স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে যে কোন পন্যের মূল্য নির্ভর করে ডিমান্ড এন্ড সাপ্লাইয়ের উপর, অর্থাৎ কি পরিমান পণ্য চাহিদা রয়েছে আর কি পরিমান পণ্য সরবরাহ হচ্ছে তার উপর। তাই দেশে পিঁয়াজের চাহিদার তুলনায় আমদানী অপ্রতুল হওয়ায় এবং মজুদ কম থাকায় পিঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাজারে পণ্য সরবরাহ কম হলে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী কোন কিছু দিয়েই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অর্থনীতির প্রাথমিক সূত্রানুযায়ী পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের মূল শক্তি হলো পণ্যের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করা।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের কৃষি প্রকৃতি নির্ভর। ইচ্ছা করলেই আমি নতুন জাত উদ্ভাবন করতে পারিনা। গত বছর পিয়াঁজ হারভেস্টের সময় বৃষ্টিপাত হয়। এতে পিঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকরা পিঁয়াজ ঘরে মজুত রাখতে পারেনি। এতে দেশে পিঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ভারত যে এভাবে পিঁয়াজের উপর নিষেধাজ্ঞা দেবে এটা আমরা বুঝতে পারিনি। এখানে হয়ত আমাদের ভুল থাকতে পারে। আগেই আমাদের এসেসমেন্ট করা দরকার ছিল। জরিপ করা দরকার ছিল যে দেশে কতটন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। আমরা কতটা পিঁয়াজ আমদানি করব। পিঁয়াজ আমদানী একটা দেশের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির জন্য যোগাযোগ করা দরকার ছিল। সেটি হয়নি। ভারত নিজেরাও পিঁয়াজ আমদানি করছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশেও পিঁয়াজের দাম অনেক বেশি।
কৃষিমন্ত্রী দেশে আমদানি হলেও পিঁয়াজের দাম না কমার বিষয়ে বলেন, আমাদের প্রয়োজন লক্ষ টন, সেখানে আমদানি হয় পাঁচশ টন, তিনশ টন। একটা প্লেনে আর কতটা পিঁয়াজ আমদানি করা যায়। দেশে পিঁয়াজের প্রয়োজন ২৫-২৬লক্ষ টন, সেখানে পাঁচশ টন, তিনশ টন কি হয়? তাই এক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো সজাগ ও সচেতন হতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা-২০১৮-২০১৯-এ যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ওইসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, চালের বাজারে কোন অস্থিরতা নেই। কিন্তু কিছু মিডিয়ায় পেঁয়াজের বাজারের পাশাপাশি চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে এমন খবর প্রচার করছে। বড়লোকেরা যে চাল পছন্দ করে সেই চিকন চালের দাম কিছুটা বাড়লেও মোটা চালের দাম তেমন বাড়েনি। তাহলে চালের বাজারে অস্থিরতা কোথায়? মিডিয়ায় চালের মূল্যের অস্থিরতা নিয়ে কেন খবর প্রচার করছে তা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান তাতে আমন মৌসুমে ছয় লাখ টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কৃষকের প্রণোদনা এবং কম মূল্যে কৃষি সরঞ্জাম-সার সরবরাহেরও আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নির্ধারণ করবেন দলের সভানেত্রী। দলের প্রধান হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উনি দলের সভানেত্রী। দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন সেটা উনি কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্ধারণ করবেন। কাজেই আমি বা তোফায়েল আহমেদ সাহেব কিংবা ওবায়দুল কাদের সাহেব, জাহাঙ্গীর কবির নানক কেউ আমরা কোন ফ্যাক্টর নই। গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমাদের দলের সভানেত্রী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। কাজেই দলের সাধারণ সম্পাদকও দলের গঠণতন্ত্র মোতাবেক হবে।
মন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগ এ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দলটি প্রতিষ্ঠার পর হতে মূলনীতি আদর্শ থেকে কোনদিন বিচ’্যত হয়নি। এদেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নানা প্রতিক’লতার মধ্যেও আওয়ামীলীগ নীতি আদর্শের প্রতি অবিচল রয়েছে। আওয়ামীলীগ পরিচালিত হয় তার গঠনতন্ত্র ভিত্তিক । বিএনপি, জাতীয়পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দল দেখবেন যে একটা বিবৃত্তি দিয়ে দলের প্রধান একজনকে সাধারন সম্পাদক থেকে সরিয়ে দিল, আরেকজনকে মনোনয়ন দিল। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন, উনি কিন্তু কোনদিন এটা করতে পারবেন না। গঠণতন্ত্র মোতাবেক তাকে এগুতে হয়। আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদে মাত্র ৮১জন সদস্য রয়েছেন। এটা কমানো বাড়ানো কারো কাউকে বাদ দেয়া সবকিছুই গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়। তিনি বলেন, কোন উপজেলা কমিটিও ভাঙ্গার ক্ষমতা জেলা কমিটির নেই।
পরে কৃষিমন্ত্রী ব্রি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় যোগ দেন। ব্রি’র মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কমলা রঞ্জন দাস, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের এমেরিটাস প্রফেসর ড. এমএ সাত্তার মন্ডল, বার্কের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল মুঈদ বক্তব্য রাখেন। এতে ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১৮-১৯’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. তমাল লতা আদিত্য। ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. কৃষ্ণ পদ হালদার এতে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্রি’র বিজ্ঞানীদের কল্যাণে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এমনকি চাল উৎপাদনে উদ্ধৃত্ব অবস্থানে চলে এসেছে। এখন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, আর সেটি হলো ধান উৎপাদন তথা সার্বিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে কৃষকের জন্য লাভজনক করা।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে পুষ্টি জাতীয় খাবার পাওয়া সম্ভব নয়। পুষ্টি জাতীয় নিরাপদ খাবার নিশ্চয়তার জন্য মানুষের আয় বাড়াতে হবে। কৃষকসহ সবার আয় বাড়াতে হবে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষিকে লাভজনক করতে হবে। শুধু ধানের উপর নির্ভরশীল হলে হবেনা, এটাকে বহুমুখী করণ করতে হবে। যদি কৃষিকে লাভজনক করা না যায়, তাহলে কেউ পুষ্টি জনক খাবার খেতে পারবে না। এজন্য সঠিকভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। তাই আগামীদিনে কৃষিকে লাভজনক করে মানুষের জীবনমান আরো উন্নত করার জন্য আমাদের সবাইকে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী ৬দিন ব্যাপি বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটে বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা-২০১৮-২০১৯ উদ্বোধন করেন।
কর্মশালায় ব্রি, বারি, বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। ৬দিন ব্যাপী কর্মশালার বিভিন্ন কারিগরী অধিবেশনগুলোতে গত এক বছরে ব্রি’র ১৯টি গবেষণা বিভাগ ও নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে তুলে ধরা হবে।