ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে টাকা দিলেই মিলছে জাল দলিল

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ২৯ নভেম্বর ২০১৯

কুড়িগ্রামে টাকা দিলেই মিলছে জাল দলিল

স্টাফ রিপার্টার, কুড়িগ্রাম ॥ ভূরুঙ্গামারী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে টাকা দিলেই জাল দলিলের মাধ্যমে জমি লিখে নেয়া যাচ্ছে। দলিল লেখক আর সাব-রেজিস্ট্রারের যোগসাজশে ভুয়া জমিদাতা দিয়ে রেজিস্ট্রি করে পরিবর্তন হচ্ছে জমির মালিকানা। আর এসব কর্মকা- জানতেও পারছে না জমির আসল মালিক। জমি বেদখল হওয়ার পর ঘটনা প্রকাশ পেলেও তখন আর কিছুই করার থাকে না। ফলে মামলা মোকাদ্দমায় দীর্ঘ প্রতিক্ষার দিন পার করতে হয় আদালতের দোরগড়ায়। জানা গেছে, কাঞ্চন বিবি (৯০), স্বামী মৃত জছিম উদ্দিন। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের বামুনেরকুটি গ্রামের বাসিন্দা। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। তিনি ৮ সন্তানের জননী। নিজের নামে ২৪ শতক জমি এবং স্বামীর দেয়া সম্পত্তির অংশ সন্তানদের নামে লিখে দেন। সম্পত্তি বণ্টন হয়ে গেলেও ২০১৭ সালে মায়ের নামে ২৪ শতাংশ জমি নিজের নামেই জাল দলিল করে নেয় বড় ছেলে আব্বাস আলী (৬২)। শাশুড়ীকে নিজের মা বানিয়ে দলিল লেখক সমিতির সম্পাদক মিজানুর রহমানের যোগসাজশে এই জাল দলিল করে নেন। একই পন্থায় ২০১৮ সালে ছোট দু’বোনের নামে ৩৯ শতাংশ জমিও জাল দলিল করে নেন দলিল লেখক হারুনের সহযোগিতায়। বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন থাকলেও চলতি মৌসুমে ওই সব জমির আবাদ করা ধান কেটে নেয় আব্বাস আলী। সেই সঙ্গে জমির দখলও নেন। কিছু অংশে দুই বোনের বাড়ি থাকায় উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছেন তিনি। ঘটে বাড়ি পোড়ানোর ঘটনাও। পরে জাল দলিলের বিষয়টি সবার নজরে চলে আসে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গ্রাম আদালতে দ্বারাস্থ হয় ভুক্তভোগীরা। একাধিকবার নোটিস দিলেও আব্বাস আলী হাজির হননি গ্রাম আদালতে। বৃদ্ধা কাঞ্চন বিবি বলেন আমি বৃদ্ধ মানুষ। আমার জমি অনেক আগেই দু মেয়েকে দিয়েছি। কিন্তু কিভাবে আবার দলিল করে নিল জানি না। সোনাভান ও মনোয়ারা বেগম বলেন, বড় ভাই আব্বাস আলী কসাই আমাদের মায়ের ভোটার আইডি ঠিক রেখে তার শাশুড়ির ছবি বসিয়ে মায়ের নামের ২৪ শতাংশ জমি জাল দলিল করেছে। একই কায়দায় এলাকার মুরুব্বির মাধ্যমে আমাদের দু’বোনকে সরকারী ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ভোটার আইডির কপিসহ ছবি নিয়ে যায়। আইডি নম্বর ঠিক রেখে ছবি নকল করে দু’বোনের ৩৯ শতাংশ জমির জাল দলিল করে নেয়। তারা বলেন, সাক্ষী এবং মুহুরির মাধ্যমে জানতে পেরেছি এসব দলিল পার করতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করেছে আমার ভাই। চেয়ারম্যানসহ থানায় অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। সাক্ষী প্রদানকারী মমিনুল বলেন, আব্বাস আলী আমাকে বলেন ভাই শাশুড়ি আমাকে দেড় বিঘা জমি লিখে দেবে তুই একটু থাকিস। সাক্ষী হতে হবে। সেই হিসেবে আমি সাক্ষী হই। কিন্তু পরে জানতে পারি তার শাশুড়ির জমি নয় নিজের মায়ের জমি শাশুড়িকে মা বানিয়ে পার করে নিয়েছে। নিজের শাশুড়িকে মা বানিয়ে জাল দলিল করার কথা স্বীকার করেন আব্বাস আলী। এই জন্য সে মিজানুর মহুরিকে ২৮ হাজার টাকা দিয়েছেন বলেও জানান। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং হারুন মহুরি অর্থের বিনিময়ে দলিল জালিয়াতির ঘটনার কথা অস্বীকার করেন। তারা দোষ চাপালেন জমি গ্রহীতার ওপর। তারা বলেন, ভোটার আইডির কপি, ছবি এবং সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে দাতাদের উপস্থিতিতে দলিল করা হয়। এখানে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। ভূরুঙ্গামারীর সাব-রেজিস্ট্রার নাবীব আফতাব জানান, জালদলিলের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি আরও বলেন ১০০/১৫০ দলিল পার করতে হয় আমাকে। এগুলো যাচাই-বাছাই করার সুযোগ কম থাকে। দলিল বাতিল করার ক্ষমতা আমাদের নেই। একমাত্র আদালতের মাধ্যমে সেটি হয়। তবে জাল দলিল বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
×