ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়লেও খুচরায় কমছে না পেঁয়াজের দাম

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২৯ নভেম্বর ২০১৯

   পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়লেও খুচরায় কমছে না পেঁয়াজের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। ভোক্তাদের উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। চালের দাম বেড়ে আর কমছে না। ডাল ও ময়দার দাম বেড়েছে, কমেছে ব্রয়লার মুরগির। আলুসহ শাক-সবজি বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ ও ডিম বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, যাত্রাবাড়ী বাজার, ফকিরাপুল বাজার ও মুগদা বড় বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, বাজারে সব ধররের পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার শ্যাম বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। আসতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। এরফলে পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কম। কিন্তু খুচরা বাজার থেকে ভোক্তাদের উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। মিসর, তুরস্ক, মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের পাশাপাশি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু দাম কমছে না। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ২০০-২৪০ এবং আমদানিকৃতটি ১৬০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের এই উচ্চদামে স্বল্প আয়ের ভোক্তাদের কষ্ট বাড়ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, বাজারে পেঁয়াজ আছে তবে পাইকারিতে দাম না কমানো হচ্ছে না। কাপ্তান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী খলিল সেক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে কিন্তু দাম কমেনি। তিনি বলেন, শ্যাম বাজারে দেশী-বিদেশী পেঁয়াজের অভাব নেই কিন্তু দাম বেশি রাখা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা বাজারে দাম কমছে না। তবে শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল মাজেদ বলেন, সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে এটা ঠিক কিন্তু দাম সেভাবে কমছে না। তিনি বলেন, বেসরকারীখাতের বড় গ্রুপগুলোর পেঁয়াজ টিসিবি কিনে নিয়ে ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করছে। এছাড়া বেসরকারী পর্যায়ে যেসব পেঁয়াজ আসছে তা বাজারে সামান্যলাভে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে টিসিবির বাইরে পেঁয়াজের দাম এখনো বেশি। তবে নতুন মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হলে দাম কমে যাবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশী পেঁয়াজ উঠা শুরু হয়েছে। এসব পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে। এদিকে, দেশের পেঁয়াজ বাজার অস্থিতিশীল প্রায় গত মাস দুমাস ধরে। এ সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় দাম বেড়েছে। সর্বশেষ দেশের কোথাও কোথাও ২৮০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পেঁয়াজ সংকট কাটাতে সরকারী-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়। তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। দ্রুত সময়ে সরকারী উদ্যোগ নেয়ায় কমতে থাকে দাম। তবে এই দামও সহনীয় নয়। কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতে ফের তা বেড়ে আবার ২০০-২৪০ টাকা হয়। তবে বেশকিছু দিন ধরে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকার ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে পেঁয়াজ বাজার। এদিকে, পেঁয়াজ বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় অব্যাহত রাখা হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খোলা বাজারে ট্রাকসেলে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম। দীর্ঘ সময় ধরে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে অনেককে। ভিড় থাকায় বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। সরকারী ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন একেকটি ট্রাকযোগে এক হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত টিসিবি বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। এদিকে, পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরেও দাম বেড়ে আর কমছে না চালের দাম। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। প্রতিকেজি মোটা চাল এখন ৩৪-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আগে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ২৭-৩৫ টাকায়। এছাড়া দাম বেড়ে নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৬০ টাকায়। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৪৪-৫৫ এবং মোটা মানের স্বর্ণা ও চায়না ইরি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৪০ টাকায়। চালের দাম বাড়ায় সম্প্রতি সচিবালয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, বর্তমানে দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দেশ চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারি চালের বাজারে প্রতিবস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়, আটাশ চাল ১৭৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৩৫০ থেকে ৩১০০ টাকায়। অথচ মাত্র দশদিন আগে এ বাজারে প্রতিবস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছিল ২০৫০ টাকায়, আটাশ চাল ১৪৫০ টাকা, নাজিরশাইল ১৯৫০ থেকে ২৭০০ টাকায়। দাম বাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মো. নুরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঘূর্নিঝড়ের পরে মোটা চালের দাম বেড়েছে। এখনো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম কমে গেলে খুচরা বাজারেও দাম কমবে। এদিকে, বাজারে সব ধরনের শাক-সবজির দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। ফুলকপি, বাধাকপি শিমসহ সব ধরনের সবজির দাম বেশি। এছাড়া দাম বেড়ে প্রতিকেজি ময়দা ৩৬-৪০, মসুর ডাল ১২০-১২৫, আলু ২৮-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে ব্রয়লার মুরগি ১১০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাছ-মাংসের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
×