ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এলেঙ্গা-জামালপুর সড়ক নির্মাণে ধীরগতি ॥ চরম ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৯ নভেম্বর ২০১৯

এলেঙ্গা-জামালপুর সড়ক নির্মাণে ধীরগতি ॥ চরম ভোগান্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৮ নবেম্বর ॥ এলেঙ্গা-জামালপুর মহাসড়ক নির্মাণে ধীরগতির কারণে মধুপুর হয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের চার জেলায় সড়কপথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানি। অভিযোগ রয়েছে, এ সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী। সড়ক সংস্কারে পুরাতন ইটের খোয়া ও সড়কের পুরাতন কার্পেটিং উঠিয়ে পুনরায় সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। জানা যায়, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে মধুপুর-ধনবাড়ী হয়ে জামালপুর পর্যন্ত ৭৭ কিমি. সড়ক উন্নয়নে কাজ চলছে। এজন্য বরাদ্দ প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা। ৫টি প্যাকেজে আগামী ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। সড়কের ১ থেকে ৩নং প্যাকেজে কাজ করছেন ঢাকার ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। আর ৪ ও ৫নং প্যাকেজে কাজ পেয়েছেন জামিল এ্যান্ড কোম্পানি। কাজের গতি খুবই হতাশাব্যঞ্জক। এলেঙ্গা থেকে মধুপুর-ধনবাড়ী পর্যন্ত ৬০ কিমিতে কাজ হয়েছে মাত্র ২৫%। পুরো সড়ক এখন খানা-খন্দক অবস্থায় রয়েছে। কোথাও-কোথাও সড়কের দু’পাশে গর্ত করে মাটির স্তূপ ফেলে রাস্তা সংকীর্ণ করে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে ঘাটাইল পৌর শহরে ১ কিলোমিটার এবং মধুপুর পৌরশহরের মালাউড়ি থেকে মধুপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কে দেড় ফিট উঁচু রিজিট পেভমেন্ট ঢালাই হবার কথা। এক বছরে ঠিকাদার এসব স্থানে সড়কের দুইপাশ খোঁড়াখুঁড়ির পর মাত্র ১৫০ গজ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছে। পেভমেন্টে নিয়মিত পানি না দেয়ার কারণে তা ফেটে চৌচির হচ্ছে। সড়কের এক পাশ যানবাহন চালু রেখে অপরপাশে পেভমেন্ট ঢালাইয়ের কাজ করায় ভাঙ্গাচোরা সরু অংশ দিয়ে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুর জেলার হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে। ব্যাপক যানবাহনের চাপে সড়কের অনেক অংশ দেবে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো যানবাহন কাদায় আটকে ফেঁসে যায়। তখন দুইদিকে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। প্রশস্তকরণের জন্য আবার সড়কের কোথাও-কোথাও দুই পাশের মাটি খুঁড়ে ৫/৬ ফুট গর্ত করে রাখা হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়িতে সরু সড়কে দুটি বড় যানবাহন ক্রস করতে পারে না। ঘাটাইল, মধুপুর ও ধনবাড়ী থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গাচোরা সড়ক খোঁড়খুঁড়ির কারণে গত আগস্ট থেকে নবেম্বর পর্যন্ত এ সড়কে ২৯টি পৃথক দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি এবং তিনশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান জানান, এই সড়কের কোন মা-বাবা নেই। এটি এখন শুধু যন্ত্রণা নয়, এর পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে মৃত্যুকূপ। মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমা আহমেদ পলি মানুষের নিদারুণ দুর্ভোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিক বার সমস্যাটি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই। এ ব্যাপারে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার হাফিজুর রহমান জানান, সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর মাঝখানে নির্মাণ সরঞ্জাম সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। এখন সাধ্যমতো কাজ চলছে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান জানান, নানা কারণে নির্মাণ কাজে সাময়িক ধীরগতি ছিল। এখন যাতে পুরোদমে কাজ হয় সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অর্থ সঙ্কট এবং নির্মাণ কাজের ধীরগতির জন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়তে পারে।
×