ঘটলে পাঁচ বছর পর পুনরায় পরীক্ষা করার নিয়ম। গ্যাস সিলিন্ডারের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বগুড়া। বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বজলুর রশীদ জানান, অগ্নি প্রতিরোধ সপ্তাহে এসব বিষয়ে সচেতন করা হয়। তারপরও বিধিনিষেধ মানা হয় না। পদ্মা অয়েলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মারুফ রহমান বলেন, এলপিজির যথেচ্ছ ব্যবহারে ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) এলপিজি ছাড়াও কয়েকটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান এলপিজি বিপণন করছে। এলপিজি ব্যবহারে সাবধানে থাকা বাঞ্ছনীয়। জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ জানান জনবহুল স্থানে এলপিজির যথেচ্ছ ব্যবহার ও যানবাহনে সিলিন্ডার পরীক্ষার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×