ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন অনেক ॥ যাচ্ছে না কৃষকের কাছে

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২৯ নভেম্বর ২০১৯

  মসলা গবেষণা কেন্দ্রের  উদ্ভাবন অনেক ॥ যাচ্ছে না কৃষকের কাছে

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্রর অধীনে ৩টি আঞ্চলিক ও ৪টি উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র মসলার বহুমুখী উদ্ভাবনে সফলতা এনেছে। মসলা চাষ ও গবেষণায় দেশ অনেক এগিয়েছে। তবে সরাসরি কৃষকের কাছে যেতে পারছে না। কেন্দ্রগুলোর উদ্ভাবিত জাত মাঠপর্যায়ে পৌঁছানোর দায়িত্ব কৃষি উন্নয়ন কর্পোরশেন (বিএডিসি) হয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের। যার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। মসলা সরাসরি খাবার নয়। খাদ্যের স্বাদ এনে দেয় এই মসলা। গরম মসলা গঠিত দারুচিনি, এলাচ ও লবঙ্গ (লং) নিয়ে। বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৭০ একর ভূমিতে মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয় প্রায় দুই যুগ আগে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) নজরদারিতে এই গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত। কেন্দ্র ১৫টি মসলা ফসলের উফশী ৩৪টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন ঘরেই আদার চাষ সম্ভব। যা বছরের আদার চাহিদা মেটাতে পারে। সাদা এলাচও দেশেই উৎপাদন সম্ভব। গবেষকরা মনে করেন, দেশের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন মাঠপর্যায়ে পৌঁছালে এবং কৃষক আবাদ করলে মসলা আমদানির বহু কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সফল উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য জাত হলো- পেঁয়াজের ৫টি, মরিচের ৩টি, রসুনের ৪টি, আদার ৩টি, হলুদের ৫টি, ধনিয়া মেথি পান, মৌরির ২টি করে জাত। কালোজিরা, গোলমরিচ, পাতা পেঁয়াজ, আলুবোখারা, বিলাতি ধনিয়া, ও দারুচিনিরি একটি করে জাত। গবেষণাধীন রয়েছে ৪২টি মসলা ফসল। এর মধ্যে ৬টি প্রধান, ২৬টি অপ্রধান এবং ১০টি বিদেশী জাতের। চলতি মসলার সঙ্গে গবেষণাধীন মসলাগুলো হলো- শলুক, তেজপাতা, রাঁধুনী, জোয়ান, ফিরিঙ্গি, চুঁইঝাল, একাঙ্গি, পিপুল, শঠি, দই রং, বচ, পুদিনা, পোলাও পাতা, লেমনগ্রাজ, আদা, মিঠা তুলসী, পান সুপারি, জিরা, কাবাবচিনি, চিভস, অলস্পাইস, কারিপাতা, পান বিলাস, লবঙ্গ পেস্তা বাদাম, জয়ফল-জৈত্রী। চিভসের স্বাদ অনেকটা পেঁয়াজের মতো। এটি সাইবেরিয়ান মসলা। বৈশিষ্ট্য হলো একবার রোপণে পুরো বছর ফলন মেলে। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কলিম উদ্দিন বলেন, দেশের সব অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মসলা আবাদ হয় না। একেক এলাকার মাটি একেক ধরনের মসলা চাষের উপযোগী। উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আশিকুল ইসলাম জানান, বিদেশ থেকে সাদা এলাচের জাত এনে দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় উৎপাদনের গবেষণা প্রায় শেষের পথে। তিনি আশাবাদী সাদা এলাচ দেশেই উৎপাদন সম্ভব। কালো ও কিছু অন্য রঙের এলাচ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। এখন আদা চাষে মাটি না হলেও চলবে। বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে পলিব্যাগ বিছিয়ে তার ওপর নারিকেলের ছোবরা, ধানের গুঁড়া (তুষ) কাঠের গুঁড়া একত্রিত করে ছোট্ট প্লট বানিয়ে দিন কয়েক রেখে তার মধ্যে আদা বুনতে হয়। একটি সল্যুশন প্রয়োগ করতে হয়। আদা বপনের উপযুক্ত সময় এপ্রিল মাস। দশ মাসের মধ্যেই আদা ফলে। দেশে আদার চাহিদা বছরে দেড় লাখ মে টন। উৎপাদিত হয় ৬০ হাজার মে টন। বাকিটা আমদানি। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে ৩টি আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র কুমিল্লা গাজীপুর ও মাগুরায়। ৪টি উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র লালমনিরহাট, ফরিদপুর, সিলেট ও খাগরাছড়িতে। প্রতিটি কেন্দ্রের গবেষণালব্ধ ফল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (বারি) নিয়মিত জানানো হয়। মসলা প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৬ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বিশাল পরিসরে গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য কর্মরত বিজ্ঞানীর সংখ্যা অপ্রতুল। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ফেলোশিপ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই।
×